আলোচিত মাহমুদা খানম মিতু খুনের মামলায় আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন এক নারী। তিনি মামলার অন্যতম আসামি কামরুল ইসলাম শিকদার প্রকাশ মুছার স্ত্রী পান্না আক্তার। মুছা বালু ব্যবসার পাশাপাশি পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করতেন।
সাক্ষ্যে পান্না আক্তার বলেন, ঘটনার কয়েকদিন পর মুছাকে ফোনে কথা বলতে শুনি। অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তিকে মুছা বলেন, স্যার আমি এটা করতে চাই নাই। আমার পরিবারের কোন সমস্যা হলে পুলিশের কাছে মুখ খুলতে বাধ্য হব। তখন মুছাকে জিজ্ঞেস করি, এটা কে? মুছা তখন বলেন বাবুল আক্তার স্যার। আরো বলি আপনি কী মিতু খুনে জড়িত ছিলেন? তখন মুছা বলেন, আমি চাই নাই, আমাকে বাধ্য করা হয়েছে। গতকাল চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ জসিম উদ্দিনের আদালতে হাজির হয়ে পান্না আক্তার এ সাক্ষ্য দেন। একপর্যায়ে মামলার প্রধান আসামি বাবুল আক্তারের আইনজীবীরা পান্না আক্তারকে জেরা করেন।
আদালতের কাছে দেওয়া সাক্ষ্যে পান্না আক্তার আরো বলেন, মিতু খুনের আগের দিন তার বাসায় কিছু লোক আসে। তারা কে বা কারা তা তিনি জানেন না। আগে দেখেননি। ঘটনার দিন টিভিতে মিতু খুনের সংবাদ পাই। তখন মুছাকে জিজ্ঞেস করি খুনের শিকার নারী মিতু কিনা! দেখতে যাব কী না! তখন মুছা বলেন, স্যার আসলে যাব। ঘটনার ৭–৮ দিন পর একটা ফোন কল আসে উল্লেখ করে পান্না আক্তার আরো বলেন, বলা হয় মুছা কোথায়? মুছাকে সাবধানে থাকতে বলবা। পান্না আক্তার বলেন, ২০১৬ সালের ২১ জুন বাবার বাড়ি রাঙ্গুনিয়া থেকে মুছাসহ নুর নবীর কাঠগড়ের বাসায় যাই। পরদিন ২২ জুন সেখান থেকে ডিবি পরিচয়ে মুছাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হয়। আজ পর্যন্ত কোন খবর পাইনি। স্বামী ছাড়া কিছুই নেই উল্লেখ করে পান্না আক্তার তার সাক্ষ্যে বলেন, দুটি বাচ্চা নিয়ে খুব কষ্টে দিন পারছি। মিতু খুনের বিচার হোক। মুছাকে হাজির করা হোক। মেরে ফেলা হলে লাশ বুঝিয়ে দেওয়া হোক।
আদালতসূত্র জানায়, মিতু খুনের মামলায় গত ১৩ মার্চ চার্জ গঠনের মাধ্যমে বিচারকাজ শুরু হয়। এর আগে গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর বাবুলসহ মামলার সাত আসামির বিরুদ্ধে মহানগর হাকিম আদালতে ২০ পৃষ্ঠার চার্জশিট দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক আবু জাফর মো. ওমর ফারুক।
চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, ২০১৩ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বাবুল আক্তার কঙবাজারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সেখানে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএনএইচসিআর কঙবাজার কার্যালয়ের কর্মী ও ভারতীয় নাগরিক গায়ত্রীর সঙ্গে পরিচয় হয় এবং তার সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। এ কারণে স্ত্রী মিতুর সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয়। এর জেরে তাকে খুনের সিদ্ধান্ত নেন বাবুল। একপর্যায়ে খুনিদের ৩ লাখ টাকায় ভাড়া করে মিশন শেষ করেন। পরে পরিকল্পনা মতো এ হত্যাকাণ্ডকে জঙ্গিদের কাজ বলে প্রচারণা চালানো হয়।
আদালতসূত্র আরো জানায়, মিতু খুনের পর ২০১৬ সালের ৪ জুলাই নগরীর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে মামলার অন্যতম আসামি কামরুল ইসলাম শিকদার প্রকাশ মুছার হদিস চেয়েছিলেন তার স্ত্রী পান্না আক্তার।। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে মুছাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি অস্বীকার করা হয়। প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন ও আর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় গুলি ও ছুরিকাঘাতে মিতুকে খুন করা হয়।












