আমরা ছিলাম কসাইখানায়, এক জীবন্ত নরকে

| বুধবার , ১৫ অক্টোবর, ২০২৫ at ৫:০২ পূর্বাহ্ণ

ইসরায়েলে বন্দিজীবন থেকে মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনিরা নিজ নিজ ঘরে ফিরছেন। গাজায় ফেরার পর নিজেদের পরিবারপরিজনদের দেখে তারা আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়ছেন। অনেকেই ছেড়ে আসা দিনগুলো নিয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন। জানিয়েছেন বন্দি থাকা অবস্থায় তাদের রাখা হতো কসাইখানায়। সেখানে তাদের ঠিকমতো খাবার দেওয়া হতো না। নিয়মিত নির্যাতন করা হতো। ঘুমানোর সময় তোশক পর্যন্ত দেওয়া হতো না। আবদাল্লাহ আবু রাফি নামে সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত এক ফিলিস্তিনি নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, আমরা কোনো কারাগারে ছিলাম না, বরং এক কসাইখানায় ছিলাম। দুঃখজনকভাবে সেই কসাইখানার নাম ওফের কারাগার। সেখানে অনেক তরুণ এখনও বন্দি। পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ। কোনো তোশক নেই, তারা সবসময় তোশকগুলো কেড়ে নেয়। খাবারের অবস্থা করুণ, প্রতিদিনই নতুন যন্ত্রণা। আমরা ছিলাম এক জীবন্ত নরকে। খবর বাংলানিউজের। ইয়াসিন আবু আমরা নামে আরেক বন্দি ইসরায়েলি কারাগারের পরিস্থিতিকে বর্ণনা করেন ‘অত্যন্ত ভয়ানক’ বলে। তিনি বলেন, খাবার, নির্যাতন, মারধরসবকিছুই অমানবিক ছিল। খাওয়ার বা পান করার মতো কিছুই ছিল না। আমি টানা চার দিন কিছু খেতে পারিনি। মুক্তির পর আমাকে দুটি মিষ্টি দেওয়া হয়, আর আমি সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো খেয়ে ফেলি। গত সোমবার মুক্তি পাওয়া আরেক ফিলিস্তিনি সাঈদ শুবাইর বলেন, এই অনুভূতি বর্ণনাতীত। জেলের বারের ফাঁক ছাড়া সূর্য দেখা, অমূল্য অনুভূতি। হাতের শিকল খুলে গেছে। স্বাধীনতার মূল্য কোনো কিছুর সঙ্গে তুলনীয় নয়।

দীর্ঘ ১৯ মাস বিনা অভিযোগে ইসরায়েলি কারাগারে আটক থাকার পর মুক্তি পেয়েছেন সাংবাদিক ইব্রাহিম আলখালিলির ভাই মোহাম্মদ আলখালিলি। মুক্তির পর নিজের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে মোহাম্মদ বলেন, এটা ছিল এক ভয়াবহ সংগ্রাম। আমাদের মারধর করা হয়েছে, অপমান করা হয়েছে। আমরা অসীম কষ্ট সহ্য করেছি। কিন্তু আল্লাহর অশেষ কৃপায় সবকিছু এখন শেষ হয়েছে।

মুক্তিপ্রাপ্ত ইয়াসির আবু তুরকি বলেন, এটা যেন নরক থেকে স্বর্গে ফেরা। আমি আমার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি নাএতে ব্যথা আছে, আনন্দ আছে, আর আছে এক অদ্ভুত কাঁপুনি।

১৯ বছর পর ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন ফিলিস্তিনি ঔপন্যাসিক ও সাহিত্যিক বাসিম খানদাকজি। মুক্তি মিললেও ইসরায়েল তাকে নির্বাসিত করেছে মিসরে। ৪১ বছর বয়সী এই লেখক গতকাল মিসরে পৌঁছান। ২০০৪ সালে ২১ বছর বয়সে তেলআবিবে এক বোমা হামলার ঘটনায় তাকে আটক করে ইসরায়েল। পরে আদালত তাকে তিন মামলায় আজীবন কারাদণ্ড দেয়।

ইসরায়েলি কারাগার থেকে সোমবার মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনিদের তালিকায় ছিলেন অন্তত ৫৫ জন স্বাস্থ্যকর্মী। এখনো অন্তত ১১৫ জন ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্যকর্মী ইসরায়েলি হেফাজতে রয়েছেন।

ইসরায়েল সামপ্রতিক সময়ে প্রায় ২৫০ জন আজীবন সাজাপ্রাপ্ত ও দীর্ঘমেয়াদি সাজাভোগকারী ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিয়েছে। পাশাপাশি গাজা যুদ্ধ চলাকালীন যাদের আটক করা হয়েছিল, সেই ১ হাজার ৭১৮ জনকেও মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমাদাগাস্কারে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করলো সেনাবাহিনী
পরবর্তী নিবন্ধযোগ্য নেতৃত্বের পক্ষে ব্যাপক জনমত গড়ে তুলতে হবে