বাংলাদেশের সাহিত্য, সমাজ, রাষ্ট্র ও সংস্কৃতির অঙ্গনে আবুল ফজল একজন প্রথিতযশা ব্যক্তিত্ব। স্বদেশ প্রেম আর অসামপ্রদায়িক চেতনার কল্যাণস্পর্শে তাঁর সাহিত্য ও কর্মের মাধ্যমে তিনি সমাজের অগ্রগতির পথ সুগম করায় সচেষ্ট থেকেছেন, মানুষকে দেখিয়েছেন মুক্তির দিশা।
আবুল ফজলের জন্ম ১৯০৩ সালের ১লা জুলাই দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়া থানার কেঁউচিয়া গ্রামে। চট্টগ্রামের নিউ স্কিম মাদ্রাসা থেকে মাধ্যমিক, ঢাকার ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক, ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে বি.টি এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এম.এ ডিগ্রি নেন তিনি। ছেলেবেলা থেকেই সাহিত্যের প্রতি আকর্ষণ এবং নানা বিষয়ে কৌতূহল প্রবণতা সংকীর্ণ সমাজ পরিবেশের ক্ষুদ্র গণ্ডিতে তাঁকে করে তুলেছে উদার, মানবতাবাদী। গণমুখী সাংস্কৃতিক চেতনার বিকাশে ‘মুসলিম সাহিত্য সমাজ’ ও ‘বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন’-এর অন্যতম সংগঠক ও রূপকার ছিলেন আবুল ফজল। ধর্মীয় গোঁড়ামি, সংস্কারাচ্ছন্নতা, চৈতন্যের পশ্চাৎপদতা, কূপমণ্ডূকতার মতো নানা অবক্ষয়ী মূল্যবোধের অচলায়তন ভেঙে মুক্তবুদ্ধি, গণতান্ত্রিক চেতনা ও প্রগতি মনস্কতার উদ্বোধনে এই দুটি সংগঠনের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যবহ। কর্মজীবনে আবুল ফজল শিক্ষকতা করেছেন চট্টগ্রাম কাজেম আলী হাই স্কুল, সীতাকুণ্ড মাদ্রাসা, খুলনা জেলা স্কুল, চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল, কৃষ্ণনগর কলেজ ও চট্টগ্রাম কলেজে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। আবুল ফজল বেশ কিছু উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, গল্পগ্রন্থ, আত্মস্মৃতি, দিনলিপি এবং জীবনী রচনা করেছেন। এসবের মধ্যে ‘চৌচির’, ‘রাঙা প্রভাত’, ‘মাটির পৃথিবী’, ‘মৃতের আত্মহত্যা’, ‘সাহিত্য, সংস্কৃতি ও জীবন’, ‘মানবতন্ত্র’, ‘শুভবুদ্ধি’, ‘রেখাচিত্র’, ‘লেখকের রোজনামচা’, ‘দুর্দিনের দিনলিপি’,‘রবীন্দ্র প্রসঙ্গ’, ‘শেখ মুজিব: তাঁকে যেমন দেখেছি’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
কর্মকৃতীর স্বীকৃতি হিসেবে অর্জন করেছেন বাংলা একাডেমী পুরস্কার, প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রীয় পুরস্কার, আদমজী পুরস্কার সহ নানা সম্মাননা। তাঁর সকল সৃষ্টির মূল লক্ষ্যই ছিল মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা। জাতির যেকোনো সংকটকালে তাঁর ভূমিকা ছিল নির্ভীক, নিঃশঙ্ক। তাই খ্যাতিমান হয়েছিলেন জাতির বিবেক হিসেবে। ১৯৮৩ সালের ৪ঠা মে আবুল ফজল প্রয়াত হন।