স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে বান্দরবান খুবই শান্তিপূর্ণ ছিল। পর্যটন সম্ভাবনাময় জেলায় শান্তি বজায় রাখতে শান্তি আলোচনাও চলছিল কেএনএফের সঙ্গে। এমন সময়ে এই ধরনের একটি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড তারা সংঘটিত করবে, এমন ধারণা কারোরই ছিল না। সবাই একটু রিলাক্স মুডে ছিল। সেই সুযোগটা তারা কাজে লাগিয়েছে। সশস্ত্র গোষ্ঠী তাদের অবস্থান জানান দেওয়ার জন্য প্রথম দিন রুমায় এবং পরের দিন থানচিতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছে। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তারা জঘন্য অপরাধের কাজ করেছে। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এই অবস্থান নিয়েছে। কাজেই রাষ্ট্র এখানে চুপ থাকতে পারে না।
বান্দরবানে সার্কিট হাউজের কনফারেন্স রুমে বান্দরবান পার্বত্য জেলা আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায় শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীদের দমাতে সরকারের যা প্রয়োজন সবকিছুই করবে। এখানে পুলিশ, র্যাব, আনসার, আর্মড পুলিশ এবং সীমান্ত এলাকাগুলোতে বিজিবির সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও একটি নির্দেশনা সামরিক বাহিনীকে দিয়েছেন। তারা সম্মিলিতভাবে যৌথ অভিযান পরিচালনা করে। তার আগে র্যাব, আনসার, আর্মড পুলিশ আইনশৃঙ্খলা ও শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। মূলত দেশের স্বার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশের ভূখণ্ডে কোনো সন্ত্রাসী, অস্ত্রধারী এবং চাঁদাবাজকে এই ধরনের অন্যায় ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতে দেব না।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পাহাড়ে শান্তির জন্য শান্তি রক্ষা কমিটির মাধ্যমে পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ধৈর্র্য ধরে শান্তি আলোচনা চালিয়ে গেছেন, কিন্তু আলোচনা চালানো অবস্থায় কেএনএফ আলোচনা না করে নিজেদের স্বার্থের জন্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছে। অথচ আমরা জেনেছি তাদের (কেএনএফ) সংখ্যা মূল জনসংখ্যার ১%ও নয়। কাজেই তাদের এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, অস্ত্রের মহড়া দেওয়া–এটি আশ্চর্যজনক। এটি কখনো মেনে নেওয়া যায় না। আমরা প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেব। এই এলাকায় নিরাপত্তার স্বার্থে যা যা করণীয় সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্ত্রী বলেন, তিন পার্বত্য জেলায় পর্যটনের অপার সম্ভাবনার একটা দ্বার উন্মোচিত হয়েছিল। সেখানে কেউ যদি উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে বা অন্যের প্ররোচনায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে থাকে, আমরা বিষয়গুলো খতিয়ে দেখব। আমরা কাউকেই কোনো প্রকার ছাড় দেব না।
বিদেশিদের ইন্ধনের প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে নিজেদের মধ্যে সংঘাত চলছে। কিন্ত মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সুসম্পর্ক রয়েছে। প্রতিবেশী বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের সাথে তো সুসম্পর্ক রয়েছেই। তারা আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র। যারা এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটাচ্ছে, তারা যদি বিদেশের মাটিতেও আশ্রয় নেয়, আমরা ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাদের বাংলাদেশে নিয়ে এসে বিচারের ব্যবস্থা করব।
কেএনএফ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, শান্তির যে আলোচনা শুরু হয়েছিল, দুই পক্ষের একটি এজেন্ডা আমাদের কাছে রয়েছে। দুবার আলোচনা করে তৃতীয় বৈঠকের নির্ধারিত সময়ের আগে তারা শর্তভঙ্গ করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছে। মূলত শান্তি আলোচনাটা ছিল তাদের কর্মকাণ্ড আড়াল করা। তাদের শক্তি প্রদর্শনটাই ছিল প্রধান কাজ।
বিডিনিউজ সূত্রে জানা যায়, আলোচনার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার জনগণের সরকার, জনগণ চাইলে কেএনএফের সঙ্গে আবারো শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সংলাপ হতে পারে। আরেক প্রশ্নের জবাবে ব্যাংক ডাকাতির মতো ঘটনায় কোনো সংস্থার দায়িত্ব পালনে কোনো ঘাটতি বা গাফিলতি ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
এর আগে সকালে ১১টায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল হেলিকপ্টারে রুমায় পৌঁছান। তিনি রুমায় লুট হওয়া সোনালী ব্যাংক শাখা ও উপজেলা কমপ্লেঙ পরিদর্শন করেন। পরে তিনি হেলিকপ্টারে বান্দরবান সেনানিবাসে যান। সেখান থেকে সাড়ে ১২টায় বান্দরবান সার্কিট হাউজ কনফারেন্স রুমে বান্দরবান পার্বত্য জেলা আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে যোগ দেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন।
এ সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, বান্দরবানের সংসদ সদস্য বীর বাহাদুর উশৈসিং, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা সচিব মোস্তাফিজুর রহমান, বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, আনসার বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল একেএম আমিনুল হক, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল মাহবুব আলম, ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল হামিদুল হক, পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) প্রধান মনিরুল ইসলাম, পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।