সবুজ পাহাড়ে সাদা মেঘের ভেলা। এই ভরা বর্ষায় ফিরে এসেছে শরতের রূপ। পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে কখনো রোদ, কখনো বৃষ্টি। করোনার কারণে মানুষের চলাচল সীমিত হওয়ায় প্রকৃতি ফিরেছে নিজের রূপে। লকডাউনের কারণে বদলে গেছে পাহাড়ের প্রকৃতি। পাহাড়ের রূপ দেখে মুগ্ধ হবেন যে কেউ। লকডাউনের কারণে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে পাহাড়ে, প্রকৃতিতে। এখন প্রকৃতির সজীবতা যেকোনো বছরের চেয়ে বেশি। সড়কে যান চলাচল কম থাকায় কমেছে দূষণ। পরিবেশবিদরা বলছেন, প্রাণ ও প্রকৃতির জন্য আশীর্বাদ হয়েছে লকডাউন।
পাহাড়ের অর্কিড সংরক্ষক সাথোয়াই মারমা জানান, অন্য যেকোনো বছরের তুলনায় এ বছর প্রকৃতি আরো বেশি সজীব। লকডাউনের কারণে প্রকৃতিতে ফিরেছে স্বকীয়তা। প্রকৃতির এই পরিবর্তন আমাদের জন্য আশীর্বাদ। ছোটবেলায় গল্প শুনতাম, বর্ষায় প্রকৃতি খুব সুন্দর হয়। এবার সেটা দেখছি। বর্ষা মানে মেঘ আর মেঘ মানে বৃষ্টি। অনেক দিন পর প্রকৃতি যেন নিজ রূপে প্রত্যাবর্তন করেছে। যখন লকডাউন ছিল না, যান চলাচল বেশি ছিল। মানুষের যাতায়াত বেশি ছিল। তখন প্রকৃতিতে রুক্ষতা ছিল। এখন সেটা নেই। আমাদের উচিত প্রকৃতিকে শোষণ বন্ধ করা।
বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী প্রেরণা রোয়াজা বলেন, করোনাকালীন আমাদের জীবনে অনেক সমস্যা দেখা দিয়েছে। কিন্তু প্রকৃতি তার সজীবতা নতুন করে ফিরে পেয়েছে। লকডাউনের কারণে পরিবেশ দূষণ কিছুটা হলেও কমে এসেছে। এদিকে মানুষের চলাচল সীমিত হওয়ায় ও পর্যটকের আনাগোনা না থাকায় পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে নীরবতা বিরাজ করছে।
বন্যপ্রাণী বিষয়ক আলোকচিত্রী সবুজ চাকমা বলেন, লকডাউনের কারণে প্রকৃতি তার আপন মহিমায় ফিরেছে। প্রাণীরা নিরাপদ হয়েছে। অচেনা অনেক পাখি লোকালয়ের কাছাকাছি চলে এসেছে। তারা অবাধে বিচরণ করছে। প্রকৃতিকে রক্ষায় বন বাঁচাতে হবে, কাঠ পাচার বন্ধ করতে হবে এবং বৃক্ষরোপণ করতে হবে। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী ও সংগীত শিল্পী জীবন রোয়াজা বলেন, লকডাউনে জনজীবনে বিঘ্ন ঘটলেও আমার মনে হয় খাগড়াছড়ির পরিবেশ আগের মতো প্রাণ ফিরে পেয়েছে। লক্ষ্য করছি, অনেক অজানা পাখি পার্কের গাছে গাছে নিশ্চিন্তে ঘোরাফেরা করছে। পাখিগুলো এখন কাছে চলে আসে। প্রকৃতি তার আগের প্রাণ ফিরিয়ে দিচ্ছে।
প্রকৃতির এই সৌন্দর্য ধরে রাখতে পরিবেশ সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সরোয়ার আলম। তিনি বলেন, প্রাকৃতিক বনগুলো রক্ষা করতে হবে। লকডাউন শেষেও প্রকৃতি রক্ষায় আমাদের আরো সচেতন হবে।