প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে উপকূলবাসীর জানমাল রক্ষায় কক্সবাজারের দ্বীপ মহেশখালী ও কুতুবদিয়া এখনো অরক্ষিত রয়ে গেছে। নির্মিত হয়নি টেকসই বেড়িবাঁধ। তবে আশার আলো দেখছে উপকূলের জনগণ। মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি, ধলঘাটা ও কুতুবদিয়া উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের টেকসই উন্নয়ন ও জনগণের জানমালের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সুপার ডাইক বেড়িবাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
দুই উপজেলায় অন্তত ২০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত ও ভাঙা অবস্থায় রয়েছে। প্রাকৃতিক বড় ধরনের কোনো দুর্যোগে জোয়ারের পানি বা জলোচ্ছ্বাস ঠেকানোর সক্ষমতা বর্তমান বেড়িবাঁধের নেই। অবিলম্বে এই বেড়ীবাঁধ সংস্কার করা না হলে যেকোনো দুর্যোগে লোকালয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সুপার ডাইক বেড়িবাঁধ নির্মাণে ইতোমধ্যে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শুরু হয়েছে। অচিরেই এই বৃহৎ প্রকল্পটি অনুমোদন হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে মহেশখালীতে ভূমি বাড়বে ৩২৫ একর।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, শুরুতে মাতারবাড়ি ও ধলঘাটায় সুপার ডাইক বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে উত্থাপন করা হলেও এখন কুতুবদিয়ায়ও নির্মিত হবে সুপার ডাইক বেড়িবাঁধ। ৭০ নং পোল্ডার বান্দরবান জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে হলেও কাজের সুবিধার্থে এখন কঙবাজার জেলার অধীনে নেওয়া হয়েছে। মাতারবাড়ি ও ধলঘাটায় সুপার ডাইক বেড়িবাঁধের জন্য ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হলেও এখন তা সংশোধন হয়ে আরো বাড়বে প্রস্তাবে।
কর্মকর্তারা আরো জানান, মাতারবাড়ি ও ধলঘাটায় ১৭.৬৩ কিলোমিটার সুপার ডাইকের উচ্চতা হবে ১০ মিটার। এতে ৮.৫ কিলোমিটার হবে নতুন বাঁধ। এই পোল্ডারে খাল খনন হবে ১০.১২ কিলোমিটার। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য ৩ একর লেক খনন ও বনায়ন করা হবে। কুতুবদিয়া উপজেলায় ৪০.১৮ কিলোমিটার সুপার ডাইক বেড়িবাঁধ নির্মিত হবে। প্রথম পর্যায়ে বাঁধের উচ্চতা হবে ৮.৫ মিটার। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য পুকুর পুনর্বাসন ও বনায়ন করা হবে। সমপ্রতি একাধিক মেগা প্রকল্পের বিভিন্ন কার্যক্রমের কারণে ভরাট হয়ে যাওয়া কোহেলিয়া নদী খনন করা হলে নদীর পানি প্রবাহ স্বাভাবিক হবে। সুপার ডাইকের উপরে হবে আধুনিক সড়ক। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ধলঘাটার পশ্চিমে হাঁসের চরের ৩২৫ একর জমি সুপার ডাইকের ভিতরে চলে আসবে। ফলে মহেশখালীর ভূমি বৃদ্ধি পাবে ৩২৫ একর।
মহেশখালী–কুতুবদিয়া আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, কুতুবদিয়া ও মহেশখালীর প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য ঝুঁকিপুর্ণ ৮ ইউনিয়নের জনগণকে শতভাগ সুরক্ষা দিতে কাজ করছে সরকার। এলাকার উন্নয়ন ও মানুষকে শতভাগ সুরক্ষা দেওয়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল লক্ষ্য। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে মহেশখালী ও কুতুবদিয়া হবে সুরক্ষিত ও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ উপজেলা। আশাকরি অচিরেই এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। তিনি আরো বলেন, ৯১ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে এই দুই উপজেলায় অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দুটি উপকূলীয় এলাকার জনগণের জানমাল অনেকটা নিরাপত্তা বেষ্টনিতে চলে আসবে।