আজকে শিশুরা হারিয়ে ফেলেছে শৈশব। আমরা সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছি অনেক আগে। এখন বিচ্ছিন্ন পরিবার থেকে সর্বোপরি নিজের কাছ থেকে। ‘অদ্ভুত আধার’ এক ঘনিয়ে আসছে আমাদের চারপাশে। বইয়ের বদলেই বই, জ্ঞানের বদলে তথ্য। ছাপা বইয়ে মগ্ন হওয়ার অভ্যাস কমছে, বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের কাছে। প্রযুক্তি চাইছে নিত্য নতুন তথ্য আমাদের ও আমাদের ছেলে মেয়েদের মগজগুলোতে ঠেসে ভরে দিতে। বিজ্ঞান বলছে, মাত্রাতিরিক্ত তথ্যের ধাক্কায় মগজের নেটওয়ার্ক সেভাবে বাড়ছে না। মগজে ফুটে ওঠছে নতুন নতুন চোখ। যে চোখ জ্ঞান বাড়ায়, সে চোখ তৈরী হয় নিয়মিত নানান ধরনের ছাপা বই পড়লে। দিন দিন বড় হচ্ছে আমাদের স্মাট টিভি, স্মাট ফোন ও নানান ধরনের ইলেকট্রিক ডিভাইস। ছোট হচ্ছে বইয়ের তাক ও লাইব্রেরি। আমাদের সন্তানদের ঘন্টার পর ঘন্টা সময় কাটছে অনলাইনে স্মাট ফোন ও ল্যাপটপে। বিশেষকরে টিনেজারদের এই আসক্তি নানান শারিরীক ও মানসিক জটিলতা বাড়াচ্ছে। অনলাইনে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনার প্রভাব সমাজে অসামাজিক কার্যকলাপ, মানসিক বিকৃতি ও বিশৃঙ্খলা ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলছে। মানুষ সামাজিকতা হারাচ্ছে, হয়ে যাচ্ছে নিসঙ্গ। বাইরের জগত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে প্রযুক্তির দাস হয়ে পড়ছে। বন্ধুদের সাথে আড্ডার বদলে চ্যাট, আনন্দের বদলে যৌনতা, বই পড়া ছেড়ে স্মার্ট ফোন আর নেটে মৌমাত! শিশুরা দাদী নানীর কাছে, ‘ঘুমপাড়ানি গান’, ‘ঠাকুরমার ঝুলি’ শোনা হারিয়ে ফেলেছে কবে। তার বদলে জায়গা করে ইলেকট্রিক ডিভাইস, ট্যাব ও স্মার্ট ফোন আসক্তি। শিশুরা তৈরী হতে পারছে না, ভেঙে চুরমার হচ্ছে সুকুমার বৃত্তিগুলো। প্রযুক্তির হাত ধরে অতিদ্রত বড়দের জগতে ঢুকে পড়ছে শিশুমন। শিশুরা হারিয়ে ফেলছে আনন্দ, বাড়ছে বিষাদ। দিন দিন ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছে শিশুরা। ওদের মধ্যে দেখা দিচ্ছে আগ্রাসী ও আক্রমণাত্বক আচরণ। যুবকদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে, হয়ে যাচ্ছে একরোখা ও অস্তির স্বভাবের, নিজেদের জড়াচ্ছে কিশোর গ্যাং এর মতো অপরাধচক্রে।
আমাদের ছেলে মেয়েদের সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখতে চাইলে পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি ওদের বয়সের উপযোগী বই হাতে তুলে দিতে হবে। আমাদের নিজেদেরও বই পড়ার অভ্যাস রাখতে হবে, কারণ ছোটোরা সবসময় অনুকরণ প্রিয়। বড়দের দেখে ওরা শিখে। সুখে, দুঃখে, অবসরে, নিভৃতে, ভ্রমণে বইকে সঙ্গী করা, বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা। বইয়ের চেয়ে বড় কোনো বন্ধু নেই।