আবদুল্লাহ আল নোমান জ্বলজ্বল করবেন গণমানুষের হৃদয়ে

স্মরণসভায় সিটি মেয়র । অতিকথন ও ক্ষমতার দম্ভ নোমানকে স্পর্শ করেনি : আজাদী সম্পাদক

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ৩ জুন, ২০২৫ at ১০:৪৪ পূর্বাহ্ণ

সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, আবদুল্লাহ আল নোমানের কাছ থেকে আমি রাজনীতির অনেক কিছু শিখেছি। তাঁর কাছ থেকে শেখা অনেক রাজনৈতিক কৌশল আমার বাস্তব জীবনে কাজে আসছে। বিশেষ করে মেয়র হওয়ার পর। আবদুল্লাহ্‌ আল নোমানের কাছ থেকে শিখেছি কিভাবে ধৈর্যের সঙ্গে নেতৃত্ব দিতে হয়।

গতকাল সোমবার বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের জুলাই বিপ্লব স্মৃতি হলে চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির উদ্যোগে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমানের স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি আরো বলেন, আমি যখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) তৃতীয় বর্ষ উঠেছি তখন তাঁর সাথে আমার পরিচয়। সেটি ১৯৮৭ সালে। মেডিকেল কলেজের কিছু নবীন শিক্ষার্থী ছাত্রদল প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছিল, কিন্তু বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হচ্ছিল। ওরা আমার বাসায় এসে বারবার অনুরোধ করতো, দায়িত্ব নিতে। আপনাকে আবদুল্লাহ্‌ আল নোমানের সঙ্গে একটু দেখা করতে হবে। তখন আমি বললামআমি তো তাঁকে চিনি না ভালো করে। তাঁর কাছে কিভাবে যাব? তখন তারা আমাকে বললো, চলেন একটা বাসা আছে, সেখানে আমরা কথা বলবো। গোলাম আকবর খন্দকারের বাসায় গেলাম। সেখানে আবদুল্লাহ্‌ আল নোমান, গোলাম আকবার খন্দকার এবং আমরা ছেলেরা কয়েকজন ছিলাম। সেখান থেকেই শুরু হয় আমার ছাত্রদল নেতৃত্বের পথচলা। মূলত ওইদিন থেকে তাঁর সঙ্গে যেই সম্পর্কটা হয়ে গেছে, এ সম্পর্কটা প্রায় ৩৮ বছর।

ডা. শাহাদাত বলেন, আমি কখনোই তাঁকে রাগান্বিত হতে দেখিনি। মেডিকেল কলেজে তখন খুব গণ্ডগোল হতো। এমনও হয়েছে আবদুল্লাহ্‌ আল নোমান মেডিকেল কলেজে আমরা ঠিকমতো মিছিল করেছি কিনা সেটি তদারকি করতেন। সন্ধ্যায় যখন পার্টি অফিসে যেতাম, তখন তিনি আমাকে বলতেন তোমরা তো আজকে ১২ জন মিছিল করেছো। আমি বললাম, আপনি কেমনে দেখেছেন, তখন তিনি বললেন আমি দেখেছি ওই গাছের নিচে আমি ছিলাম। পরে তিনি আমাকে সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সারগাম’রও আহ্বায়ক করে দেন। একটি প্রতিষ্ঠানে একটা দলকে স্টাবলিশড করার জন্য তিনি নার্সিং করতেন। তিনি যেভাবে ছাত্রদলকে গড়ে তুলেছেন, নার্সিং করেছেন তাতে ৯০ সালে এসে আমি দেখেছি, ক্ষমতায় আসার এক বছর আগে আমরা সংসদে ৪৫টি আসন পেয়েছিলাম।

সিটি মেয়র বলেন, যখন কোনো গণ্ডগোল হতো, তিনি বলতেন, বসো, ধৈর্য ধরো। সত্যিকারের রাজনীতিবিদ যারা তারা কিন্তু এ ধরনের আদর্শ রেখে গেছেন। এ জায়গায় আব্দুল্লাহ আল নোমান জ্বলজ্বল করে জ্বলবেন স্মৃতির পাতায়, লাখো কোটি মানুষের হৃদয়ে।

একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক ও দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেছেন, আবদুল্লাহ আল নোমান একজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ ছিলেন। এছাড়া তিনি ছিলেন বহু গুণে গুণান্বিত। সব দলের মানুষের কাছে ছিলেন গ্রহণযোগ্য। বিভিন্ন সময়ে আমরা কোনো কোনো রাজনীতিবিদকে চট্টগ্রামের অভিভাবক হিসেবে ভাবতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি। আবদুল্লাহ আল নোমান তেমন বড় মাপের নেতা, যিনি সবার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার আসনে আসীন ছিলেন। তিনি শুধু রাজনৈতিক নেতা ছিলেন না সামাজিক নেতাও ছিলেন। এসব কারণে আবদুল্লাহ আল নোমান তাঁর সময়ে চট্টগ্রামের অভিভাবক স্থানীয় নেতা হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর তুলনা তিনি নিজেই। তিনি যেমন ধীরস্থির, শান্তশিষ্ট, প্রজ্ঞাবান, যুক্তিবাদী ও দূরদর্শী নেতা ছিলেন, তেমনি ছিলেন দক্ষ সংগঠক। সর্বদা হাস্যোজ্জল, ব্যক্তিত্বে অমায়িক, কথাবার্তায় বিনয়ী, চলাফেরায় নম্র ও শান্ত মেজাজের অধিকারী আবদুল্লাহ আল নোমান ছিলেন একজন সফল রাজনীতিবিদ ও আলোকিত মানুষ। সুস্থ রাজনীতির অনুসরণ, অনুকরণ ও মনেপ্রাণে অন্তঃকরণের পর ছাত্রজীবন থেকেই প্রাতিষ্ঠানিক রাজনীতির চর্চায় মনোনিবেশ করেছিলেন তিনি।

