আর্ট পেপার ঘোষণায় এল সিগারেটের বিপুল জাল স্ট্যাম্প

৯০-১৪৩ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির চেষ্টা

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১৫ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৮:০৯ পূর্বাহ্ণ

চীন থেকে আর্ট পেপার ঘোষণায় বিপুল পরিমাণ সিগারেটের জাল স্ট্যাম্প আমদানি করেছে নগরীর আন্দরকিল্লার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বাপ্পু এন্টারপ্রাইজ। মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানির মাধ্যমে ৯০ থেকে ১৪৩ কোটি টাকা পর্যন্ত রাজস্ব ফাঁকির চেষ্টা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম কাস্টমসের অডিট ইনেভেস্টিগেশন অ্যান্ড রিসার্চ (এআইআর) শাখার কর্মকর্তারা।
কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, আন্দরকিল্লা জিএ ভবনের প্রতিষ্ঠান বাপ্পু এন্টারপ্রাইজ ২০ ফুট কন্টেনারে ২৪৬ প্যাকেটে মোট ৩ কোটি ১৯ লাখ ৮০ হাজার পিস নিম্নস্তরের ১০ শলাকাবিশিষ্ট সিগারেটের প্যাকেটে ব্যবহার উপযোগী হালকা খয়েরি রঙের জাল স্ট্যাম্প নিয়ে আসে। চালানটি খালাসে আগ্রাবাদের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মধুমতি এসোসিয়েটস লিমিটেড ৯ ডিসেম্বর বিল অব এন্ট্রি দাখিল করে। কাস্টমসের পোর্ট কন্ট্রোল ইউনিট (পিসিইউ) ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার আওতায় রপ্তানিকারক, রপ্তানিকারকের ওয়েবসাইট, তৈরি দেশ, আমদানিকারকের ব্যবসায়ের ধরন ও ঠিকানা, পণ্যের বর্ণনা প্রভৃতি বিশ্লেষণ পণ্য চালানটিতে মিথ্যা ঘোষণায় সিগারেটের প্যাকেটে ব্যবহারযোগ্য জাল স্ট্যাম্প থাকার বিষয়ে প্রাথমিক ধারণা পায়। পরবর্তীতে এআইআর টিমের সদস্যরা চালানটির বিল অব এন্ট্রিটি অ্যাসাইকুডা সিস্টেমে লক করে রাখে।
গতকাল আটক কন্টেনারটি নামিয়ে বন্দরের অভ্যন্তরে নিয়ম অনুযায়ী পণ্য পরীক্ষা শুরু করেন এআইআরের কর্মকর্তারা। এ সময় কন্টেনারের ২০টি প্যালেটের মধ্যে দৈবচয়নের ভিত্তিতে ৫টি প্যালেট দেখানোর পর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট গড়িমসি শুরু করে। এক পর্যায়ে কায়িক পরীক্ষা সমাপ্ত করার জন্য অনুরোধ করে। কায়িক পরীক্ষায় পাঁচটি প্যালেটে শুধুই আর্ট পেপার পাওয়া যায়। পরবর্তীতে এআইআর টিমের সদস্যরা আরো একটি প্যালেট খোলেন এবং সিগারেটের জাল স্ট্যাম্প খুঁজে পান।
২০টি প্যালেট শতভাগ কায়িক পরীক্ষা সম্পন্ন শেষে মোট ২৪৬ প্যাকেট ৩ কোটি ১৯ লাখ ৮০ হাজার পিস নিম্নস্তরের ১০ শলাকাবিশিষ্ট সিগারেটের প্যাকেটে ব্যবহারের উপযোগী হালকা খয়েরি রঙের জাল স্ট্যাম্প পাওয়া যায়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এসআরও নং-১৪৭-আইন/২০২০/১০৮-মূসক; তারিখ: ১১/০৬/২০২০ অনুযায়ী নিম্নস্তরের সিগারেট স্ট্যাম্পের রং হালকা খয়েরি, যার সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৩৯ টাকা থেকে ৬২ টাকা এবং যার বিপরীতে সম্পূরক শুল্কের হার ৫৭ শতাংশ এবং মূসকের হার ১৫ শতাংশ। চালানটি খালাস হয়ে গেলে এই পরিমাণ জাল স্ট্যাম্প ৩ কোটি ১৯ লাখ ৮০ হাজার নিম্নস্তরের সিগারেটের প্যাকেটে ব্যবহার করা যেত, যার মাধ্যমে সরকার প্রায় ৯০ কোটি হতে ১৪৩ কোটি টাকা রাজস্ব হারাত।
উল্লেখ্য, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিধি অনুযায়ী স্ট্যাম্প বা ব্যান্ডরোল দি সিকিউরিটি প্রিন্টিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ হতে সংগ্রহ করতে হয় এবং সংশ্লিষ্ট কাস্টমস, এঙাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট কর্তৃক দি সিকিউরিটি প্রিন্টিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ এবং সিগারেট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত কমিটি প্রতি ৩ মাস অন্তর প্রতিষ্ঠানভিত্তিক সিগারেট স্ট্যাম্প ও ব্যান্ডরোল সরবরাহ ও ব্যবহার আড়াআড়ি যাচাইপূর্বক প্রতিবেদন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মূসক বাস্তবায়ন শাখায় প্রেরণ করতে হয়। ফলে এই জাতীয় পণ্য দি সিকিউরিটি প্রিন্টিং কর্পোরেশন ব্যতীত অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান হতে ক্রয় অথবা বিদেশ থেকে আমদানি করার সুযোগ নেই।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপ-কমিশনার (এআইআর শাখা) শরফুদ্দিন মিয়া আজাদীকে বলেন, মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি হওয়ায় কাস্টমস অ্যাক্ট ১৯৬৯ এবং প্রচলিত অন্যান্য আইন ও বিধি অনুযায়ী আমদানিকারকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধফুল আর মোমের আলোয় স্মরণ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের
পরবর্তী নিবন্ধচবিতে ছাত্রলীগের দু’পক্ষের হাতাহাতি, মধ্যরাতে উত্তেজনা