আলো চাই আলো। আলোর উৎস বই। আদিকাল থেকেই বই মানুষের জ্ঞানের ধারক ও বাহক হিসেবে বন্ধুর মতো ছায়া হয়ে আছে। স্রষ্টা, সৃষ্টি, সভ্যতা, সংস্কৃতি, শিক্ষা, গবেষণা, সাহিত্য, ইতিহাস, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি প্রভৃতি আবিষ্কৃত হয়েছে বইয়ের মাধ্যমে।
বই এবং বই পড়া শব্দ দু’টি পরষ্পর সম্পর্ক যুক্ত। সম্পর্কটা যুক্ত হচ্ছে বইয়ের সাথে পড়ার। বই একক ভাবে একটা বস্তু। এক কথায় যাকে বলা হয় জ্ঞানের ভান্ডার। আর পড়া হচ্ছে ইচ্ছে। আমাদের মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে শিক্ষক- শিক্ষার্থীদের মধ্যে পড়ার ইচ্ছেটাকে জাগিয়ে তোলা। কারণ বই মানুষের মনের চোখ খুলে দেয়। তাই মেধা বুদ্ধি সম্বলিত মানবিক গুণ সম্পন্ন মানব জাতি পেতে হলে আমাদের প্রজন্মকে বইয়ের প্রতি আকৃষ্ট করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বই সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা। বই কোথায় সংরক্ষিত হবে? স্কুল বা কলেজ লাইব্রেরি বা পাঠাগারে।পাঠের আগার বা কক্ষ হলো পাঠাগার। বইয়ের শ্রেণিবদ্ধ সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং পঠনের স্থানকে পাঠাগার বলা হয়। পাঠক এখানে একান্তে বসে কাঙ্ক্ষিত বই পড়তে পারেন। প্রয়োজনীয় নোটও নিতে পারেন।
পাঠাগারে বসেই স্বাধীনভাবে পাঠাভ্যাস বাড়ানো যায়। ইচ্ছেনুযায়ী বই পড়ে জেনে নেওয়া যায় সমগ্র পৃথিবীকে। বহুদিন আগে হারিয়ে যাওয়া জনপদ ও সভ্যতাকে আপন করে নেওয়া যায়। মানুষের মনের ভাব, মুখের ভাষা, গবেষণা গ্রন্থ, সাহিত্য, গল্প কবিতা, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবনাচার,জীবনী গ্রন্থ, ধর্মীয় রীতিনীতি ইত্যাদি বই পাঠাগারেই সংরক্ষণ করা সম্ভব। পাঠাগারটি কেমন হবে? পাঠাগারটি হবে প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন কক্ষ এবং পাঠাগারের দায়িত্বে যিনি থাকবেন তিনি হবেন তথ্যজ্ঞ প্রশিক্ষিত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। সুসজ্জিত, পর্যাপ্ত আলো বাতাস সম্বলিত, সুন্দর বসার ব্যবস্থা অবশ্যই থাকবে পাঠাগারে। পাঠাগার বা লাইব্রেরিতে কয়েকটি কর্ণার নির্দিষ্ট করা থাকবে যেমন : বঙ্গবন্ধু কর্নার, শিক্ষকদের কর্নার, শিক্ষার্থীদের কর্নার,শিক্ষা ও গবেষণা কর্নার , মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা কর্নার, তথ্য ও প্রযুক্তি কর্নার, বিজ্ঞান কর্নার, প্রাচীন পুঁথি ও পান্ডুলিপি কর্নার ইত্যাদি।
আমাদের লক্ষ্য মানবিক গুণের অধিকারী দেশপ্রেমিক, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন নাগরিক গঠন। আমাদের উদ্দেশ্য হলো – শিক্ষক- শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল, নৈতিক মূল্যবোধ সম্পন্ন সত্যিকারের মানুষ গড়ে তোলা। যেখানে উভয়ই সমাজের কাছে দায়বদ্ধ থেকে আলোকিত সমাজ বিনির্মাণে এগিয়ে আসবে। সমাজে বসবাসরত মানুষের মধ্যে দল- মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সৌহার্দ্য ও সমপ্রীতির বন্ধন সুদৃঢ় করবে।
বিশ্বনন্দিত মনস্বী লেখক উমবের্তো ইকো বলেন, শতাব্দীর পর শতাব্দী গ্রন্থাগার আমাদের উদ্ভিজ স্মৃতির সংগ্রহশালা বা জ্ঞানের ভাণ্ডার আমাদের মানব সভ্যতার যৌথ জ্ঞান যেখানে মজুত থাকে। গ্রন্থাগার হলো আমাদের সর্বজনীন মগজ। যেখান থেকে আমরা যেকোনো সময়, যা কিছু ভুলে গেছি বা যা আজও অজানা, তা জেনে নিতে পারি। এ বিশ্বকে জানতে বুঝতে হলে স্রষ্টার মন পড়ে নিতে হবে, যা গ্রন্থাগার থাকলেই সম্ভব। আমরা গ্রন্থাগার আবিষ্কার করেছি কেন-না আমরা জানি, আমাদের ঐশ্বরিক ক্ষমতা নেই কিন্তু আমরা ঐশ্বরিক ক্ষমতাকে অনুসরণ করতে পারি। এর একমাত্র উৎস গ্রন্থাগার বা লাইব্রেরি।
মূলত আমরা একটি আলোকিত সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চাই। জ্ঞানার্জন ও জ্ঞানানুশীলনে অগ্রণী ও উদ্যোগী সমাজ গঠন-ই হবে তাঁদের কাজ। সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়নে আলোকিত সমাজ প্রধান ভূমিকা পালন করবে। আলোকিত জন সমাজের সার্বিক উন্নয়নের সহায়ক শক্তি। বই পড়ার মাধ্যমে সমাজে যতবেশি বিদ্যানুরাগী জন্মাবে সমাজ ততবেশি আলোকিত হবে। সমাজের ইতিবাচক অগ্রগতি ততই বাড়বে।
লেখক : গবেষক, শিক্ষা চিন্তক।