আমের ফলন বিপর্যয় বান্দরবানে

খরায় পুড়েছে মুকুল

বান্দরবান প্রতিনিধি | শনিবার , ৫ জুন, ২০২১ at ৬:৩২ পূর্বাহ্ণ

জুম চাষের পরিবর্তে বান্দরবানের পাহাড়ে বেড়েছে মিশ্র ফলের চাষ। তারমধ্যে বিভিন্ন জাতের আম অন্যতম। তবে বৈরি আবহাওয়ায় এ বছর আমের ফলন বিপর্যয় হয়েছে জেলায়। সীমান্তবর্তী জেলা বান্দরবানে মিয়ানমারের জাত হিসাবে পরিচিত ‘রাংগোয়াই’ আমের আবাদ সবচেয়ে বেশি। এই অঞ্চলে রাংগোয়াই আমের চারটি জাতের চাষ করে ইতিমধ্যে ভাগ্য বদলেছে অনেক চাষীর। জাতগুলোর মধ্যে রয়েছে একটি আগাম জাত হিসেবে পরিচিত, আরেকটি শাঁস আঁশযুক্ত। অন্য দুটির একটির লালচে-হলুদ এবং আরেকটি নাবি জাত। যেটি সেপ্টেম্বরের শেষ পর্যন্ত পাওয়া যায়। খেতে বেশ সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে আমগুলোর চাহিদাও রয়েছে প্রচুর। কৃষি বিভাগ ও চাষীদের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে বান্দরবান জেলায় সাড়ে ৭ হাজারের বেশি হেক্টর পাহাড়ি জমিতে আমের চাষ হয়েছে। তারমধ্যে রাংগোয়াই আমের চাষ সবচেয়ে বেশি। গতবছর আমের উৎপাদন হয়েছিল প্রায় ৯ হাজার মেট্রিক টন। তবে এবছর বৃষ্টিপাত কম হওয়া এবং মৌসুমি বাতাসে আমের মুকুল ঝরে গেছে বেশির ভাগ। খরায় পুড়ে গেছে আমের মুকুল এবং ঝরে গেছে আমের গুটিও। গতবারের তুলনায় এবছর উৎপাদন ৩০ শতাংশ কমবে ধারণা করা হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলার মধ্যে বান্দরবান জেলায় রাংগোয়াই জাতের আমের চাষ সবচেয়ে বেশি। আমের এই জাতটি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি-থানছি সীমান্ত হয়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্র মিয়ানমার থেকে এদেশে প্রবেশ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রায় ১৫/২০ বছর আগে পাহাড়িরা এই আম মিয়ানমারের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে বান্দরবান নিয়ে আসে বলে স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। তবে এ ব্যাপারে কৃষি বিভাগের কাছেও সঠিক কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। মিয়ানমারের আমের এই জাতটি বান্দরবানসহ তিন পার্বত্য জেলায় স্থানীয়ভাবে বর্মি নাম অক্ষুণ্ন রেখে রাংগোয়াইসি বললেও চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলগুলোতে ভোক্তাদের কাছে এটি বার্মিজ আম নামে পরিচিত। মিয়ানমারের বার্মি ভাষায় রাংগোয়াই অর্থ বুকে শিরধারার মতো সেলাই আর ‘সি’ অর্থ ফল, অর্থাৎ রাংগোয়াইসি মানে ‘বুকসেলাই ফল’। সম্ভবত ফলের গড়নের সঙ্গে সাদৃশ্যের কারণেই এমন নামকরণ।
চিম্বুক পাহাড়ের আমচাষী ইয়োংরু ম্রো, চাংক্রান ম্রো জানান, তিন একর করে তাদের দুজনের ছয় একর পাহাড়ি জমিতে আমের বাগান রয়েছে। রাংগোয়াই আমের জাতটির পরিমাণ বেশি। তবে অনাবৃষ্টি খরা এবং তীব্র তাপদাহে এবছর আমের ফলন ততটা ভালো হয়নি। পোকার আক্রমণ কম হলেও আম আকারে ছোট হয়েছে। ফলন বিপর্যয়ে লোকসান কমাতে কাঁচা আম ছিঁড়ে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে কম মূল্যে। ফলন বিপর্যয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন অনেক আমচাষী।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সোহেল, সিরাজুল ইসলাম বলেন, রাংগোয়াই আগাম জাতের আমটির কদর বেশি থাকে বাজারে। এ বছরও ব্যতিক্রম হয়নি। রাংগোয়াই আমে ইতিমধ্যে সয়লাব হয়ে গেছে হাট-বাজারগুলো। পাহাড়িদের কাছ থেকে আমের বাগান কিনে নিয়ে স্থানীয় হাট-বাজারে বিক্রির পাশাপাশি চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরদের কাছেও সরবরাহ করি। তবে এবছর আশানুরূপ ফলন হয়নি।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক একেএম নাজমুল হক বলেন, বৈরী আবহাওয়ায় এবছর আমের ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় পানির অভাবে আমের মুকুল এবং ছোট থাকতেই অনেক ফল ঝরে গেছে। এতে প্রায় ত্রিশ শতাংশ আমের ফলন কমবে গত বছরের তুলনায়। আম আকারেও ছোট হয়েছে এবার। বৃষ্টিপাত মোটামুটি শুরু হওয়ায় বাকি ফলনগুলো টিকে যাবে মনে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে চাষীরা শেষ মুহূর্তে কিছুটা ক্ষতি পোষাতে পারবেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিএনপির বাজেট প্রতিক্রিয়া কাকাতুয়ার শেখানো বুলির মতো : তথ্যমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধঅগ্রিম করের আওতায় আসছেন হাইব্রিড গাড়ির মালিকরাও