আলাদা পাইপলাইন কোম্পানি করছে বিপিসি

গঠিত হবে জিটিসিএলের আদলে, ৯ সদস্যের কমিটি

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৫:৪২ পূর্বাহ্ণ

সারা দেশে সরকারিভাবে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সঞ্চালন ও সরবরাহ করা হয়। জ্বালানি তেলের ক্ষেত্রেও একইভাবে পাইপলাইনের মাধ্যমে সঞ্চালন ও সরবরাহের কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)। নিজেদের পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন রক্ষণাবেক্ষণে এবার আলাদা কোম্পানি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে বিপিসি। পেট্রোবাংলার অধীনস্থ গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান জিটিসিএলের (গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লি.) আদলে ‘পেট্‌্েরালিয়াম ট্রান্সমিশন কোম্পানি’ নামে নতুন কোম্পানিটি গঠন হতে পারে বলে জানিয়েছে বিপিসি। ইতোমধ্যে প্রাথমিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ৯ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে রাষ্ট্রীয় জ্বালানি তেল আমদানি ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানটি।
বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, আমদানিকৃত তরল জ্বালানি খালাসে ব্যয় ও সময় বাঁচানোর লক্ষ্যে ৬ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন হচ্ছে ‘ইনস্টেলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসটিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন প্রকল্প’। ২০২২ সালের শেষের দিকে প্রকল্পের কাজ শেষে অপারেশন শুরু হবে এসপিএমের। আবার বিমানের জ্বালানি (জেট এ-১) সরবরাহের জন্য নারায়ণগঞ্জের পিতলগঞ্জ থেকে ঢাকার কুর্মিটোলা এভিয়েশন ডিপো পর্যন্ত নির্মিত হচ্ছে প্রায় ১৬ কিলোমিটার ৮ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপলাইন। প্রায় ২৪৯ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটির কাজ ইতোমধ্যে অর্ধেকের বেশি এগিয়েছে।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম-ঢাকা পর্যন্ত জ্বালানি তেল পরিবহনের জন্য ২৭৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে প্রায় আড়াইশ কিলোমিটার পাইপলাইন। পাইপলাইন প্রকল্পের প্রায় ৫০ শতাংশ ভৌত অগ্রগতি হয়েছে। একইভাবে ভারতের নুমালীগড় রিফাইনারি হতে আমদানিকৃত তেল পাইপলাইনের মাধ্যমে আনার জন্য ১৩১ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ করছে বিপিসি। ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন প্রকল্পটির কাজও অর্ধেকের বেশি এগিয়েছে। আগামী ২০২২ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে সবগুলো পাইপলাইন অপারেশনে যেতে পারে বলে জানিয়েছে বিপিসি।
এদিকে পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল পরিবহন করা শুরুর পর এসব পাইপলাইন রক্ষণাবেক্ষণ জটিলতায় পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বিপিসির। জাহাজ থেকে খালাস এবং সরবরাহ কার্যক্রম করে আসলেও স্থলপথে পাইপলাইন মাধ্যমে জ্বালানি তেল পরিবহনের অপারেশনে পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটির। নেই জ্বালানি তেল সরবরাহের পাইপলাইল রক্ষণাবেক্ষণে নীতিমালাও। আবার বর্তমান নির্মাণাধীন পাইপলাইন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করছে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড ও পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড। পাইপলাইনগুলো অপারেশনে এলে নতুন জনবলের প্রয়োজন হবে। সব মিলিয়ে আগামীতে জ্বালানি তেল সরবরাহের পাইপলাইনগুলো রক্ষণাবেক্ষণ ও অপারেশনের জন্য আলাদা কোম্পানি গঠনের দিকে এগুচ্ছে বিপিসি। এজন্য বিপিসির পরিচালককে (অপারেশন ও পরিকল্পনা) আহ্বায়ক করে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে বিপিসির সচিবকে সদস্য সচিব এবং বিপিসির মহাব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন), মহাব্যবস্থাপক (হিসাব), পদ্মা ও যমুনা অয়েলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পেট্রোবাংলার অঙ্গ প্রতিষ্ঠান জিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস ব্লেন্ডার্স লিমিটেডের (ইএলবিএল) কোম্পানি সচিব এবং বিপিসির আইন উপদেষ্টাকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। নতুন কোম্পানির আয়ের উৎস, সম্ভাব্য কার্যক্রম, অনুমোদিত মূলধন, পরিশোধিত মূলধন, জনবল কাঠামো চুড়ান্তকরণ, জনবল নিয়োগ, অফিস স্থাপনসহ বিভিন্ন সুপারিশ করবে গঠিত কমিটি। তাছাড়া নতুন কোম্পানি গঠনের বিষয়ে সরকারি আইন ও বিধিবিধান অনুসরণ করে মতামত প্রদানের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কমিটিকে।
এ ব্যাপারে কমিটির আহ্বায়ক বিপিসির পরিচালক (অপারেশন ও পরিকল্পনা) সৈয়দ মেহদী হাসান আজাদীকে বলেন, আগামী বছরগুলোতে পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল অপারেশনের কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে এসপিএমসহ চারটি পাইপলাইন প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। ইন্ডিয়া-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন, চট্টগ্রাম-ঢাকা পাইপলাইন, পিতলগঞ্জ-কুর্মিটোলা পাইপলাইনের কাজ চলছে। এসব পাইপলাইন নির্মাণের পর রক্ষণাবেক্ষণের একটি বিষয় রয়েছে। এগুলো অপারেশন ও রক্ষণাবেক্ষণের জনবলও বর্তমানে নেই। তাই জটিলতা কাটাতে জিটিসিএলের আদলে নতুন একটি পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন কোম্পানি গঠনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। একটি কমিটিও হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে কমিটির মিটিং ডাকা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এক-দুই মাসের মধ্যেই নতুন কোম্পানির বিষয়ে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দেওয়া সম্ভব হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদেশীয় জাহাজ সুরক্ষা আইনে কড়াকড়ি
পরবর্তী নিবন্ধআয়কর রিটার্ন জমার সময় বাড়ল এক মাস