সমাজ সেবায় এ বছর একুশে পদক পাচ্ছেন বৌদ্ধদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় গুরু সংঘরাজ ড. জ্ঞানশ্রী মহাস্থবির। তিনি নন্দনকাননস্থ ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ। একুশে পদকে মনোনীত হওয়ায় অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে ড. জ্ঞানশ্রী মহাস্থবির বলেন, এখন পর্যন্ত বহু পুরস্কার-সম্মাননা পেয়েছি। তবে শেষ বয়সে এসে রাষ্ট্রীয় এই স্বীকৃতি আমার কাছে অন্যরকম এক সম্মান। আমাকে এই সম্মানটুকু দেয়ায় সরকারের সংশ্লিষ্ট সব মহলকে ধন্যবাদ জানাই। সমাজের জন্য যারা নীরবে-নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছেন, তাঁদের স্বীকৃতি-সম্মান দেয়া হলে আরো অনেকেই সেবামূলক কাজে এগিয়ে আসবেন।
ব্যক্তিগত পরিচিতি : ১৯২৫ সালে রাউজানের উত্তর গুজরা ডোমখালী গ্রামে জন্ম। গৃহী নাম ছিল লোকনাথ বড়ুয়া। বাবা প্রেম লাল বড়ুয়া ও মা মেনেকা রানী বড়ুয়ার ঘরে জন্ম নেয়া সে-ই লোকনাথ বড়ুয়াই বর্তমানে বাংলাদেশি বৌদ্ধদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় গুরু ও ত্রয়োদশ সংঘরাজ ড. জ্ঞানশ্রী মহাস্থবির। জন্মের পর কিশোর বয়সেই মাকে হারান তিনি। ১৯৪৪ সালে উপ সংঘরাজ ভদন্ত গুণালঙ্কার মহাস্থবিরের নিকট জোবরা গ্রামে শ্রামন্য ধর্মে দীক্ষা নেন। গুরু ভান্তে তার নাম রাখেন ‘জ্ঞানশ্রী’। যার অর্থ-চমৎকার জ্ঞানের সৌকর্য। পাঁচ বছর পর ১৯৪৯ সালে গুরু গুণালঙ্কার মহাস্থবিরের উপাধ্যায়ত্বে উপসম্পদা লাভ করেন। বর্তমানে তাঁর বয়স ৯৭ বছর। আর প্রবজ্জ্যা ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার বয়স ৭৭ বছর। এই দীর্ঘ ভিক্ষুত্ব জীবনে দেশ-বিদেশে তাঁর পাঁচ শতাধিক শিষ্য-প্রশিষ্য রয়েছেন। তাঁর নিজস্ব অর্থায়নে উত্তরবঙ্গসহ চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামে ২০টির মতো অনাথ আশ্রম রয়েছে। যেখানে এ পর্যন্ত অসংখ্য দরিদ্র পরিবারের সন্তান থাকা-খাওয়াসহ বিনামূল্যে পড়ালেখার সুযোগ পেয়েছে। অনেক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন তিনি। এর বাইরে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উচ্চ বিদ্যালয়ও প্রতিষ্ঠা হয়েছে তাঁর হাত ধরে। সর্বশেষ বৌদ্ধ শাসন কল্যাণ ট্রাস্ট নামে একটি ট্রাস্ট গঠন করেছেন। এই ট্রাস্টে নিজের প্রায় আড়াই কোটি টাকা দান করেছেন তিনি।