আল-কোরআন মানবতার একমাত্র মুক্তির সনদ, পথনির্দেশক

ডা. মোহাম্মদ ওমর ফারুক | শুক্রবার , ২৫ নভেম্বর, ২০২২ at ৯:০৩ পূর্বাহ্ণ

মহান-রা’ব্বুল ইজ্জতের পক্ষ থেকে প্রেরিত মহা ঐশীগ্রন্থ, আসমানের নিচে এবং জমিনের উপর একমাত্র সত্য কিতাব আল্‌-কোরআন পৃথিবীর সমস্ত মানুষের জন্য একমাত্র হেদায়াতগ্রন্থ ও মুক্তির সনদ। শুধুমাত্র তাই নয়, এটি বিপথগামী মানুষের জন্য সঠিক পথনির্দেশক ও সহায়ক। এই কোরআনই পুঞ্জিভূত সমস্ত সমস্যার সমাধান দিতে সক্ষম। এই কোরআন বিশ্ব মানবতার জন্য মহা নেয়ামতস্বরূপ ও শাফায়াতকারী। ‘তোমরা কোরআন পড়। কারণ কেয়ামতের দিন কোরআন তার পাঠকারীর জন্য শাফায়াতকারী হিসাবে আবির্ভূত হবে’-(মুসলিম)। কেয়ামতের কঠিন ময়দানে হতাশাগ্রস্থ বনী আদমদের জন্য এই কোরআনই হবে একমাত্র সহায়তাকারী। ‘কেয়ামতের দিন কোরআন পাঠকারীকে বলা হবে-কোরআন পড় ও জান্নাতের মঞ্জিলে আরোহণ কর এবং থেমে থেমে কোরআন পড়তে থাক যেমন তুমি দুনিয়ায় পড়তে। কারণ, জান্নাতে তোমার স্থান হবে সেই শেষ আয়াতটি শেষ করা পর্যন্ত যা তুমি পড়ছো’-(আবু দাউদ, তিরমীজি)। অন্য একটি হাদীসে বলা হয়েছে- ‘কোরআন এমন একটি শাফায়াতকারী যার শাফায়াত গ্রহণ করা হবে। এমন বিতর্ককারী, যার যুক্তি প্রমাণের সত্যতা স্বীকৃত হবে। যে ব্যক্তি কোরআনের নেতৃত্ব মেনে নেয়, কোরআন তাকে জান্নাতের পথে পরিচালিত করে। পক্ষান্তরে যে কোরআনকে পশ্চাতে ফেলে দেয়-কোরআন তাকে জাহান্নামে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়’। আল্লাহতায়ালার এই সত্য কিতাবকে কোনো ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠী ধ্বংস করার চিন্তাও করতে পারবে না। যা যুগে যুগে প্রমাণিত হয়েছে। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে উপ-মহাদেশের লাখো হাফেজে কোরআন এই কোরআনকে নিজের বুকে ধারণ করে রেখেছিল। কারণ, এই কোরআনকে সংরক্ষণের দায়িত্ব আল্লাহতায়ালা নিজেই নিয়েছেন। ‘অবশ্যই আমিই উপদেশ (সম্বলিত কোরআন) নাযিল করেছি এবং আমিই তার সংরক্ষণকারী’- সূরা আল হেজর-৯। এই কোরআন মানবতার একমাত্র মুক্তির সনদ, সমস্ত জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎস, ক্রম বিকাশমান মহাবিশ্বের মহাবিষ্ময়। ‘হযরত আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, আমি রাসূল (সাঃ) কে বলতে শুনেছি, অদূর ভবিষ্যতে ফেৎনা-ফাসাদ দেখা দিবে। আমি জানতে চাইলাম: তার থেকে মুক্তির উপায় কি? তিনি বললেন: আল্লাহর কিতাব (কোরআন)। এর মধ্যে রয়েছে তোমাদের পূর্ববতী জাতি সমূহের ইতিকথা এবং (কেয়ামতের বিভিন্ন অবস্থার বিবরণ সহ) আগামী দিনের সংবাদ-সমাচার-তাতে রয়েছে তোমাদের পারস্পরিক সর্ব বিষয়ের বিধি বিধান। এটি সত্য-মিথ্যার পার্থক্য নির্ণয়ক। এটি হাসি তামাশার কোনো বস্তু নয়। যে কেউ খেয়াল খুশি অনুযায়ী আচরণ করবে। বরং এর সবটুকুই অত্যন্ত মর্যাদাসম্পন্ন ও মহা মূল্যবান। যে ব্যক্তি উদ্ধত-অহংকারী এবং কোরআন অমান্য করার ধৃষ্টতা প্রদর্শন করবে আল্লাহ রা’ব্বুল ইজ্জত তাকে ধ্বংস করে দিবেন। আর যে ব্যক্তি কোরআন ছেড়ে অন্য কোনো উৎস থেকে হেদায়াত বা পথনির্দেশনা খোঁজার চেষ্টা করবে আল্লাহতায়ালা তাকে পথভ্রষ্ট- উদভ্রান্ত করে দিবেন। এটি আল্লাহর সাথে মানুষের সম্পর্কের দৃঢ় রজ্জু, অকৃত্রিম