আমাদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন রাখার চেষ্টা চলছে : আনিসুল

| রবিবার , ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ১০:১১ পূর্বাহ্ণ

স্থানীয় সরকার নির্বাচনসহ ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে ২০১৪ সালে নির্বাচিত সরকারকে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন দল বৈধতা দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। আওয়ামী লীগ সরকারকে বৈধতা দেওয়ার যে দোষ জাতীয় পার্টিকে দেওয়া হচ্ছে, বিএনপিজামায়াত সেই দোষের ভাগীদার বলেও মন্তব্য করেন তিনি। গতকাল শনিবার দুপুরে গুলশানের হাওলাদার টাওয়ারে আয়োজিত দলটির সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ১৪ সনে আমরা যে নির্বাচন করেছি সেটা ২০০৮ সালের একটা বৈধ নির্বাচিত সরকারের অধীনে।

বিএনপি ও জামায়াত সেই সংসদে থাকতেই সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের বিষয়টি তুলে ধরে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, সেই ২০১৪ সালের নির্বাচিত সরকারের অধীনে স্থানীয় সরকার, সিটি কর্পোরেশন থেকে আরম্ভ করে উপজেলা, প্রত্যেকটা নির্বাচন আপনারা করেছেন। আপনারা প্রত্যেকেই করেছেন। তাহলে বৈধতা আমরা দিয়েছি ১৪ সালের নির্বাচিত সরকারকে? ১৪ সালের নির্বাচিত সরকারের অধীনে আপনারা নির্বাচন করেছেন, আপনারা বৈধতা দিয়েছেন। ২০১৮ সালে কেন নির্বাচন করলেন তাদের অধীনে? সব পার্টি এবং বিএনপি থেকে যারা নির্বাচিত হয়েছিল তারা তো পার্লামেন্ট বর্জন করেননি। তারা সেই পার্লামেন্টেদোষ শুধু আমাদের। যেই দোষ আমাদের উপর দিচ্ছেন, সেই দোষের বড় ভাগীদার হচ্ছেন আপনারা।

বিভিন্ন রাজনৈতিক দল কর্তৃক জাতীয় পার্টির কার্যক্রম নিষিদ্ধকরণের দাবি ও চলমান জাতীয় রাজনীতি সম্পর্কে জাতীয় পার্টির অবস্থান জাতির সামনে তুলে ধরতে’ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলটির একাংশের চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ যে, আমরা আওয়ামী লীগের সহযোগী ছিলাম। আমরা সেখান থেকে সুবিধা পেয়েছি। এই কথাগুলো বলে আমাদেরকে জাতীয় যে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া চলছে, সেই প্রক্রিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন রাখার একটা চেষ্টা চলছে। যারা অভিযোগ দিচ্ছেন, তারা সেই অভিযোগের চেয়েও বড় বড় অভিযোগে অভিযুক্ত বলে আমি মনে করি।

জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে মিথ্যা হিসেবে তুলে ধরে সেগুলোর উত্তর দেওয়ার সময় এসেছে বলে মনে করেন তিনি। আনিসুল ইসলাম বলেন, ২০০৮ সনে আমরা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাথে সহযোগিতা করেছি। কি সহযোগিতা করেছি? আমরা নির্বাচন করেছি। ২০০৮ সালে প্রত্যেকটা পার্টি নির্বাচন করেছে। জামায়াতে ইসলাম, বিএনপি এবং অন্যান্য দল সকলেই সেদিন নির্বাচন করেছে, আমরাও নির্বাচন করেছি। নির্বাচন যখন হয় তখন প্রত্যেকটা দল তার নির্বাচনি কৌশল ঠিক করে। কার সাথে আমি নির্বাচন করব? আজকে যারা মাঠে আছে যেসব রাজনৈতিক দল, তারা কি নির্বাচনের জোটে যাচ্ছেন না? নির্বাচনের জোট কি কেবল আপনার মতাদর্শের ভিত্তিতে হয়? জোট হয়? মতাদর্শের সঙ্গে আমার কৌশল কীভাবে আমি সবচেয়ে বেশি নির্বাচনি আসন জয়যুক্ত হতে পারব।

তিনি বলেন, ২০১৪ সালে নির্বাচন হয়েছিল ২০০৮ সালের নির্বাচিত সরকারের অধীনে, সে সময় সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বদলানো হয়েছে। তখন বিএনপি ও জামায়াত ওই সংসদে ছিল, কই তারা যদি সে দিন সংসদ থেকে পদত্যাগ করে বের হয়ে আসতেন, তাহলে আজকে বলতে পারতেন। সে দিন তো বিএনপি ও জামায়াত সংসদ থেকে বের হয়ে যায়নি। আর দোষ হয় জাতীয় পার্টির।

জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান বলেন, জামায়াতে ইসলামী তাদের নেতৃত্বে কয়েকটা দফা দিয়েছে। তার মধ্যে একটি দফা হচ্ছে জাতীয় পার্টির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা। আমি আশ্চর্য হয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে অনেকে, অনেক সময় অনেক অভিযোগ এনেছেন। আমরা কিন্তু কোনো দিন তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা বা পার্টি হিসেবে নিষিদ্ধ করা, এইটা কখনো বলিনি। কখনো এইটাকে আমরা সাপোর্টও করিনি।

বিলুপ্ত দ্বাদশ সংসদে চট্টগ্রাম৫ আসনে জাতীয় পার্টির এই এমপি দাবি করেন, দলটিকে নির্বাচন থেকে বাইরে রাখার প্রক্রিয়া নতুন নয়। কোনো দলকে বাদ দিয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হলে তা আগের বারের নির্বাচনের মতো একপেশে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তার মতে, ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে কেউ প্রধান বিরোধী দল হতে চায়, কেউ সরকার গঠন করতে চায়, সেই অঙ্ক করে, জাতীয় পার্টির ওপর দায় চাপিয়ে দেশে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে।

শেখ হাসিনা সরকারে মন্ত্রীর পদ পাওয়া জাতীয় পার্টির একাংশের এই নেতা বলেন, আপনারা মনে করছেন কোনোমতে একটি নির্বাচন হয়ে গেলে সবকিছুর সমাধান হয়ে যাবে। আমরাও মনে করি, নির্বাচন ছাড়া কোনো সরকার গঠন করা যায় না। তবে নির্বাচনেই কি একমাত্র উত্তর? মুসোলিনি, হিটলার ওনাদের নির্বাচিত সরকার ছিল। তারা নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু তারা ফ্যাসিবাদ করেছেন। যেনতেন নির্বাচন হলে হবে না। নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হতে হবে, নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্য হতে হবে, নির্বাচন স্বচ্ছ হতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির এ অংশটির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার। সেখানে উপস্থিত ছিলেন, দলটির নেতা মুজিবুল হক চুন্নু, কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধউন্নয়ন কাজ অর্ধসমাপ্ত, কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর দুর্ভোগ
পরবর্তী নিবন্ধগন্ডামারায় চর ও ঝাউবাগান থেকে কাটা হচ্ছে মাটি