আমদানি উন্মুক্ত হওয়ায় আরো কমল চিনির দাম

খাতুনগঞ্জে চিনির কেজি ১০০ টাকার নিচে প্রভাব নেই খুচরা বাজারে , অভিযানের দাবি ভোক্তাদের

জাহেদুল কবির | বৃহস্পতিবার , ১০ জুলাই, ২০২৫ at ৬:৩৬ পূর্বাহ্ণ

আমদানি উন্মুক্ত হওয়ায় খাতুনগঞ্জে পাইকারি বাজারে কমছে চিনির দাম। গত সরকারের আমলেও চিনির বাজার গুটিকয়েক শিল্পগ্রুপের কাছে জিম্মি ছিল। তারা অপরিশোধিত চিনি আমদানি করে নিজেদের মিলে পরিশোধন করে বাজারজাত করতো। বাজারজাত ব্যবস্থায়ও ছিল সিন্ডিকেট। তারা নিজেদের লোক দিয়ে চিনি বিক্রি করে ইচ্ছে মতো দাম বৃদ্ধি করতো। ফলে চিনির বাজার কখনো নিয়ন্ত্রণে থাকতো না।

বর্তমান সরকার সেই ব্যবস্থা তুলে দিয়ে সব ব্যবসায়ীর জন্য আমদানি উন্মুক্ত করে দেয়। এর ফলে দীর্ঘ সময় পর পাইকারি বাজারে চিনির দাম কেজিতে ১০০ টাকার নিচে নেমে এসেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে বাজারে ভারত, ব্রাজিল, পাকিস্তান ও দুবাই থেকেও চিনি আসছে। এর ফলে চিনির মিল মালিকরা আর আগের মতো সিন্ডিকেট করতে পারছেন না। আসলে গত সরকার নির্দিষ্ট কয়েকটি কোম্পানিকে একচেটিয়া ব্যবসা করার সুযোগ দিয়েছে। পরিশোধিত চিনি বাজারজাতকরণ পর্যায়ে ভ্যাটট্যাক্স পরিশোধের নিয়ম থাকলেও কোম্পানিগুলো এসবেরও তোয়াক্কা করত না। অথচ তারা নিয়মিত ক্রেতাদের জিম্মি করে ব্যবসা করতো। খাতুনগঞ্জের চিনির বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহ আগে খাতুনগঞ্জের পাইকারী বাজারে মণপ্রতি (৩৭.৩২ কেজি) চিনি বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৭৫০ টাকা। বর্তমানে সেই চিনি বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৬৯০ টাকায়। সে হিসেবে প্রতি কেজি চিনির দাম পড়ছে ৯৮ টাকা। তবে খুচরা বাজারে সেই চিনি বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়। অর্থাৎ কেজিতে ১২ টাকা বেশি।

নগরীর দামপাড়া এলাকার খুচরা ব্যবসায়ী মোহাম্মদ রানা বলেন, আমরা প্রতি কেজি ১১০ টাকায় বিক্রি করছি। পাইকারিতে প্রতি নিয়ত পণ্যের দাম উঠানাম করে। সেখানে বাজারটা সেভাবে নির্ধারিত হয়। আমরা অল্প অল্প চিনি এনে বিক্রি করি। বলা যায়, সীমিত লাভে চিনি বিক্রি করে থাকি।

জানা গেছে, খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ী জানান, খাতুনগঞ্জের বাজারে পণ্য বেচাকেনা ও লেনদেনে যুগ যুগ ধরে কিছু প্রথা চালু আছে। নিজেদের সুবিধার অনেক প্রথা আছে যেগুলো আইনগতভাবে স্বীকৃত নয়। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে ‘ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) স্লিপ’। চিনি কিংবা অন্য কোনো পণ্য কেনাবেচায় ডিও বেচাকেনার মাধ্যমে বিভিন্ন আগাম লেনদেন হচ্ছে। দেখা যায়, পণ্য হাতে না পেলেও ওই স্লিপটিই বেচাকেনা হচ্ছে। কোনো কোম্পানি বাজারে আসার আগে নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্যের ডিও বিক্রি করে। যে দরে ডিও বিক্রি হয়, তার বাজার দর যদি বেড়ে যায়, তখন পণ্য ডেলিভারি দিতে তারা গড়িমসি করে। আবার দেখা যায়, কোম্পানির পণ্যের তুলনায় ডিও বিক্রিও হয় বেশি। এর ফলেও কোম্পানি বাজারে পণ্য ডেলিভারি দিতে পারে না। ফলে এসব পণ্যের দামও নিয়ন্ত্রণে থাকে না।

খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, চিনির বাজারে আমদানি উন্মুক্ত হওয়ায় দাম কমছে। আমদানি বাড়ার কারণে সরবরাহ বেড়েছে।

আসিফ হোসেন নামের একজন ভোক্তা বলেন, চিনির বাজারে অস্থিরতা কমছে এটি একটি সুখবর। এক সময় নির্দিষ্ট কিছু শিল্পগ্রুপ ছাড়া কেউ চিনি আমদানি করতে পারত না। করলেও তারা ওইসব শিল্পগ্রুপের কাছে জিম্মি ছিল। কারণ তারা অপরিশোধিত চিনি এনে এখানে পরিশোধন করে বাজারজাত করতো। তাই রেডিমেড চিনি এনে কেউ ব্যবসা করতে পারত না। বর্তমানে সব ব্যবসায়ীর জন্য চিনির আমদানি উন্মুক্ত করে দেয়ায় সিন্ডিকেটের কারসাজিও নেই বলা যায়। তবে পাইকারিতে দাম কমলেও খুচরা বাজারে এর কোনো প্রভাব নেই। তাই প্রশাসনকে খুচরা বাজারে অভিযান চালাতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১০ জুলাই : বাংলা ব্লকেডে স্থবির দেশ
পরবর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা