চট্টগ্রামেও অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ আঘাত হানার শঙ্কা ছিল। তাই কয়েকদিন ধরে আতংকে ছিলেন উপকূলবাসী। সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবেলায় নানা প্রস্তুতি নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। তবে শেষ পর্যন্ত মোখার আঘাত থেকে রক্ষা পেয়েছে চট্টগ্রামবাসী। এতে আতংক পেরিয়ে জনমনে এসেছে স্বস্তি। হাসি ফুটেছে পতেঙ্গা–হালিশহরসহ শহরের উপকূলের বাসিন্দাদের মুখে। একইসঙ্গে হাঁফ ছেড়ে যেন বাঁচলেন ৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের দুঃসহ স্মৃতি বয়ে বেড়ানো উপকূলীয় উপজেলা সন্দ্বীপ, মীরসরাই, সীতাকুণ্ড, আনোয়ারা ও বাঁশখালীসহ অন্যান্য উপজেলার লোকজন। সম্ভাব্য দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাওয়া এসব লোকজনের কেউ কেউ বলছেন, ‘বড় বাঁচা বাঁইচ্চি’। (বড় বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া অর্থে)। অনেকে বলেছেন, ‘আল্লায় আঁরারে বাঁচাইয়ে’। (আল্লাহ আমাদের রক্ষা করেছেন)।
আবহাওয়া অধিপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মোখা গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় মিয়ানমারের সিটুয়ের নিকট দিয়ে কক্সবাজার–উত্তর মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করে মিয়ানমারে স্থল গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। তাই গতকাল সন্ধ্যায় কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে বিপদসংকেত কমিয়ে ফেলা হয়। এর আগে দুপুর ২টার দিকে কক্সবাজারের সেন্টমার্টিনে মোখা তাণ্ডব শুরু করে। আড়াইটার দিকে সেন্টমার্টিনে ১৪৭ কিলোমিটার পর্যন্ত বাতাসের গতিবেগ ছিল।
মোখা সংক্রান্ত আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ বিশেষ বিজ্ঞত্তিতে বলা হয়, মোখা উত্তর–উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে সন্ধ্যা ৬টায় (গতকাল) উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করেছে। এটি দুর্বল হয়ে মিয়ানমারের সিটুয়েতে স্থল গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। স্থলভাগের অভ্যন্তরে আরো উত্তর–উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও বৃষ্টি ঝরিয়ে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হতে পারে। বিজ্ঞপ্তিতে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। এর আগে কক্সবাজারে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত, চট্টগ্রাম ও পায়রায় ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত এবং মোংলায় ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়। এদিকে আঘাত না করলেও মোখার প্রভাবে গতকাল দিনভর নগরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে। এতে কিছুটা ভোগান্তি হলেও স্বস্তি প্রকাশ করেন নগরবাসী। কারণ কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি না হওয়া তীব্র গরমে অতিষ্ঠ ছিলেন তারা। এমনকি সাগরে যখন মোখা সৃষ্টি হচ্ছিল তখনও মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যায়।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মেঘনাথ তঞ্চংঙ্গ্যা জানান, গতকাল বিকেল ৩টা পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ১০ দশমিক ৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এদিন স্বাভাবিকের চেয়ে তাপমাত্রা ৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে রেকর্ড হয়েছে ২৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তিনি জানান, আজ সন্ধ্যাা ৬টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম আকাশ মেঘলা থেকে মেঘাচ্ছন্ন থাকতে পারে। সেই সাথে অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। চট্টগ্রাম বিভাগে মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারী ভারী বর্ষণের প্রভাবে চট্টগ্রাম, কঙবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ির পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও পাহাড় ধসের আশঙ্কা রয়েছে।
আগারগাঁও আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ জানান, গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত নগরে ১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এছাড়া সন্দ্বীপ ও সীতাকুণ্ডে ৬ মিলিমিটার করে এবং কঙবাজারে ৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
গত ৭ মে রাতে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ আন্দামান সাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়, যা ৮ মে রাতে সুস্পষ্ট লঘুচাপে এবং ৯ মে নিম্নচাপে পরিণত হয়। ১০ মে সকালে আরো শক্তিশালী হয়ে তা গভীর নিম্নচাপে এবং ১১ মে ঘূর্ণিঝড় মোখায় পরিণত হয়।
আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেয় বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার সাইক্লোন সংক্রান্ত আঞ্চলিক সংস্থা এসকাপ। এ অঞ্চলের ১৩টি দেশের দেওয়া নামের তালিকা থেকে পর্যায়ক্রমে নতুন নতুন ঘূর্ণিঝড়ের নাম ঠিক করা হয়। মোখা নামটি ইয়েমেনের দেয়া।