বন্ধন। ‘তোমরা সবাই মিলে আল্লাহর রশি (কোরআন)-কে শক্ত করে আঁকড়ে ধর এবং কখনো পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না’- সূরা আল ইমরান-১০৩। এটি একটি প্রজ্ঞাপূর্ণ উপদেশ-সীরাতুল মুস্তাকিম, ‘এটা হচ্ছে আমার (দেখানো) সহজ সরল পথ, অতএব তোমরা একমাত্র এরই অনুসরণ কর, কখনো ভিন্ন পথ অবলম্বন কর না, কেননা (ভিন্ন পথ অবলম্বন করলে) তা তোমাদের আল্লাহর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিবে’-সূরা আল আনআম- ১৫৩। এই কিতাবের কোনো প্রকার রদ-বদল পরিবর্তন-পরিবর্ধন, সংযোজন-বিয়োজন করতে পারবে না আগামী কেয়ামত অবধি। অন্য কোনো ভাষার সাথে একাকার হয়ে এর অনন্য, অসাধারণ ভাষা শৈলী বিনষ্ট করতে পারবে না। যার গভীরে পৌঁছার অবারিত সাধনায় গবেষকদের জ্ঞান পিপাসা কেবল অতৃপ্তিই রয়ে যায়। এটি মহা বিশ্বের মহাবিষ্ময় যার স্বাদিষ্ঠতা কখনোই নিঃশেষ হওয়ার নয়। এটি সেই কিতাব যা শোনা মাত্রই জিনেরা স্বতঃষ্ফূর্তভাবে বলে উঠেছিল, ‘আমরাতো এক বিষ্ময়কর কোরআন শ্রবণ করেছি-যা সঠিক পথনির্দেশ করে, ফলে আমরা তাতে বিশ্বাস স্থাপন করেছি’- সূরা আল জ্বীন- ১,২। এই আয়াতের ব্যাখায় তাফসীর ইবনে কাসীরে এসেছে, মহান আল্লাহতায়ালা তাঁর রাসূল (সাঃ) কে বলেন, ‘ হে নবী! তুমি তোমার কওমকে ঐ ঘটনাটি অবহিত কর যে, জ্বীনেরা কোরআন করীম শুনেছে, সত্য জেনেছে, ওর উপর ঈমান এনেছে এবং এর অনুগত হয়েছে। জ্বীনদের একটি দল কোরআন করীম শোনে নিজেদের কওমের মধ্যে গিয়ে বলেন: আজ আমরা এক অতি চমৎকার ও বিষ্ময়কর কিতাবের বাণী শুনেছি যা সত্য ও মুক্তির পথ প্রদর্শন করে। আমরা তা মেনে নিয়েছি। এখন এটা অসম্ভব যে, আমরা আল্লাহর সাথে অন্য কারোর ইবাদত করব।
এই বিষয়টি সূরা আহকাফের ২৯ নং আয়াতের মত- ‘স্মরণ কর, আমি তোমার প্রতি আকৃষ্ট করেছিলাম একদল জ্বীনকে, যারা কোরআন পাঠ শুনছিল। জ্বীনেরা নিজেদের সম্প্রদায়কে বলে: আমাদের রবের কার্যক্ষমতা ও নির্দেশ উচ্চমানের এবং বড়ই মর্যাদা সম্পন্ন। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, এর অর্থ হচ্ছে তাঁর নি’আমাতরাজি, শক্তি এবং সৃষ্ট জীবের প্রতি করুণা অপরিসীম। হযরত আবু দারদা (রাঃ) বলেন, এর অর্থ হচ্ছে তাঁর যিকর উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন এবং মাহাত্ন্য খুবই উন্নতমানের। এই কোরআন দ্বারা কিংবা কোরআনের ভাবধারায় উজ্জীবিত হয়ে যে কথা বলে, সেই সত্য কথা বলে। কোরআনের শিক্ষা অনুযায়ী যে তার কর্মযজ্ঞ সম্পাদন করবে তাকে অবশ্যই যথার্থ কর্মফল দেওয়া হবে। ‘কোরআন দ্বারা যে বিচার ফয়সালা, শাসনকার্য পরিচালনা করে সেই ন্যায় বিচার করে। আর যে কোরআনের প্রতি মানুষকে আহবান করে সেই সৎপথ প্রাপ্ত হয়’- (তিরমীজি)। অতএব এই কোরআনকে বুকে ধারণ করে আমাদের পথ চলতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। কাল কেয়ামতের কঠিন দিনে এই কোরআনই আপনাকে সমস্ত দুঃখ-দুর্দশা থেকে মুক্তি দিতে পারবে।
লেখক: সভাপতি-রাউজান ক্লাব, সিনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি), রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতাল

পূর্ববর্তী নিবন্ধহার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে খোদাই করা আল কোরআনের বাণী
পরবর্তী নিবন্ধজুম’আর খুতবা