আবারও ডুবল নগরীর নিম্নাঞ্চল

দোকান-পাট, বাসা-বাড়িতে পানি ।। কর্মস্থলমুখী মানুষের ভোগান্তি ।। দেড় কোটি টাকার ক্ষতি রেয়াজুদ্দিন বাজারে

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৬ আগস্ট, ২০২৩ at ৫:২৮ পূর্বাহ্ণ

কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে গতকাল শনিবারও ডুবেছে নগরীর নিম্নাঞ্চল। এই নিয়ে টানা দুইদিন জোয়ার ও বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগ ছিল নগরবাসীর। আগেরদিনের ন্যায় গতকালও শহরের প্রধান সড়ক থেকে অলিগলি তলিয়ে যায় হাঁটু থেকে কোমর সমান পানিতে। দোকানপাট ও বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে যায়। এতে দুর্ভোগ ও ভোগান্তিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেন সবাই। বাসাবাড়ির নিচতলা এবং বিভিন্ন কলোনিতে পানি ঢুকে যাওয়ায় নষ্ট হয় আসবাবপত্র। ব্যাহত হয় রান্না। এছাড়া গতকাল বিভিন্ন বেসরকারি অফিস, শিল্প ও কলকারখানা খোলা ছিল। সকালের জলাবদ্ধতায় ভোগান্তিতে পড়েন কর্মস্থলমুখী লোকজন। পানির অজুহাতে বাড়তি ভাড়া দাবি করে রিকশা ও সিএনজি চালকরা। এদিকে গত দুইদিনের জলাবদ্ধতায় রেয়াজুদ্দিন বাজারের প্রায় ২৫০ দোকানে পানি ঢুকে ক্ষতি হয় দেড় কোটি টাকার। শুক্রবার দিবাগত রাতে থেমে থেমে কয়েক দফা বৃষ্টি হয়েছে নগরে। গতকাল সকাল প্রায় ১০টা থেকে আবার মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ হয়। প্রায় দেড় ঘণ্টা স্থায়ী ছিল এ বর্ষণ। একই সময়ে ছিল জোয়ার। দুয়ের সম্মিলনে ডুবে যায় শহরের নিচু এলাকা। অবশ্য বৃষ্টি কমার পর পানি আস্তে আস্তে নেমে যেতে শুরু করে। চকবাজারসহ কয়েকটি এলাকা ছাড়া বেশিরভাগ এলাকার পানি নেমে যায়। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস গতকাল বিকেল ৩টা পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৬৪ দশমিক ২ মিলিমিটার এবং আমবাগান আবহাওয়া অফিস একই সময়ে ৭৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করে।

স্থানীয়রা জানান, সকালের বৃষ্টিতে দেওয়ান বাজার, খলিফাপট্টি, মুরাদপুর, ২ নম্বর গেইট, বহদ্দারহাট, বাদুরতলা, শুলকবহর, মোহাম্মদপুর, কাপাসগোলা, কাতালগঞ্জ, বাকলিয়ার বিভিন্ন এলাকা, ফিরিঙ্গিবাজারের একাংশ, শান্তিবাগ আবাসিক এলাকা, কে বি আমান আলী রোড, চান্দগাঁওয়ের শমসের পাড়া, ফরিদার পাড়া, পাঠাইন্যাগোদা, মুন্সীপুকুর পাড়, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, তিন পুলের মাথা, রিয়াজুদ্দিন বাজার, মুরাদপুর, চাক্তাইখাতুনঞ্জের নিচু এলাকা, ফুলতলা, ডিসি রোড, চকবাজার, চকবাজার কাঁচাবাজার, মোহাম্মদ আলী শাহ দরগাহ লেইন, হাসমত মুন্সেফ লেন, নাজিরপাড়া, সুন্নিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন এলাকা, কালারপোল, বড়পোল এলাকা, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, কমার্স কলেজ সংলগ্ন এলাকা, হালিশহরসহ বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে যায় পানিতে। গত রাত ১০টার দিকেও চকবাজার ফালাহ গাজী মসজিদ রোড, বাকলিয়া ডিসি রোডসহ আশেপাশে পানি জমে থাকতে দেখা গেছে।

গতকাল দুপুর ১২টার দিকে নগরের মুরাদপুরে হাঁটু পানিতে ক্ষোভ মিশ্রিত কণ্ঠে কায়সার আহমেদ নামে এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আজাদীকে বলেন, সামান্য জোয়ারের পানিতেও আমরা ডুবে যাই। এমন কেন হবে? এটা তো বাণিজ্যিক রাজধানী, বন্দরনগরী। দেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি শহরের এ অবস্থা কেন হবে? যুগ যুগ ধরে বর্ষায় আমরা কেন কষ্ট ভোগ করব? এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দেয়ার কী নেই?

দেড় কোটি টাকার ক্ষতি রেয়াজুদ্দিন বাজারে : গতকালও ডুবেছে রেয়াজুদ্দিন বাজার। গতকাল শনিবার এবং আগেরদিন শুক্রবার দুইদিনে দুই শতাধিক দোকানে পানি ঢুকে ক্ষতি হয়েছে প্রায় কোটি টাকা। এমনটাই জানিয়েছেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা।

জানা গেছে, রেয়াজুদ্দিন বাজারের গোলাম রসুল মার্কেট, আর এস রোড, বাহার লেইন, পশ্চিম বাজার, মশারি গলি, রহমতুন্নেচ্ছা রোড এবং জেবুন্নেচ্ছা রোডে হাঁটুর বেশি পানি উঠে। এসব রোডে থাকা মার্কেট ও দোকানে পানি ঢুকে যায়। এতে নষ্ট হয় দোকানের বিভিন্ন মালামাল। বিশেষ করে কাপড়ের দোকানে এ ক্ষতি হয়েছে বেশি। মালামাল নষ্ট না হলেও রেয়াজুদ্দিন বাজারের মোবাইল মার্কেটেও পানি ঢুকে যায়।

রেয়াজুদ্দিন বাজার বণিক কল্যাণ সমিতির কার্যকরী সদস্য এস এম মিজানুর রহমান দৈনিক আজাদীকে বলেন, দুইদিনের বৃষ্টিতে রেয়াজুদ্দিন বাজারের ২০০ থেকে ২৫০ দোকানে পানি ঢুকে গেছে। গোলাম রসুল মার্কেট ও বাহার লেইনে বেশি ক্ষতি হয়। পুরো রেয়াজুদ্দিন বাজারে যাদের দোকানে পানি ঢুকে তাদের দুই থেকে চার লাখ টাকা করে ক্ষতি হয়। সবমিলিয়ে এক থেকে দেড় কোটি টাকার ক্ষতি হয়। তিনি বলেন, স্টেশন রোডে নির্মাণাধীন নালার কাজ চলছে। সেখানে মাঝেমধ্যে বাঁধ আছে। এতে বাধাগ্রস্ত হয়ে চৈতন্যগলি এলাকার পানিও রেয়াজুদ্দিন বাজারে চলে আসে। রেয়াজুদ্দিন বাজারের ব্যবসায়ীদের এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে হকার মার্কেটের নালা পরিষ্কার করার প্রতিও জোর দেন এ ব্যবসায়ী নেতা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম থেকে সার পরিবহন আজ শুরুর সিদ্ধান্ত
পরবর্তী নিবন্ধ‘চোখে কেবল ভাসছিল দুই মেয়ের চেহারা’