মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আজ শুক্রবার আলাস্কার আঙ্কোরেজে বৈঠকে বসবেন। এতে মূল আলোচ্য বিষয় ইউক্রেন যুদ্ধের সমাপ্তি। এই হাই–প্রোফাইল বৈঠকের স্থান হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে জয়েন্ট বেস এলমেনডর্ফ–রিচার্ডসনকে। এটি আলাস্কার সবচেয়ে জনবহুল শহরের উত্তরে অবস্থিত একটি মার্কিন সামরিক ঘাঁটি। হোয়াইট হাউস জানায়, দুই বিশ্বনেতার নিরাপত্তা মানদণ্ড পূরণ করে, এমন সব ব্যবস্থা এই ঘাঁটিতে রয়েছে। তাড়াহুড়ো করে আয়োজিত বৈঠকের জন্য অন্য কোনো বিকল্প ছিল না। যুক্তরাষ্ট্র ১৮৬৭ সালে রাশিয়ার কাছ থেকে আলাস্কা কিনে নেয়। এই ঘটনা বৈঠকটিকে ঐতিহাসিক মাত্রা দিতে যাচ্ছে। ১৯৫৯ সালে এটি যুক্তরাষ্ট্রের একটি পূর্ণাঙ্গ রাজ্য হয়। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই বৈঠকে সরাসরি অংশ নেবেন, এমন আশা করা হচ্ছে না। সোমবার ট্রাম্প বলেন, তাকে বলতাম, তিনি আসতে পারেন, তিনি এরইমধ্যেই অনেক বৈঠকে অংশ নিয়েছেন। তবে ট্রাম্প আরও বলেন, বৈঠকের পর তিনি প্রথম জেলেনস্কিকেই ফোন করবেন। পরে হোয়াইট হাউসের একজন কর্মকর্তা জানান, ট্রাম্প ও জেলেনস্কি বুধবার বৈঠক করবেন। এই ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে কয়েকজন ইউরোপীয় নেতা অংশ নেবেন। সে অনুযায়ী ট্রাম্পের সঙ্গে তাদের কথা হয়।
এদিকে এইম বৈঠকে বসার আগে কড়া ভাষায় মস্কোকে হুঁশিয়ার করেছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ওই বৈঠকের পর পুতিন ইউক্রেনে যুদ্ধ শেষ করতে রাজি না হলে রাশিয়া ‘খুবই গুরুতর পরিণতি’ ভোগ করবে।
বৈঠক ব্যর্থ হলে ভারতের ওপর আরও বাড়তি শুল্ক চাপতে পারে বলে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেছেন, সিদ্ধান্ত নির্ভর করবে শুক্রবারের ট্রাম্প–পুতিন বৈঠকের ফলাফলের ওপর। বুধবার ব্লুমবার্গ টিভিতে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমরা রাশিয়ার তেল কেনার জন্য ভারতের ওপর সেকেন্ডারি শুল্ক চাপিয়েছি। পরিস্থিতি ভাল না গেলে এই সেকেন্ডারি শুল্ক বা নিষেধাজ্ঞা আরও বাড়তে পারে।’
চলতি মাসের শুরুর দিকে ট্রাম্প রাশিয়া থেকে তেল ও অস্ত্র কেনার শাস্তিস্বরূপ ভারতের পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আরও বাড়তি ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন।
অপরদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করতে যুক্তরাষ্ট্রের ‘আন্তরিক চেষ্টার’ প্রশংসা করেছেন। বৈঠকের আগে শীর্ষ রুশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠককালে পুতিন এই প্রশংসা করেন। গতকাল রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাস জানিয়েছে, বৈঠকের শুরুতেই পুতিন বলেছেন, ‘বর্তমান মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে আমরা কোন পর্যায়ে আছি, তা স্পষ্ট করতে এই বৈঠক ডাকা হয়েছে।’ এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রশংসা করে টিভিতে প্রচারিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘সংঘাতে জড়িত সব পক্ষের স্বার্থে যুদ্ধ বন্ধ, সংকট নিরসন এবং চুক্তিতে পৌঁছতে যুক্তরাষ্ট্র আমার মতে, সক্রিয় ও আন্তরিক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আমাদের দেশের সঙ্গে ইউরোপে এবং বিশ্বব্যাপী দীর্ঘমেয়াদে শান্তির পরিবেশ গড়ে তুলতে এটি করা হচ্ছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারমাণবিক অস্ত্র চুক্তির সম্ভাবনারও ইঙ্গিত দিয়ে পুতিন বলেছেন, পরবর্তী ধাপে দুইপক্ষ কৌশলগত আক্রমণাত্মক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছলে এই শান্তির পরিবেশ গড়ে উঠবে।