একটি জাতির স্বাধীনতার ইতিহাস কল্পিত কাহিনি নয়। ইতিহাস যদিওবা পুরনো, পেছনের, তবুও তাকে কখনো অস্বীকার করার অবকাশ কারো নেই। ইতিহাস যথার্থ অর্থে জাতির অহংকার ও অর্জন। আন্তরিক আবেগে যাকে আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলে চিহ্নিত করি, তাতে একাকার হয়ে আছে গণতন্ত্র, সাম্য, অসামপ্রদায়িকতা, মুক্তি, মানবাধিকার ও বাঙালিত্বের ধারণা। একাত্তরের সেই বিজয় দিবসে আমার অনুভূতি–উপলব্ধির কথা আমি কখনোই অন্যদের মতো গুছিয়ে, সাজিয়ে লিখতে পারব না। ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালে আমরা যদি স্বাধীন না হতাম, তিরিশ লাখ প্রাণ আর প্রায় পাঁচ লাখ মা–বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে বিজয় অর্জিত না হতো, তাহলে আজও বাংলাদেশ পাকিস্তানের কলোনি হিসেবেই বিশ্বে পরিচিত হতো। সামাজিক–রাজনৈতিক–অর্থনৈতিক সব ক্ষেত্রেই আমরা বঞ্চিত থাকতাম। কোনো ক্ষেত্রেই আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারতাম না। আমরা থাকতাম লাঞ্চিত–শোষিত–বঞ্চিত। আমাদের বয়সী যেকোনো মানুষকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, তার জীবনের সবচেয়ে আনন্দময় দিন কোনটি? সে অবধারিতভাবে বলবে, সেটি হচ্ছে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। আমার মা বাবারা এই যুদ্ধ সরাসরি দেখেছে আর সেই গল্প আমরাও শুনেছি। তাদের শোনা গল্প থেকেই ভরসা নিয়ে বলছি বিজয় দিবস বাঙালি জাতির অহংকার। বাংলাদেশের পতাকার মধ্যখানে যে লাল বৃত্ত, সেটি সাধারণ মানুষের কাছে শুধু এক টুকরা লাল কাপড়, কিন্তু প্রতিটি যোদ্ধা জানে সেই লাল রং কোথা থেকে এসেছে, সেই লাল রঙে আমাদের সব আপনজনের বুকের রক্ত একটুখানি হলেও আছে। এ দেশের নতুন প্রজন্মের যারা দেশকে নিয়ে চিন্তাভাবনা করে তাদের সবার এই ছয়টি দফা একবার হলেও পড়ে দেখা উচিত, তাহলে তারা অবাক হয়ে আবিষ্কার করবে যে ছয় দফা আসলে একটি মাত্র দফা, যার আসল অর্থ হচ্ছে স্বাধীনতা।
নয় মাসের সেই যুদ্ধের ইতিহাস হচ্ছে আত্মত্যাগের ইতিহাস, বীরত্বের ইতিহাস আর অর্জনের ইতিহাস। বিজয় দিবসের প্রাক্কালে নতুন প্রজন্মের কাছে আমার শুধু একটি মাত্র প্রত্যাশা, যেটুকু পেয়েছি সেটি যেন কোনোভাবে আবার হারিয়ে না ফেলি।