হেফাজতে ইসলামের নতুন যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক বলেছেন, “আমাদের বক্তব্য ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে, কোনোভাবেই বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে নয়।”
প্রতিবাদের মুখে হাটহাজারীর মাহফিলে যেতে না পারলেও রাজধানী ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতার ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি। বিডিনিউজ
আজ রবিবার (২৯ নভেম্বর) দুপুরে পুরানা পল্টনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
মামুনুল এ সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব এবং বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি।
তার বক্তব্য নিয়ে অপপ্রচার হচ্ছে মন্তব্য করে এই হেফাজত নেতা বলেন, “স্বাধীনতার মহান নেতা ও স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মুসলিম নেতা হিসেবে আমি পরিপূর্ণ শ্রদ্ধা করি এবং তার রুহের মাগফেরাত কামনা করি। কখনো কোনোভাবেই এমন একজন মরহুম জাতীয় নেতার বিরুদ্ধাচরণ করি না এবং করাকে সমীচীন মনে করি না।”
গত ১৩ নভেম্বর ঢাকার গেণ্ডারিয়ার ধূপখোলার মাঠে ‘তৌহিদী জনতা ঐক্যপরিষদের’ ব্যানারে এক সমাবেশ থেকে মুজিববর্ষ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করা হয়।
একই দিনে রাজধানীর বিএমএ অডিটরিয়ামে বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিস ঢাকা মহানগরীর উদ্যোগে শানে রিসালাত কনফারেন্সে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ও বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা মামুনুল হকও প্রকাশ্যে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করেন।
হাটহাজারীতে গত শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) এক মাহফিলে অংশ নিয়ে বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিল মামুনুলের কিন্তু স্থানীয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ তাকে প্রতিহত করার ঘোষণা দিলে তাকে ছাড়াই মাহফিল হয়।
ঐ মাহফিলের প্রধান অতিথি হেফাজতে ইসলামের আমীর জুনাইদ বাবুনগরী হুমকি দেন, যেকোনো দল ভাস্কর্য বসালে তা ‘টেনে হিঁচড়ে ফেলে দেওয়া’ হবে।
আজ রবিবারের সংবাদ সম্মেলনে মামুনুল বলেন, “ঢাকার ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের ইস্যু নিয়ে কিছুদিন ধরে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে শান্তিপ্রিয় ইসলামপ্রেমী তৌহিদী জনতা। স্বাভাবিকভাবে ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে মানুষ কিংবা প্রাণীর ভাস্কর্য নির্মাণ অনৈসলামিক সংস্কৃতি হওয়ায় আলেম সমাজ এর প্রতিবাদ করেছে। সেই সূত্রে আমিও ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করে আমার বক্তব্য তুলে ধরেছি। কিন্তু সুকৌশলে একটি মহল ভাস্কর্য নির্মাণের এই বিরোধিতাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরোধিতা বলে আখ্যায়িত করার চেষ্টা করছে। এ্ বিষয়ে আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, মহল বিশেষের এই অপচেষ্টা উদ্দেশ্যমূলক।”
খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মামুনুল দাবি করেন, তিনি নিজে বা তার দল কোনো রাজনৈতিক জোটের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়।
তিনি বলেন, “আমাদের এমন স্পষ্ট রাজনৈতিক অবস্থান থাকা সত্ত্বেও লক্ষ্য করছি যে একটি মহল ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমি ব্যক্তি মামুনুল হককে সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়ার পাঁয়তারা চালাচ্ছে৷ আর এজন্য জামায়াত-শিবিরের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের অমূলক ও কল্পিত অভিযোগ আমার ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে৷ আমি এই ষড়যন্ত্রের তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছি৷”
খেলাফত মজলিসের প্রতিষ্ঠাতা আমির ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আজিজুল হকের ছেলে মামুনুল বলেন, “অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে, আমার বিরুদ্ধে নানামুখী ষড়যন্ত্র দানা বাঁধছে৷ ভুল তথ্যের ভিত্তিতে প্রশাসনকে আমার বিরুদ্ধে উসকে দেওয়া হচ্ছে৷”
আজিজুল হক এবং চরমোনাইয়ের পীর সৈয়দ ফজলুল করিমের বিরুদ্ধে ‘কটূক্তি ও বিষোদ্গার’ করার অভিযোগ এনে এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপও চান মামুনুল হক।
সেই সঙ্গে গত শুক্রবার ঢাকার কাকরাইলে তার সমর্থকদের মিছিল থেকে গ্রেপ্তার মাদ্রাসা ছাত্রদের মুক্তি দেওয়ারও দাবি জানান তিনি।
দলের রাজনৈতিক অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মামুনুল বলেন, “আমার বাবা উপমহাদেশের প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ এবং বাংলাদেশের একজন বর্ষিয়ান জাতীয় নেতা মরহুম শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক যিনি চারদলীয় জোটের শীর্ষ চার নেতার একজন ছিলেন। তার দেওয়া আদর্শিক ৫ দফার সাথে একমত হয়েই ২০০৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সাথে সমঝোতা চুক্তি করেছিল।”
আজিজুল হক চিরকাল ভারতীয় উপমহাদেশে দেওবন্দী ধারার প্রতিনিধিত্ব করে গেছেন মন্তব্য করে তার ছেলে মামুনুল বলেন, “আমিও সেই ধারারই একজন রাজনৈতিক কর্মী৷ … কোনো ষড়যন্ত্র অথবা গোপন আঁতাতের মাধ্যমে দেশ, রাষ্ট্র কিংবা সরকারবিরোধী কোনো কর্মসূচি আমাদের নেই৷”