গ্রাম আমার আবেগের জায়গা। কাদা পানি গায়ে লেগে আছে। শৈশবের বাউণ্ডুলিপনায় কেটেছে অর্ধেক জীবন। গ্রামের বাসিন্দারা বেশিরভাগ এখনো সেকেলে কিন্তু ওরা প্রকৃত মানুষ। যারা সকালে উঠে মাঠে যায় শস্য ফলাতে। খরস্রোতা নদীর অববাহিকায় সূর্যের তাপ বৃদ্ধির সাথে সাথে সমানতালে কাজ করে ওরা। ঘামে ভেজা শরীর নিয়ে গাছের আড়ালে গা এলিয়ে দেয় নির্মল বাতাস খেতে। হাজারো পাখির কলকাকলীতে চারপাশ অদ্ভুত পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এসব দুচোখ ভরে যখন দেখি স্বর্গসুখ খুঁজে পাই। আবার জমির আইল ধরে যখন হাঁটি, অজানায় মিশে যাই। হাঁটতে হাঁটতে দাঁড়িয়ে তৃপ্তি নিয়ে যখন দুচোখ বন্ধ করে শান্তির নিঃশ্বাস ফেলি! মনে হয় অন্য এক পৃথিবীতে আছি। এ যেন এক মায়া, হৃদয় গভীরের অদৃশ্য টান।
গ্রাম নিয়ে ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখি একদিন আলোর প্রদীপ জ্বালাবো। ধর্মান্ধতা, গোঁড়ামি, কুসংস্কারাচ্ছন্ন যুক্তিবোধহীন গ্রাম থেকেই পুনর্জাগরণ শুরু করবো। এখানেও একদিন সবাই সৃজনশীলতার চর্চা করবে। আধুনিকতার সাথে চলতে শিখবে। বাঙালি সংস্কৃতিকে হৃদয়ে ধারণ করবে। এখানকার অপরাধের মূল কারণ কিশোর গ্যাং এর দৌরাত্ম। সচেতনরা এগিয়ে এলে এসবের সাথে যারা জড়িত ধীরে ধীরে কমে যাবে। দায়িত্ব নিয়ে সামনে আসতে হবে। তাদের নিয়েই স্বপ্ন পূরণ করবো। হয়তো স্বপ্ন দেখতে দেখতে না ফেরার দেশে চলে যেতে পারি। কিন্তু অন্য একজনের মাঝে মননশীল চর্চার বীজ বপন করতে পারবো। সে স্বপ্ন দেখবে। এরপর আরেকজন। এভাবে একদিন আমার গ্রাম মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে কথা বলবে। একেকজন প্রজন্ম তৈরি হবে বিশ্বকে কাঁপন ধরিয়ে দিতে।
সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে প্রত্যেকটা গ্রাম শহরে পরিণত হচ্ছে। শহরে জলাবদ্ধতা, অপরিকল্পিত নগরায়ন, যত্রতত্র খোলা ড্রেইন দূষিত আবহাওয়ার দুর্গন্ধে নাকাল বিশাল জনগোষ্ঠী। মানুষ চিন্তা করছে ইট–পাথরের শহরে থাকবে কিনা। গ্রামের মানুষ শহরে বসবাস করছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য সহ অন্যান্য সুবিধা পেতে। অনেকে দেখা যায় গ্রামের জন্মভিটা ফেলে বছরের–পর–বছর শহরে গিয়ে বসবাস করছে। তালাবদ্ধ বাড়িটা শুধু শুধু পড়ে আছে অসহায়ের মতো। আপন নীড়ে মানুষ বসবাস করুক এটাই কাম্য হওয়া উচিত। পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য নব প্রজন্মকেই ধারণ করতে হবে। গ্রামের উন্নয়নে প্রতিদিন নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারের পাশাপাশি নতুন প্রজন্ম যদি এই উন্নয়নের কাজে অংশীদার হয় তাহলেই সম্ভব সবুজ–শ্যামল গ্রামের সত্যিকারের চেহারা পরিবর্তন সম্ভব হবে।