আন্দোলনে যাচ্ছেন ২৫শ ট্রেন চালক-গার্ড ও টিটিই

রেলওয়ের মাইলেজ নিয়ে বাড়ছে ক্ষোভ, ট্রেন না চালানোর হুমকি চালকদের

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ৩ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৫:৫৩ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ রেলওয়ের রানিং স্টাফদের মাইলেজ ইস্যুতে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে ট্রেন চালক, গার্ড ও টিটিইদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এই নিয়ে প্রতিদিনই কোনো না কোনো এলাকায় ট্রেন চালক (লোকোমাস্টার), গার্ড ও টিটিইরা আন্দোলনে করছেন।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বেশ কয়েকজনের লোকোমাস্টারের সঙ্গে কথা হলে তারা আজাদীকে জানান, মাইলেজ হলো পার্ট অব পে। কাজ করলেই পাই, না করলে পাই না। এটি বৃটিশ আমল থেকে চালু। রানিং স্টাফদের প্রতি ৮ ঘণ্টা কাজ করার পর ১ দিনের মূল বেতনের সমপরিমাণ যে অর্থ প্রদান করা হয় তা-ই মাইলেজ। দেড়শ বছরের পুরোনো রেলওয়ে রানিং স্টাফদের মাইলেজ পদ্ধতি। ১৮৬২ সাল থেকে এ সুবিধা দিয়ে আসছিল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
রেলওয়ের রানিং স্টাফদের মধ্যে রয়েছেন ট্রেনচালক (লোকোমাস্টার), গার্ড ও টিকিট চেকাররা (টিটি)। বর্তমানে ট্রেন চলাচল নিরবচ্ছিন্ন ও স্বাভাবিক রাখতে এসব রানিং স্টাফের দৈনিক নির্ধারিত ১২ কর্মঘণ্টার অতিরিক্ত ডিউটি করতে হচ্ছে। একজন লোকোমাস্টারকে ডিউটি শেষ করার পরেও সবসময় অতিরিক্ত ডিউটির জন্য তৈরি থাকতে হয়। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের ফোন পাওয়া মাত্রই কাজে সাড়া দিতে হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঈদ-পূজার ছুটির সময় লোকোমাস্টারকে ট্রেন নিয়ে ছুটতে হয়। তাদের কোনও ছুটি নেই। সেই বিবেচনায় বৃটিশ আমল থেকেই লোকমাস্টাররা মাইলেজ পান।
কিন্তু গত জুলাইয়ের ১ তারিখ থেকে রেলওয়েতে ডিজিটাল সিস্টেম-আইবাস প্লাস প্লাস পদ্ধতিতে বেতন-ভাড়া পরিশোধের নিয়ম চালু হয়েছে। এই ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর ট্রেনের লোকোমাস্টার, সহাকারী লোকোমাস্টার, গার্ড ও টিটিইরা মাসে ৬ থেকে ৮ হাজার মাইল ট্রেন চালালেও ৩ হাজার মাইলের বেশি ভাতার ব্যবস্থা রাখা হয়নি। যার কারণে রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। এই ডিজিটাল সিস্টেমে রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী প্রতি মাসে ৩ হাজার মাইল ট্রেন চালানোর ভাতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এই জটিলতার বিরুদ্ধে আন্দোলনে যাচ্ছেন রেলওয়ের ২৫শ ট্রেন চালক, সহকারী চালাক, গার্ড ও টিটিই।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে আন্দোলন করেছেন রানিং স্টাফরা। আগামী ১২ ডিসেম্বর সারাদেশ থেকে ঢাকায় গিয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে আন্দোলন করবেন তারা। এতে ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা দেখছেন রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা।
এই ব্যাপারে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মুজিবুর রহমান ভুইয়া আজাদীকে জানান, আমাদের সারাদেশে ১১শ লোকোমাস্টার এবং সহকারী লোকোমাস্টার আছেন। একই সাথে ৬শ জনের মতো ট্রেন চালক (গার্ড) আছেন। এছাড়াও ৮০০ টিটিই আছে। ট্রেন চালানোর ক্ষেত্রে অগ্রভাবে ভূমিকা পালন করে আসছেন এই তিন স্তরের কর্মচারীরা। আমরা রেল সৃষ্টির শুরু থেকে রেলওয়ে কোডের বিধান মতে ৮ ঘণ্টা কাজের জন্য বা প্রতি ১০০ মাইল ট্রেন চালালে ১ দিনের মূল বেতনের সমপরিমাণ মাইলেজ (যা বেতনের অংশ) পেয়ে থাকি। যা ট্রেন চালানোর সময় খাওয়া-দাওয়া বাবদ ব্যয় করতে হয়। এই হিসেবে ৬ থেকে ৮ হাজার মাইল ট্রেন চালালে ৬০ থেকে ৮০ দিনের মাইলেজ ভাতা হিসেবে মাসিক বেতনের সাথে নিয়মিত পেয়ে আসছেন। কিন্তু গত জুলাইয়ের ১ তারিখ থেকে রেলওয়েতে ডিজিটাল সিস্টেম-আইবাস প্লাস প্লাস পদ্ধতি চালু হওয়ায় ৩ হাজার মাইল তথা ৩০ দিনের বেশি মাইলেজ যুক্ত হওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়নি। যার কারণে রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতির কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। রেল সৃষ্টির পর থেকে আমরা যেভাবে বেতনসহ মাইলেজ পেয়ে আসছি-আমরা চাই সেই পদ্ধতি বহাল থাকুক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশপথ নেয়ার আগেই মারা গেলেন ইউপি সদস্য
পরবর্তী নিবন্ধদেশে ২৪ লাখ ২৯ হাজার ৮৫৮ জন প্রতিবন্ধী