আন্দোলনের নামে ধ্বংসাত্মক কাজ করলে ছেড়ে দেব না : প্রধানমন্ত্রী

আইনজীবীদের ফান্ডে ৩০ কোটি টাকা দেওয়ার ঘোষণা

আজাদী ডেস্ক | রবিবার , ২২ অক্টোবর, ২০২৩ at ৮:০১ পূর্বাহ্ণ

বিএনপির আন্দোলন থেকে কোনো ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি এলে বা ফের অগ্নিসন্ত্রাস করা হলে তা কঠোর হাতে দমন করা হবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আন্দোলনের নামে বিএনপিজামায়াত মাঠে নামতে চায়। আরো অনেকেই নামতে চায়। তারা আন্দোলন করুক, এতে আমাদের কথা নাই। তারা যদি আবারো অগ্নিসন্ত্রাস করে, কোনো ধ্বংসাত্মক কাজ করে, যদি দুর্বৃত্তপরায়ণতা করে, আমরা কিন্তু ছেড়ে দেব না।

গতকাল শনিবার ঢাকায় হাই কোর্ট এলাকায় বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নবনির্মিত ১৫ তলা ভবন উদ্বোধন শেষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আইনজীবী মহাসমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। অতীতে আন্দোলনের সময় বিএনপিজামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাসীদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে তাদের সাজা নিশ্চিতে ভূমিকা রাখতে আইনজীবীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। এছাড়া বার কাউন্সিলের বেনেভোলেন্ট ফান্ডে প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণ ফান্ড থেকে ৩০ কোটি টাকা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। খবর বিডিনিউজ ও বাংলানিউজের।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা অগ্নিসন্ত্রাসের মাধ্যমে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে তাদের সাজা কেন দ্রুত হবে না? এই বিষয়ে আপনাদের (আইনজীবী) নজর দিতে হবে। কারণ অন্যায়কে প্রশ্রয় দিলে তা বাড়বে।

বিএনপির শাসনামলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি আমাদের কত নেতাকর্মী হত্যা করেছে, চোখ তুলে নিয়েছে, হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়েছে। অতীতে আইনজীবীদের ওপর বিএনপিজামায়াতের হামলার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, প্রত্যেকটা জেলায় যাতে আপনারা সুরক্ষিতভাবে বসবাস করতে পারেন, সেজন্য জেলায় বিশেষ প্লটের ব্যবস্থা আমরা করে দেব।

আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় প্রতিবন্ধকতা যেন না আসে : দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা যেন না আসে, সে ব্যাপারে আওয়ামী লীগ লক্ষ্য রাখছে বলে জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং আইন পাওয়া, বিচার পাওয়ার অধিকার প্রতিটি মানুষ যাতে পায়, সেই ব্যবস্থা আমরা করেছি। বিচার ব্যবস্থা আরো উন্নত করার জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন করছি।

রাষ্ট্রের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ আইন, বিচার ও নির্বাহী বিভাগকে সমন্বিতভাবে কাজ করার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কোনো প্রতিবন্ধকতা যেন সৃষ্টি না হয়। মানুষের কল্যাণে যাতে কাজ করতে পারি। সেই সঙ্গে আইনজীবীদের মানুষের পাশে থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যেখানেই অন্যায় দেখবেন, অন্যায়কারী যাতে সাজা পায় সেজন্য মানুষের পাশে দাঁড়াবেন।

আইনজীবীদের কল্যাণে সব ধরনের সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, আইনজীবী সমিতির ভবন শুধু বড় বড় শহরে না, জেলায়ও করা হবে। এজন্য আইনজীবীদের পক্ষ থেকেও কিছুটা সক্রিয় হতে হবে। আপনারা কিছু ফান্ড তৈরি করেন। সরকারের পক্ষ থেকেও দেওয়া হবে।

প্রত্যেক জেলায় জুডিশিয়াল ম্যজিস্ট্রেট ভবন করে দেওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইন ডিজিটাল, রায় ডিজিটাল, বাংলায় অনুবাদ করা, যাতে সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে। ইজুডিশিয়াল সিস্টেম চালু করার উদ্যোগ নিয়েছি। ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর থেকে আওয়ামী লীগ সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর বিচারের পথ রুদ্ধ করায় পরিবার যে দুর্দশার মধ্যে পড়েছিল, সে কথাও তুলে ধরেন জাতির পিতার কন্যা।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর প্রথমে খন্দকার মোশতাক, জিয়ার সহায়তায় ক্ষমতা দখল করে। কিন্তু থাকতে পারেনি। বেঈমানরা কখনো থাকে না। কাজেই মোশতাককে বিদায় নিতে হয়। আসল চেহারা বেরিয়ে আসে জিয়াউর রহমানের। তিনি ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ রুদ্ধ করতে, বিচার পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে চালু করেন ইনডেমনিটি আইন।যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বঙ্গবন্ধু শুরু করেছিলেন, জিয়াউর রহমান তাদের ফিরিয়ে এনে বিভিন্ন পদ দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়েছে। এরপর ২১ বছর পর অনেক সংগ্রামের পথ বেয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের সুযোগ পায় ৯৬ সালে। তখনই ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে বিচার শুরু করি।

জিয়াউর রহমানের আমলে হত্যাকাণ্ডের শিকার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী এবং সেনানৌবিমান বাহিনীর সদস্যদের স্বজনদের বিচার না পাওয়ার ইতিহাসও শেখ হাসিনা তুলে ধরেন তার বক্তৃতায়। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে ‘জিয়াউর রহমান ও তার পরিবার জড়িত’ মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, সবচেয়ে সুবিধাভোগী তো সে (জিয়াউর রহমান)। ক্ষমতায় আসার পর অপরাধীদের পুরস্কৃত করেছে। তার হাতেই মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসার হত্যা হয়েছে। কি অন্যায়ভাবেএমন দিনও গেছে ১০ জনকে ফাঁসি দিয়েছে জিয়াউর রহমান বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টে। আজকে সেই বিএনপিজামায়াত এদেশের মানুষের ওপর আক্রমণ করে। জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করে তাদের লেলিয়ে দেয়।

সরকারের চালু করা সর্বজনীন পেনশন স্কিম গ্রহণ করতে আইনজীবীদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। ২০০৭০৮ সালের জরুরি অবস্থার সময় পাশে থাকায় আইনজীবীদের ধন্যবাদ জানান তিনি।

বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় থাকবে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িকতার দেশ। প্রত্যেকে যে যার ধর্ম পালন করবে। ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। কেউ কারো ধর্মের ওপর আঘাত হানবে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধক্যান্সার হাসপাতাল চালু হচ্ছে ৫ নভেম্বর
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে আবার গ্যাস সংকট