জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেছেন, আমরা সৌভাগ্যবান যে, আমাদের একজন বেগম রোকেয়া আছেন। তিনি তাঁর সময়ের প্রতিকূলতা জয় করে নারীদের জন্য কিছু করার কথা ভেবেছেন, সমাজে নারীদের মর্যাদার আসন দেওয়ার জন্য কাজ করেছেন। আমাদের মেয়েরা প্রত্যেকেই একেকজন রোকেয়া। যারা সাফল্য পেয়েছেন তাঁরা দীর্ঘ সময় ধরে অনেক পরিশ্রম করে সফল হয়েছেন। এমন নয় যে, গতকাল শুরু করে আজই সফল হয়েছেন। আমাদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে, সেসব পেরিয়ে তারা সফল হয়েছেন। আবার অনেকে মাঝপথে থেমে গেছেন, সফল হতে পারেননি। আমরা যারা নারীদের জন্য কাজ করছি, আমাদের দায়িত্ব হলো এদেরকে হারিয়ে যেতে না দেওয়া। সামনে তুলে আনা, সফল হতে সহযোগিতা করা। জেলা প্রশাসন ও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বেগম রোকেয়া দিবস–২০২৫ উদযাপন উপলক্ষ্যে গতকাল জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা ও অদম্য নারী পুরস্কার–২০২৫ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ নাজির আহমেদ খাঁন। সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. শরীফ উদ্দিন।
জেলা প্রশাসক বলেন, জীবন একবারই পাওয়া যায়। এই জীবনেই আমাদেরকে সফল হতে হবে। এজন্য কষ্ট করতে হবে, পরিশ্রম করতে হবে। এমন নয় যে, জীবন বারবার ফিরে পাব। একটা জীবন কোনোভাবে পার করে দিলেও পরেরবার জীবনকে সাজিয়ে নেব, সুন্দর করে শুরু করব। কাজেই আমাদের ভালো কিছু করার জন্য এই একটা জীবনকেই সুন্দর করে তুলতে হবে। কঠোর পরিশ্রম ও ইচ্ছাশক্তিকে জাগিয়েই তা করা সম্ভব হবে। নিজের মধ্যে অদম্য মনোভাব থাকতে হবে। বেগম রোকেয়া যদি পারেন, তবে আমরা কেন পারব না?
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপপরিচালক আতিয়া চৌধুরী। পরে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্মিত বেগম রোকেয়া দিবসের বিশেষ ডকুমেন্টারি ‘আমি–ই রোকেয়া’ প্রদর্শন করা হয়। এরপর চট্টগ্রাম জেলা পর্যায়ে ৪ ক্যাটাগরিতে অদম্য নারী পুরস্কারপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করা হয় এবং তাদের সংক্ষিপ্ত জীবনবৃত্তান্ত উপস্থাপন করা হয়। চার ক্যাটাগরিতে অদম্য নারী পুরস্কার ২০২৫ পেয়েছেন অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী বোয়ালখালী পৌরসভার পূর্ব গোমদন্ডি এলাকার শিপ্রা দাশ, শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী সাতকানিয়ার বাজালিয়া এলাকার আসমা আকতার রুনা, সফল জননী সন্দ্বীপ উপজেলার মগধরা এলাকার রেজিয়া বেগম এবং নির্যাতনের দুঃস্বপ্ন মুছে জীবন সংগ্রামে জয়ী নারী সাতকানিয়া উপজেলার পশ্চিম গটিয়াডেঙ্গা এলাকার জান্নাতুল আদন। অদম্য নারী পুরস্কারপ্রাপ্তরা তাদের অনুভূতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন।
বিশেষ অতিথি পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ নাজির আহমেদ খাঁন বলেন, অদম্য নারী পুরস্কারপ্রাপ্তদের জীবন সংগ্রাম ও তাদের বক্তব্য শুনে অনুপ্রাণিত হয়েছি। তিনি বলেন, সময় ও পরিস্থিতির প্রয়োজনে একজন বেগম রোকেয়ার জন্ম হয়েছে। আমি যে কাজ করি তার চেয়ে আমার স্ত্রীর কাজগুলো অনেক কঠিন এবং অনেক বেশি পরিশ্রমের।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. শরীফ উদ্দিন উপস্থিত সবাইকে নিজের পরিবারের সন্তানদের প্রতি কোনো ধরনের বৈষম্য না করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, পরিবারে আমরা যদি সহিংসতা ও বৈষম্য দূর করে সন্তানদের সুশিক্ষিত করতে পারি তাহলে রাষ্ট্র সুনাগরিক পাবে এবং দেশ এগিয়ে যাবে। অনুষ্ঠানে অদম্য নারী পুরস্কারপ্রাপ্তদের ক্রেস্ট ও সনদ প্রদান করা হয়।












