আলাউদ্দিন আল আজাদ : শিল্পচেতনায় দীপ্ত এক সাহিত্যপুরুষ

| বৃহস্পতিবার , ৩ জুলাই, ২০২৫ at ৫:০৮ পূর্বাহ্ণ

আলাউদ্দিন আল আজাদ (১৯৩২২০০৯)। বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী এই সাহিত্যিক কবিতা, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, সমালোচনা প্রায় সব শাখাতেই রেখেছেন অবদান। সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি তিনি ছিলেন একাধারে শিক্ষক, গবেষক এবং মুক্তিযুদ্ধের সচেতন বুদ্ধিজীবী। তিনি ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দের ৬ মে নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার ধরপাশা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পরবর্তীতে লন্ডনের লিডস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। বিশ শতকের পঞ্চাশের দশকে সাহিত্যক্ষেত্রে তাঁর আবির্ভাব। এ সময়ে যাঁরা বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে তোলার চেষ্টা করেন, তিনি তাঁদের মধ্যে অন্যতম। প্রগতিশীল ও মানবতাবাদী ভাবধারায় তিনি সাহিত্যচর্চা করেছেন। নগরজীবনের কৃত্রিমতা, রাজনীতিক সংগ্রাম, নিপীড়ন, প্রতারণা তিনি তাঁর কথাসাহিত্যের বিষয়বস্তু করেছেন। এ পর্যায়ের তাঁর উল্লেখযোগ্য গল্পগন্থ জেগে আছি (১৯৫০), ধানকন্যা (১৯৫১), জীবন জমিন (১৯৮৮) প্রভৃতি। ষাটের দশকে রচিত তাঁর উপন্যাস, তেইশ নম্বর তৈলচিত্র (১৯৬০) ও কর্ণফুলী (১৯৬২) ব্যাপক সাড়া জাগায়। তেইশ নম্বর তৈলচিত্র উপন্যাসটির বিষয়বস্তু অবলম্বনে বসুন্ধরা নামে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক সুভাষ দত্ত। তাঁর অন্যান্য উপন্যাসের মধ্যে শীতের শেষরাত বসন্তের প্রথমদিন (১৯৬২), ক্ষুধা ও আশা (১৯৬৪), শ্যামল ছায়ার সংবাদ (১৯৮৬) উল্লেখযোগ্য। তাঁর মরক্কোর যাদুকর (১৯৫৯), মায়াবী প্রহর (১৯৬৩) ও ধন্যবাদ (১৯৬৫) অত্যন্ত জীবনঘনিষ্ঠ নাটক। তাঁর অন্যান্য নাটকের মধ্যে ধন্যবাদ (১৯৫১), নিঃশব্দ যাত্রা (১৯৭২), নরকে লাল গোলাপ (১৯৭২) প্রধান। তাঁর দুটি কাব্যনাট্য, ইহুদির মেয়ে (১৯৬২) ও রঙিন মুদ্রারাক্ষস (১৯৯৪)। কবিতার ক্ষেত্রেও তিনি শক্তিমান কবি হিসেবে পরিচিত। তাঁর কবিতায় বৈচিত্র্য ও আধুনিকতা যেমন রয়েছে, তেমনি আছে মানবিকতা ও প্রতিবাদ। সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য আলাউদ্দিন আল আজাদ বেশসংখ্যক পুরস্কারে ভূষিত হন। তার মধ্যে বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৬৪), ইউনেস্কো পুরস্কার (১৯৬৪), জাতীয় চলচিত্র পুরস্কার (১৯৭১), একুশে পদক (১৯৮৬), দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ স্বর্ণপদক (১৯৯৪) উল্লেখযোগ্য। ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দের ৩ জুলাই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধব্যবসার পরিবেশ উন্নত করতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে
পরবর্তী নিবন্ধসাফ