আবারো স্থবির চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গন

ক্রীড়া প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার , ২০ মে, ২০২১ at ১০:২২ পূর্বাহ্ণ

করোনার কারণে সবকিছুর মত স্থবির রয়েছে চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গনও। পুরো ক্রীড়াঙ্গন যেন খাঁ খাঁ করছে। নেই ক্রীড়াবিদদের মুখরতা। কবে আবার মুখর হবে চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গন তাও জানে না কেউ। এর মধ্যে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের মাঠ পরিণত হয়েছে সবুজ গালিচায়। যেন সেজেগুজে অপেক্ষায় রয়েছে ক্রীড়াবিদদের পদচারণায় মুখর হতে।
মাঠটির উপর কত অত্যাচারই না হয়ে থাকে। কিন্তু গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় ১৪ মাসে বলতে গেলে খুব কমই খেলা হয়েছে মাঠটিতে। এর মধ্যে মুজিববর্ষ ফুটবল ও ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ছাড়া মাস্টার্স কাপ এবং বিসিবির বয়স ভিত্তিক কয়েকটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে। সর্বশেষ এপ্রিল মাসের শুরুতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল বিসিবির অনূর্ধ্ব-১৮ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ম্যাচ। এরপর থেকে আর কেউ এই মাঠে নামেনি। আর সে সুযোগে স্টেডিয়ামের মাঠ পরিণত হয়েছে সবুজ গালিচায়।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে গত ৫ এপ্রিল থেকে শুরু হয় লকডাউন। এতে ভেস্তে যায় জেলা ক্রীড়া সংস্থার আরেকটি পরিকল্পনা : কর্পোরেট কাপ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। এপ্রিলের মাঝামাঝিতে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও টুর্নামেন্টটি করোনার কারণে শুরুই করা যায়নি। তবে গত বছরের করোনাকালের চেয়ে এবারের করোনাকাল কিছুটা ভিন্ন। গত বছর জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তারা আসতেন না স্টেডিয়াম এলাকায়। এবার তারা মাঝেমধ্যে আসছেন। কিন্তু আবার কবে মাঠে খেলাধুলা গড়াবে তা বলতে পারছেন না কেউই।
এ বছরের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল ক্রিকেট লিগ। জেলা ক্রীড়া সংস্থার ক্রিকেট সম্পাদক আবদুল হান্নান আকবর জানান, চট্টগ্রামের ক্রিকেটারদের আবেদনের প্রেক্ষিতে বছরের শেষের দিকে ক্রিকেট লিগ শুরু করার একটি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। এখন সে লিগ কবে মাঠে গড়াবে তাও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তিনি আরো জানান, সবকিছু নির্ভর করছে করোনা কোনদিকে যায় তার উপর।
এ বছরের শুরুর দিকে ফুটবল ক্লাবগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে বসেছিল জেলা ক্রীড়া সংস্থা। ক্লাবগুলোর প্রতিনিধিরা বলেছিলেন তারা বছরের শেষদিকে ফুটবল লিগ খেলতে আগ্রহী। সংস্থার ফুটবল সম্পাদক মোহাম্মদ শাহজাহান জানান, এখন সবকিছুই অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেছে। কখন কি হবে কিছু বলা যাচ্ছে না।
এদিকে করোনার কারণে ক্লাবগুলো এ বছর আর কোনো খেলাধুলায় অংশ নিতে চাইবে কিনা তা নিয়েও রয়েছে সংশয়। কাজেই চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গন যেন হাঁটতে চলেছে অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে। যদিও গত বছর অক্টোবরে দেশে সবার আগে খেলাধুলা মাঠে নামিয়েছিল চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা। সেবার মুজিব শতবর্ষ ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হয়েছিল। সংস্থার একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। কারণ এখন খেলাধুলা নামাতে হলে ক্লাবগুলোকে নিয়ে নামাতে হবে। আর সেখানেই সবচেয়ে বড় প্রশ্নটি দেখা দিয়েছে। ক্লাবগুলো খেলবে কিনা।
করোনা এবং সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের কারণে প্রায় এক বছর বন্ধ ছিল সিজেকেএস জিমনেসিয়াম। পরে সেটা খুলে দেওয়া হলেও আবার বন্ধ হয়ে গেল সেই করোনার কারণে। আবার কবে এই বদ্ধ দুয়ার খুলবে তা জানা নেই কারো। ফলে আউটডোর গেমসগুলোর পাশাপাশি বন্ধ রয়েছে ইনডোর গেমসগুলোও। জলশূন্য সুইমিংপুল যেন নিরবে কাঁদছে। কবে আবার তার যৌবন ফিরে আসবে। কবে সাঁতারুদের জলকেলিতে ঢেউ খেলে যাবে পুলের নীল জলে।
এসব প্রশ্নের উত্তর অজানা। সবকিছু যেন বন্দী হয়ে আছে করোনা মহামারীর দাপটের কাছে। এদিকে খেলাধুলা না থাকায় পুরোদস্তুর বেকার ক্রীড়াবিদরা। তাদের আকুতি শোনার মত অবস্থায়ও যেন নেই কেউ। এভাবে দীর্ঘদিন না খেলতে পেরে হয়তো অনেকেই খেলাধুলাও ছেড়ে দেবে। হয়তো খুঁজে নেবে অন্য কোনো পেশা। এক ক্রিকেটার বললেন, আসলে এখন কোনদিকে যাব সে রাস্তাও খুঁজে পাচ্ছি না। শুধু প্রার্থনা করছি যেন এই পরিস্থিতি শেষ হয় শীঘ্রই। কিন্তু তার মত আরো অনেক ক্রীড়াবিদের প্রার্থনা কবে পূরণ হবে সেটা সৃষ্টিকর্তাই জানেন। ক্রীড়াঙ্গনের মানুষগুলো শুধু চাইছে, যেন সহসাই আবার প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসে চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গনে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকালো টাকা সাদা করার সুযোগ আগামী বাজেটেও থাকবে : অর্থমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধসচেতনতার তাগিদ স্বাস্থ্য অধিপ্তরের