আর্থিক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা জরুরি হয়ে পড়েছে

| সোমবার , ৪ নভেম্বর, ২০২৪ at ৮:১৬ পূর্বাহ্ণ

শুক্রবার প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ)-এর ‘রিজিওনাল ইকোনমিক আউটলুক এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চল’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন। এতে বলা হয়েছে, সামপ্রতিক সময়ে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বাংলাদেশের স্বল্পমেয়াদি অর্থনৈতিক সম্ভাবনায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এতে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার কমে যাচ্ছে। এপ্রিলের তুলনায় অক্টোবরে এসে আইএমএফ প্রবৃদ্ধির হার ব্যাপকভাবে কমিয়ে দিয়েছে। বিদায়ী অর্থবছরের পাশাপাশি চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার আরও কমবে। প্রতিবেদনে এ অঞ্চলের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলোকে আগামী বছরে জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাব, অস্থিরতা, পর্যটন খাতে নেতিবাচক পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। বাংলাদেশকেও এসব পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলা হয়, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে স্বল্পমেয়াদি বেশ ভালো সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু সামপ্রতিক সময়ে দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেওয়ায় স্বল্পমেয়াদি সম্ভাবনায় নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এর প্রভাব আগামীতে আরও দৃশ্যমান হবে। এপ্রিলে সংস্থাটি ২০২২২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশ প্রক্ষেপণ করেছিল। অক্টোবরে এসে তা কমিয়ে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ করা হয়েছে। ওই সময়ের জন্য প্রবৃদ্ধির হার কমানো হয়েছে দশমিক ২ শতাংশ। বিদায়ী ২০২৩২৪ অর্থবছরের জন্য এপ্রিলে প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হয়েছিল ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। অক্টোবরে এসে তা কমিয়ে করা হয়েছে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে প্রবৃদ্ধির হার কমানো হয়েছে দশমিক ৩ শতাংশ।

পত্রিকায় প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, চলতি অর্থবছরের জন্য এপ্রিলে প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করেছিল ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। অক্টোবরে এসে তা ২ দশমিক ১ শতাংশ কমিয়ে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ করেছে। সামপ্রতিক সময়ে দেশে সৃষ্ট রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে প্রবৃদ্ধির হার কমানো হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এদিকে অপর এক প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বলেছে, চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ৪ শতাংশে নেমে আসতে পারে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে এপ্রিলজুন প্রান্তিকে দেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৯১ শতাংশ। আগের তিন প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি আরও বেশি হয়েছিল। শেষ প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি কম হওয়ায় বিদায়ি অর্থবছরে গড় প্রবৃদ্ধির হার কমে যাবে। আইএমএফের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এখনও প্রাইমারি ব্যালেন্সের স্থিতি চলতি অর্থবছরেও নেতিবাচক থাকবে। বৈদেশিক ঋণ পরিস্থিতিতেও চাপে থাকতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈশ্বিক এবং দেশীয় নানামাত্রিক সমস্যায় দেশের অর্থনীতি কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। জনশ্রুতি মতে, কতিপয় সিন্ডিকেটের কারসাজি ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহের দুর্বৃত্তায়নঅদক্ষতাঅযোগ্যতা দেশে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিকে স্ফীত করেছে। অধিকাংশ জনগণের জীবনপ্রবাহে প্রতিনিয়তই নাভিশ্বাস দীর্ঘায়িত হয়েছে। স্বল্প সংখ্যক অবৈধঅনৈতিক কথিত ব্যবসায়ীচোরাকারবারি ছাড়া সততার সাথে ব্যবসা পরিচালনায় বড় বড় শিল্পপতিরাও হিমশিম খাচ্ছে। ঋণখেলাপিঅর্থপাচারমাদক ও অস্ত্র ব্যবসায়ী এবং ঘুষ বাণিজ্যে আকন্ঠ নিমজ্জিত ব্যক্তি ব্যতীত মানুষের ক্রয়ক্ষমতা নিদারুণ আয় বৈষম্য তৈরি করেছে। সমপ্রতি বিরাজিত পরিস্থিতির কারণে সংকটে থাকা অর্থনীতি আরও কঠিন সমস্যায় নিপতিত। দেশের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশের যোগানদাতা তৈরি পোশাক খাতও ক্ষতির সম্মুখীন। ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টরা চলমান অস্থিরতায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় খেলাপি ঋণ আরও বৃদ্ধি পাওয়া এবং এতে ব্যাংকের মুনাফা কমার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, নতুন সরকারকে বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণে বিভিন্ন ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে। দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে না পারলে রিজার্ভরেমিট্যান্স, রপ্তানি আয় ছাড়াও রাজস্ব ও ব্যাংক খাত নিয়ে যে ভয়াবহ উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া কঠিন হবে। অর্থনীতিকে স্থিতিশীল অবস্থায় নিয়ে আসাই হবে নতুন সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। কোনো কোনো অর্থনীতিবিদ বলেন, “এখন যেহেতু আর বিশেষ কোন নীতি সংস্কার হবে না, তাই এখন দ্রব্যমূল্য, মুদ্রা বিনিময় হার ও ব্যাংক ঋণের সুদের হারে মনোযোগ দিতে হবে। আর খেয়াল রাখতে হবে ব্যাংক বা কোন খাতে যেন কাঠামোগত সংকট না হয়। আবার বৈদেশিক দায় দেনা পরিশোধের ক্ষেত্রেও যেন কোন সমস্যা তৈরি না হয়।” তাঁরা বলছেন, আর্থিক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা জরুরি হয়ে পড়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে