আবু সাঈদ এখন ঘরে ঘরে

রংপুরে সাঈদের বাড়িতে ড. ইউনূস । সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা গোলমাল লাগানোর ইন্ধন

আজাদী ডেস্ক | রবিবার , ১১ আগস্ট, ২০২৪ at ১০:৪২ পূর্বাহ্ণ

চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় গুলিতে নিহত শিক্ষার্থী আবু সাঈদ এখন বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরের সন্তান বলে মন্তব্য করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি সন্তানকে আগলে রাখার দায়িত্ব এখন সবার। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেওয়ার দুদিন পরেই গতকাল শনিবার রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিহত ছাত্র আবু সাঈদের বাড়িতে গিয়ে এ কথা বলেন মুহাম্মদ ইউনূস।

তিনি বলেন, আবু সাঈদ এখন ঘরে ঘরে। প্রত্যেক ঘরে আবু সাঈদ এবং বাংলাদেশে যত পরিবার আছে সব পরিবারের সন্তান সে। বাংলাদেশে জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সবারই সন্তান সে। এখানে হিন্দু পরিবার হোক, মুসলমান পরিবার হোক, বৌদ্ধ পরিবার হোক সবার ঘরের সন্তান এই আবু সাঈদ। কাজেই আপনারা খেয়াল রাখবেন যে কোথাও কোনো গোলযোগ যেন না হয়, কেউ ধর্ম নিয়ে কথাবার্তা না বলে, কারণ আমরা এ মাটিরই সন্তান। সবাই আবু সাইদ। কাজেই সন্তানদের রক্ষা করা জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে এটা এখন আমাদের কর্তব্য। আমরা যেন এটা নিশ্চিত করি। আমরা এখন সামনের পথে দাঁড়াই, আবু সাঈদ যেমন দাঁড়িয়েছিল, আমাদেরকেও এমন দাঁড়াতে হবে। খবর বিডিনিউজের।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মুহাম্মদ ইউনূস ও উপদেষ্টা পরিষদে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুজন সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি পীরগঞ্জের মেরিন একাডেমিতে অবতরণ করে। বেলা ১১টার পরে পীরগঞ্জ উপজেলার জাফরপাড়া গ্রামে সাঈদের বাড়িতে পা রাখেন ইউনূস। সাঈদের কবর জিয়ারত করে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেন প্রধান উপদেষ্টা। ওই সময় সাঈদের মা তাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। ২৫ বছর বয়সী সাঈদ রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বাদশ ব্যাচের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। সাঈদ ছিলেন কোটা আন্দোলনে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সমন্বয়ক। রংপুরে শিক্ষার্থীরা গত ১৬ জুলাই দুপুরে দুপুর ১টার দিকে জেলা স্কুল মোড়ে থেকে মিছিল নিয়ে বের হলে লালবাগ খামার মোড়ে শিক্ষার্থীদের আরেকটি মিছিল তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। পরে মিছিলটি রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর ফটক দিয়ে ক্যাম্পাসে ঢোকার চেষ্টা করে। সে সময় সেখানে থাকা ছাত্রলীগের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলার সময় পুলিশের সঙ্গেও শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ বাঁধে। এতে আবু সাঈদসহ পুলিশ ও বেশ কয়েক শিক্ষার্থী আহত হন। আহতদের রংপুর মেডিকেল কলেজে নেওয়া হলে হাসপাতালে আনার আগেই গুলিবিদ্ধ আবু সাঈদের মৃত্যু হয় বলে জানান চিকিৎসকেরা।

পুলিশের বন্দুকের সামনে দুহাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে থাকা সাঈদকে গুলি করার ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর সারা দেশে আন্দোলন জোরদার করা হয়। একপর্যায়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলনে নামে। ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা যখন বড় হবে, তারা স্কুলে পড়বে আবু সাঈদের কথা। তারাও বলবে, আমিও ন্যায়ের জন্য লড়ব। আবু সাইদের মা আমাদের সবার মা। কাজেই তাকে এবং সাঈদের বোনদের রক্ষা করতে হবে। তাদের ভাইদের রক্ষা করতে হবে। সবাইকে রক্ষা করতে হবে। আবু সাঈদের এই বাংলাদেশে কোনো ভেদাভেদ নেই। কাজেই আপনাদের কাছে অনুরোধ, যে যেখানেই আছেন এই আবু সাঈদের বাবা, মা এবং তার পরিবারকে রক্ষা করুন। কোনোরকম গোলযোগ হতে দিবেন না।

মুহাম্মদ ইউনূস নতুন বাংলাদেশ গড়ার দায়িত্ব বাস্তবায়নে আবু সাঈদকে স্মরণের কথাও বলেন। স্বাধীন এই নতুন বাংলাদেশ গড়ার দায়িত্ব এখন আমাদের। তার (আবু সাঈদ) কথা স্মরণ হবে এই কাজটা বাস্তবায়ন করার মধ্যে। কাজেই সে কাজটা যেন আমরা করি।

সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা গোলমাল লাগানোর ইন্ধন : বাংলানিউজ জানায়, ছাত্রজনতাকে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার মাধ্যমে কিছু লোক একটা গোলমাল লাগানোর জন্য ইন্ধন যোগাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। গতকাল রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্রজনতাকে উদ্দেশ্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, পত্রপত্রিকায় আসতেছে, সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ হইতেছে। কী জন্য তাদের নিয়ে টানাটানি করতেছে, তারা কি দেশের মানুষ না? তোমরা (শিক্ষার্থী) দেশ রক্ষা করতে পেরেছ, কয়েকটা (সংখ্যালঘু) পরিবার রক্ষা করতে পারবা না!

সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনার সমালোচনা করে ড. ইউনূস বলেন, কষ্ট লাগে সেও তোমাদের সঙ্গে ছিল, তার ছেলে তোমাদের সঙ্গে ছিল। কিন্তু বাড়ি গিয়ে দেখে তার বাড়ি লুটপাট হয়ে গেছে। তিনি বলেন, লুটপাট কারা করতেছে? কিছু ইচ্ছে করে, আর হলো অন্যের মদদে; যারা ইন্ধন যোগাইতেছে একটা গোলমাল লাগায়ে দেওয়া। গোলমাল লাগাতে পারলে তাদের খুব মজা। সব সময় লেগে আছে তোমাদের আটকানোর জন্য। বলবা কেউ ছুতে (সংখ্যালঘুদের স্পর্শ) পারবা না, আমরা আছি।

বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, হিন্দু পরিবার, খ্রিস্টান পরিবার, বৌদ্ধ পরিবার যত আছে বলবা, কেউ তাদের ক্ষতি করতে পারবা না। তারা আমার ভাই, আমরা একসঙ্গে যুদ্ধ করেছি, একসঙ্গে থাকব। পুরো বাংলাদেশ একটা পরিবারের মতো। এর চেয়ে সুন্দর পরিবার আর নাই কিন্তু। পৃথিবীতে বহু দেশ আছে, এত সুন্দর পরিবার আর নাই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকোতোয়ালী থানা পরিষ্কারে শিক্ষার্থীরা
পরবর্তী নিবন্ধনগদ দুই লাখ টাকার বেশি তোলা যাবে না এ সপ্তাহে