আরজি কর কাণ্ড : অভিযুক্ত সঞ্জয়ই দোষী, সাজা কাল দোষ অস্বীকার সঞ্জয়ের

| রবিবার , ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৭:২৩ পূর্বাহ্ণ

পশ্চিমবঙ্গের আরজি কর মেডিকেল কলেজে কর্তব্যরত চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের মামলায় গ্রেপ্তার সঞ্জয় রায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছে; তার সাজা ঘোষণা করা হবে আগামীকাল সোমবার। গতকাল শনিবার দুপুরে এ রায় ঘোষণা করেন শিয়ালদহের অতিরিক্ত দায়রা জজ অনির্বাণ দাস। গত বছর অগাস্টে কলকাতায় এই চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা পুরো ভারতকে স্তম্ভিত করে দিয়েছিল। ঘটনার বিচার চেয়ে চিকিৎসকসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের আন্দোলনে পশ্চিমবঙ্গ বেশ কয়েক মাস ছিল উত্তাল। খবর বিডিনিউজের। ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নিহত চিকিৎসক ৮ অগাস্ট পর্যন্ত টানা ৩৬ ঘণ্টার ডিউটিতে ছিলেন, ওইদিন রাতে সহকর্মীদের সঙ্গে খাবার খেয়ে তিনি পালমোনোলজি বিভাগের সেমিনার হলে বিশ্রাম নিতে যান। পরদিন সকালে তার জুনিয়র সহকর্মীরা সেই হলের ভেতরেই তার অর্ধনগ্ন মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। নিহত তরুণীর পরিবার জানায়, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ তাদের প্রথমে জানিয়েছিল তাদের মেয়ে ‘আত্মহত্যা’ করেছে। পরে অবশ্য তীব্র ক্ষোভের মুখে পুলিশ এই ঘটনায় খুন ও ধর্ষণের মামলা দায়ের করে। ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সঞ্জয় নামের এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেপ্তার করে কলকাতা পুলিশ। পরে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে তদন্তের দায়িত্ব গ্রহণ করে সিবিআই। সিবিআই তদন্ত নিয়ে একাধিকবার উষ্মা প্রকাশ করেন নিহতের মাবাবা। তাদের দাবি, সিবিআই একমাত্র সঞ্জয় রায়কেই দোষী প্রমাণ করার চেষ্টা করছে; আদতে তারা কোনো কাজ করেনি। তারা এও বলেন, সঞ্জয় দোষী, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু এই ঘটনায় আরও অনেকে যুক্ত আছেন, যাদের ধরা হচ্ছে না। আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে : আনন্দবাজার জানায়, গতকাল ১২ মিনিটেই রায় ঘোষণা শেষ হয়েছে। রায় শুনে আদালতের ভিতরেই চিৎকার করতে শুরু করেন সঞ্জয়। বিচারক জানিয়েছেন, সোমবার বেলা সাড়ে ১২টায় তার কথা শুনবেন এবং ওই দিনই সাজা ঘোষণা করা হবে। এ সময় সঞ্জয় বলেন, আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। আমার গলায় রুদ্রাক্ষের মালা আছে। এই মালা পরে আমি এই অপরাধ করব? আপনি (বিচারক) তো দোষী সাব্যস্ত করে দিলেন। আমি গরিব। আমি এই কাজ করিনি। যারা করেছে, তাদের কেন ছাড়া হচ্ছে? এরপর আদালত থেকে একপ্রকার জোর করেই বার করে নিয়ে যাওয়া হয় সঞ্জয়কে। আরজি কর মামলায় মোট ৫০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে নিম্ন আদালতে। সেই তালিকায় রয়েছেন নিহতের বাবা, তদন্তকারী সিবিআই কর্মকর্তা, কলকাতা পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তা, ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ এবং নিহতের কয়েকজন সহপাঠী। কলকাতা পুলিশ সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি ঘটনাস্থল থেকে একাধিক ‘বায়োলজিক্যাল’ ও ‘ডিজিটাল’ তথ্যপ্রমাণও সংগ্রহ করেছিল। পরে তদন্তভার পাওয়া সিবিআই ওই সিভিক ভলান্টিয়ারকেই একমাত্র অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। এরপর গত ১১ নভেম্বর চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় আদালত। তার ৯ সপ্তাহ বাদে গতকাল শনিবার রায় ঘোষণা করা হলো। ধর্ষণখুনের মামলায় তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগে আরজি করের সাবেক অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার তৎকালীন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকেও গ্রেপ্তার করেছিল সিবিআই। যদিও অভিযোগপত্রে তাদের নাম রাখেনি সিবিআই। ওই মামলায় সন্দীপ ও অভিজিৎ জামিন পেয়েছেন। অভিজিতের জেলমুক্তি হলেও আরজি করে দুর্নীতির মামলায় সন্দীপ এখনও কারাগারে রয়েছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিএফআইইউর সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাস গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধবুড়িশ্চর জিয়াউল উলুম কামিল মাদ্রাসার সালানা জলসার প্রস্তুতি সভা