আব্দুল মতিন (১৯২৬–২০১৪)। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের বাংলা ভাষা আন্দোলনের অন্যতম ভাষা সৈনিক। ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বাংলাদেশের জাতীয় এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদক পান। আব্দুল মতিন ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দের ৩ রা ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জের চৌহালি উপজেলার ধুবালীয়া গ্রামে এক মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আব্দুল জলিল এবং মায়ের নাম আমেনা খাতুন। জন্মের পর তার ডাক নাম ছিল গেদু। তিনি ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে এনট্রেন্স (মাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষা) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। আব্দুল মতিন ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে রাজশাহী গভর্মেন্ট কলেজে এইচ এস সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে আব্দুল মতিন ব্রিটিশ আর্মির কমিশন র্যাঙ্কে ভর্তি পরীক্ষা দেন এবং ফোর্ট উইলিয়াম থেকে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কমিশন পান। এরপর তিনি কলকাতা থেকে ব্যাঙ্গালোর গিয়ে পৌঁছান। কিন্তু ততদিনে যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে। ফলে তিনি একটি সার্টিফিকেট নিয়ে আবার দেশে ফিরে আসেন। দেশে প্রত্যাবর্তনের পর তিনি ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাচেলর অব আর্টসে ভর্তি হলেন। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে গ্র্যাজুয়েশন কোর্স শেষ করেন এবং পরে মাস্টার্স করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি তোলায় আব্দুল মতিনের অবদান অন্যতম। সে বছর ২১ শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের ছাত্রসভায় সভাপতিত্ব করেছিলেন তিনি। শিক্ষার্থীদের সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন তিনি। তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই কলাভবনের জনসভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ১৪৪ ধারা ভঙ্গের। তারই নেতৃত্বে একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে সারা বাংলার জন্য আন্দোলনের নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। ভাষা আন্দোলনের পর তিনি ছাত্র ইউনিয়ন গঠনে ভূমিকা রাখেন এবং পরে সংগঠনটির সভাপতি হন। তিনি অনেক গ্রস্থও রচনা করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহের মধ্যে: ‘১ ফেব্রুয়ারি ও ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ভাষা আন্দোলন প্রসঙ্গে’, ‘গণ চীনের উৎপাদন ব্যবস্থা ও দায়িত্ব প্রথা, ভাষা ও একুশের আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন কি এবং তাতে কি ছিল, ভাষা আন্দোলন: ইতিহাস ও তাৎপর্য: আব্দুল মতিন ও আহমদ রফিক, বাঙালি জাতির উৎস সন্ধান ও ভাষা আন্দোলন, জীবন পথের বাঁকে বাঁকে। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ৮ ই অক্টোবর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।