দৈনিক আজাদী সম্পাদক আরো বলেন, স্বাভাবিকভাবেই রাজধানীকেন্দ্রিক সব আন্দোলন সংগ্রামে তাঁকে সামনের সারিতে দেখেছি। তাঁর কণ্ঠস্বর ছিল খুবই জোরালো। কথা বলতেন যুক্তি ও তথ্য দিয়ে। তোয়াক্কা করতেন না কোনো শক্তির। শুধু রাজপথেই নয়, ঘরোয়া প্রোগ্রাম কিংবা সভাসেমিনারেও তাঁকে দেখেছি সারগর্ভ আলোচনা করতে। আবদুল্লাহ আল নোমান শৈশব থেকে সমাজ সচেতন, সংস্কৃতিমনস্ক ও রাজনীতির প্রতি অনুরক্ত ছিলেন। দীর্ঘ ৫০ বছরের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে বিভিন্ন সাংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত থেকে অসংখ্য আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দেন। তাঁর পিতা আহমদ কবীর চৌধুরী ও পিতামহ আবদুল লতিফ মাস্টার দু’জনই শিক্ষাব্রতী ও সমাজহিতৈষী ছিলেন। তাঁর পিতা রাউজান স্কুল, বড় ভাই আবদুল্লাহ আল হারুন রাউজান কলেজ প্রতিষ্ঠায় বড় ভূমিকা পালন করেন। তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে আবদুল্লাহ আল নোমানও একটি কলেজ এবং ইস্ট ডেল্টা ইউনিভারসিটি নামে একটি ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রচলিত রাজনীতির বাইরে তিনি ছিলেন আধুনিক ও অগ্রসর চিন্তার মানুষ। তাঁর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে অতিকথন ও ক্ষমতার দম্ভ তাঁকে স্পর্শ করেনি। কূপমণ্ডুকতার ঊর্ধ্বে উঠে তিনি উদার গণতান্ত্রিক রাজনীতিবিদের মতোই নীরবেনিভৃতে পথ হেঁটেছেন। তিনি মনে করতেন, জনগণই রাজনৈতিক দলের গণভিত্তি। সততা ও সহিষ্ণুতা রাজনৈতিক নেতাদের আদর্শ হওয়া বাঞ্ছনীয় বলেও তিনি বিশ্বাস করতেন।

এম এ মালেক বলেন, আরেকটি বিষয় হচ্ছেরাজনীতি শব্দটির পরিবর্তে সমাজনীতি বা গণনীতি শব্দ প্রচলন করা যায় কিনা সেটি আমাদের দেখতে হবে। রাজা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে।

প্রয়াত আবদুল্লাহ আল নোমানের একমাত্র পুত্র ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা রাজনীতিবিদ সাঈদ আল নোমান বলেন, আমার পিতা আবদুল্লাহ আল নোমান পাহাড়সম সমস্যাকে সমুদ্রের তরঙ্গের মতো, যোগ বিয়োগের মতো করে যেন সমাধান করে ফেলতেন। সমস্যা আসলে তিনি ভেঙে পড়তেন না, এগিয়ে যেতেন। তিনি আমাদের মিতব্যয়ী হওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন। এই শিক্ষাটাই আমাদের জীবনে পথনির্দেশকের মতো কাজ করেছে। জননন্দিত হয়ে মৃত্যু পায় এমন মানুষ আমাদের সমাজে কম আছে। আমি গর্বিত যে, এমন একজন জননন্দিত মানুষের সন্তান আমি। তিনি তার বাবার আত্মার মাগফেরাত কামনায় সবার দোয়া কামনা করেন।

পিপলস ভিউ’র সম্পাদক ওসমান গণি মনসুরের সভাপতিত্বে ও চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সদস্য শাহনেওয়াজ রিটনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নীতিশ দেবনাথ, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এস এম নছরুল কদির, বিএসএফএফ চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহমুদুল হক, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সদস্য সচিব ও দৈনিক আমার দেশের আবাসিক সম্পাদক জাহিদুল করিম কচি, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ চট্টগ্রামের সদস্য সচিব ডা. খুরশীদ জামিল চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. ছিদ্দিক আহমেদ চৌধুরী, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজিম উদ্দীন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কে এম ফেরদৌস, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য সাথী উদয় কুসুম বড়ুয়া, দৈনিক কালের কণ্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি মুস্তফা নঈম, কবি ও নাট্যকার অভীক ওসমান প্রমুখ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআগের সরকারের ধারাবাহিকতা থেকে বের হয়নি বাজেট : খসরু
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