আমরা কেন জিম্মি হব আমাদের কী দোষ

প্রশ্ন সাধারণ মানুষের

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ৬ নভেম্বর, ২০২১ at ৮:৪৮ পূর্বাহ্ণ

‘সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে। পরিবহন চালক-মালিকদের উচিত সরকারের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধান করা। কিন্তু কোনো আলোচনা ছাড়াই পরিবহন ধর্মঘট কেন? এটা তো উচিত না। ধর্মঘটের নামে আমাদের কেন জিম্মি করা হবে? আমাদের কী দোষ?’ গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে শুরু হওয়া পরিবহন ধর্মঘটের প্রভাবে দুর্ভোগে পড়া জামশেদুল ইসলাম নামে ক্ষুদ্ধ এক যাত্রী এভাবেই নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। শুধু জামশেদ নয়, তার মত আরো অনেকেরই একই প্রশ্ন, জনগণকে কেন জিম্মি করা হবে?
সাধারণ মানুষের উত্থাপিত প্রশ্নের সতত্য মিলেছে পরিবহন সংগঠনগুলোর বিগত দিনের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে। দেখা গেছে, কেবল তেলের দাম বৃদ্ধি নয়, বিভিন্ন সময়ে নিজেদের দাবি আদায়ের জন্য যাত্রীদেরকেই হাতিয়ার বানায় পরিবহন সংগঠনগুলো। বার বার সাধারণ মানুষকে জিম্মি করলেও প্রশাসন বা সরকার কোনো দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয় না তাদের বিরুদ্ধে। ফলে যখন-তখন যাত্রীদের জিম্মি করে ধর্মঘটের নামে দাবি আদায়ের কৌশলে পথে হাঁটে তারা। যেমন করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির সময় সরকার গণপরিবহনে ভাড়া ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি করেছিল। তবে শর্ত ছিল যাত্রী পরিবহন করতে হবে অর্ধেক। ছিল স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে নানা নির্দেশনাও। পরিবহন মালিকরা শর্তগুলো তো মানেই নি। উল্টো ৬০ শতাংশের পরিবর্তে দ্বিগুণ ভাড়া আদায়ের অভিযোগ ছিল। তখন যাত্রীরা এক ধরনের জিম্মি ছিল পরিবহন চালকদের কাছে।
এদিকে গত ৭ অক্টোবর নগরের অলংকার মোড় থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগে র‌্যাবের হাতে পাঁচজন লাইনম্যানকে আটক করে র‌্যাব। এরপর আকস্মিক ধর্র্মঘট করেছিল পরিবহন শ্রমিকদের একটি অংশ। সেদিন শহরের ১২ রুটে যান চলাচল বন্ধ থাকায় অসহনীয় দুর্ভোগ হয়েছিল যাত্রীদের।
২০১৯ সালের ৪ আগস্ট বাড়তি ভাড়া নেয়ার অভিযোগে চারটি গাড়িকে ৩৬ হাজার টাকা জরিমানা করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত। এর প্রতিবাদে ওইদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা-বেনাপোলসহ দেশের ৬৮ রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। পরে জেলা প্রশাসনের সাথে বৈঠকে বিষয়টির সুরাহা হলে চার ঘণ্টা পর প্রত্যাহার করা হয় ধর্মঘট। তখন ঈদের মৌসুম হওয়ায় বাড়ি ফেরত যাত্রীদের দুর্ভোগ ছিল অবর্ণনীয়।
এছাড়া ২০১৯ সালের ১৪ জানুয়ারি দুই পরিবহন শ্রমিক নেতাকে মারধরের অভিযোগে ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট ঘোষণা করে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন চট্টগ্রাম আঞ্চলিক শাখা। একই বছরের ৮ সেপ্টেম্বর থেকে নয় দফা দাবিতে চট্টগ্রাম বিভাগে পরিবহন ধর্মঘট পালন করেছিল পরিবহন মালিকদের ১৪টি সংগঠন। ২০১৭ সালের ৩ ডিসেম্বর ১১ দফা দাবিতে নগরে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট ঘোষণা করেছিল চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন গণপরিবহন মালিক সংগ্রাম পরিষদ। অর্থাৎ নিজেদের স্বার্থে ধর্মঘট ডেকে মানুষকে হয়রানি করে পরিবহন সংগঠনগুলো।
গতকাল থেকে শুরু হওয়া পরিবহন ধর্মঘটে চট্টগ্রাম বন্দর এবং ১৯ আইসিডিতে পণ্য পরিবহন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে পড়ে। এর আগে গত ২১ সেপ্টেম্বর ১৫ দফা দাবিতে পণ্যবাহী যান বন্ধ করে দেয়া হয়। ৩৪ ঘণ্টা স্থায়ী ওই ধর্মঘটেও অচলাবস্থার সৃষ্টি হয় দেশের অর্থনীতির প্রাণ চট্টগ্রাম বন্দরে। অর্থাৎ নিজেদের দাবি-দাওয়া আদায় করতে কেবল সাধারণ মানুষকে জিম্মি করছে তা না, অর্থনীতিকেও টেনে ধরে পরিবহন সংগঠনগুলো।
এ বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন দৈনিক আজাদীকে বলেন, বার বার জনগণকে জিম্মি করে দাবি আদায়ের প্রক্রিয়া দুভার্গ্যজনক। এটা মেনে নেয়ার মত না। মানুষকে যেন জিম্মি করতে না পারে তার জন্য সরকারের উচিত হস্তক্ষেপ করা।
তিনি বলেন, সমস্যা বা কোনো দাবি-দাওয়া থাকলে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে পারে। সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রীর বা জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলতে পারে। কিন্তু তা না করে মানুষকে জিম্মি করে তারা ধর্মঘট ডেকেছে। শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষা চলছে। আকস্মিক ধর্মঘটে বেকায়দায় পড়েছে তারা। এটা তো কাম্য না।
ক্যাবের এ কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, করোনাকালেও মানুষকে জিম্মি করে সরকার নির্র্ধারিত ভাড়া না নিয়ে দ্বিগুণ আদায় করেছিল। অথচ সরকারের নির্দেশ না মেনে অর্ধেকের বদলে প্রতি আসনেই তারা যাত্রী পরিবহন করে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন, চট্টগ্রাম আঞ্চলিক শাখার সভাপতি মো. মুসা বলেন, করোনা পরবর্তী সময়ে পরিবহন চালানোয় খরচ বেড়েছে ৫০ শতাংশ। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, গাড়ি চালাতে হলে মালিককে পকেট থেকে পুঁজি দিয়ে গাড়ি চালাতে হবে। গাড়ি থেকে আয় দিয়ে পোষাবে না। পরিবহন মালিকরা ব্যবসা না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকলে তাকে অযৌক্তিক বলা যাবে না কিছুতেই। গাড়ি যদি চলে তবে বেশি ভাড়ায় চালাতে হবে। যাত্রী বেশি ভাড়া দেবে না। স্থানে স্থানে যাত্রীদের সাথে চালক হেলপারের ঝগড়া হবে, হাতাহাতি হবে। এর দায় কে নেবে?

পূর্ববর্তী নিবন্ধকক্সবাজারে মেম্বার প্রার্থীসহ দুজন গুলিবিদ্ধ
পরবর্তী নিবন্ধসম্প্রীতি সমাবেশে হাতাহাতি