গত ৩ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ১১ টায় কথা হল দেখা হল। হাতে ছিল ব্যানার। আমি বললাম কাল সন্ধ্যায় একাত্তরের জননীখ্যাত, বিশিষ্ট লেখিকা বীর মুক্তিযোদ্ধা রমা চৌধুরী দিদির মৃত্যুবার্ষিকীর আসার জন্য পুনরায় মনে করিয়ে দিলাম তিনিও আমাকে বলল আজ সন্ধ্যায় শিল্পকলার মহড়া কক্ষে যেতে দিদির স্মরণসভাটা ছোট করে হবে। আমিও গিয়েছি। কিন্তু গিয়ে দেখি মহড়া কক্ষে জাহেদুল আলম ভাই ও সায়েম আর কেউ নেই। নাট্যজন জাহেদ ভাইকে জিজ্ঞেস করলে বলেন আলাউদ্দীন খোকন ভাই নাকি একটু অসুস্থ হয়ে গেল। সেজন্য আসতে পারেনি। আমাকে বলল তুমি একটা ফোন করে জিজ্ঞেস কর। আমি বললাম ভাইয়া উনি অসুস্থ হলে উনাকে ডিস্টার্ভ করা ঠিক হবে না। মিটিংয়ের পরে দেখা যাবে আগে উনি সুস্থ হোক। এরপর আমি চট্টগ্রাম সাংস্কৃতিক উৎসব ও বইমেলার অনুষ্ঠান উপভোগ করে রাত ১০ টার পর বাসায় ফিরে আসি। এগুলো ৩ তারিখ রবিবারের কথা বলছিলাম। ২ সেপ্টেম্বর প্রথমে সকালে দেখা হল আমি আর কবি আশীষ সেন দাদার সাথে দস্তগীর হোটেলের একটু পরে রাস্তার ওপারে। তথন আশীষ দাদা জিজ্ঞেস করল তাঁর পরিবার কেমন আছে। তিনি খুশি মনে বললেন আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে। তার মেয়ে ক্লাস টেনে পড়ে দোয়া করতে বললেন। আমাকে বলল আসিফ তুমি সময় পেলে সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির মহড়া কক্ষে আসিও রমা দিদির স্মরণসভাটা ছোট করে করছি। আমিও বললাম ভাইয়া আমি খুব চেষ্টা করব আসতে। আবার ২ সেপ্টেম্বর রাতে চেরাগীতে রূপসাগর হোটেলে দেখা হল। তখনও বলল আসিফ কালকে পারলে আসিও। আমিও হ্যাঁ সম্মতি দিলাম। আর বললাম আপনিও সোমবার সন্ধ্যা ৭ টায় একটু মনে করে আসিয়েন চট্টগ্রাম সাহিত্য পাঠচক্রের সোমবারের সাহিত্য সন্ধ্যায় রমা দিদির মৃত্যুবার্ষিকীর স্মরণ সভা আমরা করব। তিনি সম্মতি দিলেন। বিগত ২ বছর সাহিত্য পাঠচক্র কর্তৃক রমা চৌধুরীর মৃত্যুবার্ষিকীর সভায় আলাউদ্দীন খোকন ভাইকেই আমরা সবদিক ও মানবিক গুণাবলীর জন্য প্রধান অতিথি করে সভা করেছিলাম। এরপর গত বছরও আলাউদ্দীন খোকন ভাই প্রধান অতিথি হিসেবে স্মরণসভায় পুরো সময়। ৪ সেপ্টেম্বরও তিনিই প্রধান অতিথি সেটাই অনেকটা নির্ধারিত ছিল। কিন্তু ভাগ্যের কী নিষ্ঠুর খেলা রমা চৌধুরীর মৃত্যুবার্ষিকীর দিনে তারই সবচেয়ে বেশি আদর্শিক আপনজন স্নেহধন্য আলাউদ্দীন খোকন ভাই নিজের মৃত্যুদিনটি বেছে নিলেন। এটা কোনোমতেই বিশ্বাস হচ্ছে না। আলাউদ্দীন খোকন ভাই আপনি আমার অনুষ্ঠানে যোগদানের আগেই এরকম আকাশে উঠে গেলেন। আর রমা চৌধুরীর জন্য আমি আপনার জায়গায় আর কাউকে কোনোদিন পাব না। রমা চৌধুরীর যেকোনো স্মরণ অনুষ্ঠানে আপনি ছিলেন আমার আজন্ম পছন্দের প্রধান অতিথি। হয়ত আপনার এ পদটি আমি কাউকেই আর কখনো যোগ্যতায় পরিমাপ করতে পারব না। সাধারণত আপনি খুব কম কথা বলতেন। নীরব থাকতে ভালোবাসতেন। আর নীরবেই এভাবে দূরের যাত্রী হয়ে গেলেন। আসলে এ সংবাদটি কোনো কারণে আমি যদি ভুল শুনে কারো গালি শুনে হলেও আপনার খবর সঠিক নয় বলত তাহলে নিজেকে অপরাধী লাগত না। আপনি এরকম অভিমান করে দূরে চলে যেতে পারেন না।
জাতি আজন্মত্যাগী, একাত্তরের জননীখ্যাত, বীর মুক্তিযোদ্ধা রমা চৌধুরীকে যতদিন স্মরণ করবে আপনাকে আপনার ত্যাগ, মহত্ত্ব ও মানবিকতার জন্য যুগ যুগ শ্রদ্ধাচিত্রে স্মরণ করবে। আর নিয়তি এতই আপনাদের এতই মিল তারিখটাও আপনাদের একই তারিখ হয়ে গেল। যাতে করে প্রজন্ম একসাথেই দুজনকেই স্মরণ করে। আপনার এ অন্তিম যাত্রা আমাদের হৃদয়কে হাহাকার ও ভীষণ শূন্যতায় ভোগাচ্ছে। আপনি আমাদের হৃদয়ে চিরঞ্জীব থাকবেন। মহান আল্লাহ আপনাকে জান্নাতবাসী করুক।