পাহাড়ের অর্থনেতিক খাতগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পর্যটন শিল্প। পার্বত্য চট্টগ্রামের সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্পের সাথে জড়িয়ে পড়েছে সর্বস্তরের মানুষ। তবে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা ও পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠনগুলোর তৎপরতায় মুখ থুবড়ে পড়েছে সম্ভাবনাময় শিল্পটি। ধস নেমেছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট সব ধরনের ব্যবসা বাণিজ্যে। যার প্রভাব পড়েছে পরিবহন ও কৃষি খাতেও। তবে ঈদের আনন্দে ভ্রমণপিসাসুদের আগমনে কিছুটা স্বাভাবিকতার ছোঁয়া লেগেছে পর্যটনে। প্রকৃতির নির্মল ছোঁয়ায় ঘুরে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে ভ্রমণপিপাসুদের।
দর্শণীয় স্থানগুলোও মুখরিত হয়ে উঠেছে প্রকৃতি প্রেমিদের পদচারণায়। তবে তিন উপজেলায় ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা, পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠনগুলোর তৎপরতায় আতঙ্কে অন্যবছরের তুলনায় এবার পর্যটকের চাপ খুবই কম। আশানুরূপ বুকিংও হয়নি আবাসিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্টগুলোতে দাবি পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের।
পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানায়, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি হচ্ছে বান্দরবান। পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় এ জেলায় পাহাড়ে রয়েছে চোখ জুড়ানো সব সৌন্দর্য। এখানের পাহাড়ের প্রকৃতি এবং শৈল্পিক ছোঁয়ায় সাজানো দর্শণীয় স্থান নীলাচল, মেঘলা, বাংলার দার্জিলিং খ্যাত চিম্বুক, নীলগিরি, শৈলপ্রপাত, রুপালী ঝরনা স্পটগুলোতে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে পর্যটকদের। পর্যটকরা কখনো লেকের পানিতে প্যাডেল বোটে, কখনো ক্যাবল কারে এবং আবার কখনো নীলাচলের রোমাঞ্চকর দোলনায় প্যারাসেইলিংয় আকাশে উড়ার স্বাদ নিচ্ছেন। তবে যৌথ বাহিনীর অভিযানের কারণে নিরাপত্তা বিবোচনায় রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি তিন উপজেলায় পর্যটকদের ভ্রমণে অনিদিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকায় দুর্গমাঞ্চলের দর্শণীয় স্থানগুলোতে যেতে পারছেনা পর্যটকরা। বান্দরবান হোটেল রিসোর্ট ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম জানান, কয়েকদিনের টানা বন্ধে আবাসিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট গুলোর ব্যবসা বাণিজ্য কিছুটা সচল হয়েছে। তবে অন্যবছর গুলোর তুলনায় এবারের ঈদে আশানুরূপ পর্যটকের আগমন ঘটেনি। বুকিং হয়নি আবাসিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট গেস্টহাউজ গুলো ৫০% রুমও। তিন উপজেলায় ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও সশস্ত্র সংগঠনগুলোর আতঙ্কে মুখ থুবড়ে পড়েছে পর্যটন শিল্প। এতে চরমভাবে অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়েছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। নিষেধাজ্ঞা খুললেও এ পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে বলা মুশকিল।
ট্যুরিস্ট পরিবহণ শ্রমিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ কামাল বলেন, পরিবহন শ্রমিকেরা খুবই মানবেতন জীবন কাটাচ্ছে। রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি পর্যটনের অন্যতম তিনটি উপজেলায় নিরাপত্তা বিবোচনায় পর্যটকদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা থাকায় অলস সময় কাটাচ্ছে প্রায় চার শতাধিক পরিবহন শ্রমিক। অনেকে ঈদের আনন্দও উপভোগ করতে পারেনি অর্থনেতিক টানাপোড়নে। রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলার পরিবহন শ্রমিকদের অবস্থা আরও করুণ।
এদিকে ভ্রমণপিপাসুদের নিরাপত্তা, আরামদায়ক আনন্দময় ভ্রমণ নিশ্চিত করতে প্রশাসন, ট্যুরিস্ট পুলিশ এবং হোটেল ওনার্স এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বিভিন্ন ধরণের ছাড়ের অফার ঘোষণা করেছে পর্যটকদের সুবিধার্থে। এ বিষয়ে বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তীবরীজি বলেন, পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনাময় বান্দরবানে নতুন নতুন দর্শনীয় পর্যটন স্পট খোঁজে বের করা হচ্ছে। পুরনো স্পটগুলোকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলতে সংযোজন করা হচ্ছে নতুন নতুন বিনোদন মাধ্যম। পাহাড়ে সন্ত্রাসী তৎপরতা বন্ধে যৌথ বাহিনীর অভিযানে নিরাপত্তা বিবোচনায় রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি তিনটি উপজেলায় পর্যটকদের ভ্রমণে অনির্দিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রয়েছে। সেগুলো ছাড়া অন্য সবগুলো স্পটে পর্যটকরা ঘুরে বেড়াতে পারছেন।









