চট্টগ্রাম কাস্টমসে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) শাখার কার্যক্রমে দীর্ঘদিন ধরে স্থবিরতা চলছে। তবে এডিআর কার্যক্রমে গতি আনতে নতুন উদ্যোগ হাতে নিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। কাস্টমসে যেসব বড় বড় আমদানিকারকের মামলা রয়েছে তাদের এডিআরে আনার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। এডিআরের মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তি হলে আটকে পড়া রাজস্ব আয়ও বাড়বে বলছেন কাস্টমস কর্তারা। কারণ শুধুমাত্র আইনের মারপ্যাঁচে আটকে আছে সরকারের শত শত কোটি টাকার রাজস্ব। বর্তমানে আপিল ট্রাইব্যুনাল, আপিল কমিশনারেট এবং উচ্চ আদালতে রাজস্ব সংক্রান্তসহ বিভিন্ন মামলা আছে সাড়ে ৮ হাজারের অধিক। এসব মামলার একটা অংশ যদি এডিআরে নিষ্পত্তি হয় তাহলে উভয় পক্ষের জন্যই সুবিধা হবে বলছেন আমদানি-রপ্তানি সংশ্লিষ্টরা।
এডিআর শাখার কর্মকর্তারা জানান, এডিআরের মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তির জন্য গত আড়াই বছরে একটি মাত্র আবেদন জমা পড়েছে। তবে সেটি আইনগত কারণে এডিআরে নিষ্পত্তি করা সম্ভব নয়। কারণ মামলাটি ছিল এইচএস কোড সংক্রান্ত। এডিআর শাখা মূলত কাজ করে ভ্যালু নিয়ে। এছাড়া এডিআরে আর কোনো মামলার নিষ্পত্তির আবেদন জমা পড়েনি। তবে এডিআরের মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তি করতে হলে কোনো এক পক্ষকে ছাড় দিতে হবে। এখানে আসলে কেউ ছাড় দিতে চায় না।
কাস্টমসের আইন শাখা সূত্রে জানা গেছে, আপিল বিভাগে চলমান আছে প্রায় ২০০ মামলা, উচ্চ আদালতে প্রায় ৬ হাজার মামলা, আপীলাত ট্রাইব্যুনালে প্রায় ২ হাজার মামলা এবং আপিল কমিশনারেটে চলমান আছে দেড় শতাধিক মামলা। সব মিলিয়ে মামলা রয়েছে সাড়ে ৮ হাজারের বেশি। এডিআর শাখা সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে এডিআরে আবেদন জমা পড়ে ১০২টি, বিপরীতে নিষ্পত্তি হয় ৯১টি। এর মাধ্যমে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এছাড়া ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে এডিআরের কোনো কার্যক্রম ছিল না। সর্বশেষ গত ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে এডিআরে আবেদন জমা পড়ে ২৪টি, এরমধ্যে নিষ্পত্তি হয় ২১টি। এসব মামলা থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১৪ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত কাস্টমসে আবেদন জমা পড়েছে ১২৬টি। নিষ্পত্তি হয়েছে ১১২ টি মামলা এবং নিষ্পত্তিকৃত মামলা থেকে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ২৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এছাড়া বাকি ১৪টি নিষ্পত্তি হয়নি। এডিআরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, উচ্চ আদালত ও কাস্টমসের আপিল ট্রাইব্যুনালে দীর্ঘদিন থেকে নিষ্পন্ন না হওয়া অবস্থায় রাজস্ব সংক্রান্ত মামলা এডিআরের মাধ্যমে নিষ্পত্তির জন্য উদ্যোগ নেয় এনবিআর। সেই লক্ষ্যে গত ২০১২ সালের ১ মার্চ থেকে কাযক্রমটি শুরু হয়। তবে বিশ্বব্যাংকের বেসরকারি খাতে সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) সহযোগিতায় ২০১২ সালের ১ জুলাই থেকে এডিআর পদ্ধতিটি গতি পায়। এ পদ্ধতিতে আদালতের বাইরে আমদানিকারক এবং কাস্টমসের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে একজন নিরপেক্ষ সহায়তাকারীর মাধ্যমে দ্রুত সময়ে মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করে থাকে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এডিআর কার্যক্রম চালু রাখতে হলে কাস্টমস ও আমদানিকারক উভয় পক্ষকে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। তাহলেই কেবল এডিআর কার্যক্রম গতি পাবে। সহায়তাকারীরা আইনি ব্যাখ্যা দেওয়া ছাড়া তাদের হাতে কোনো ক্ষমতা নেই। এছাড়া এডিআরের মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তি হলে কাস্টমস ও আমদানিকারক উভয়পক্ষ লাভবান হবে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপ-কমিশনার (এডিআর শাখা) সুমন চাকমা দৈনিক আজাদীকে বলেন, এডিআরে আসলে আমদানিকারকরা আসতে চান না। কেউ না আসলে আমরা তো জোর করতে পারি না। আমরা এডিআরে তাদের মামলা নিষ্পত্তির জন্য উব্ধুব্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এডিআরে মামলা নিষ্পত্তি হলে আসলে দুই পক্ষের জন্যই সুবিধা।