স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরার আহ্বান জানানোর পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন অভিযোগ করেছে, আওয়ামী লীগ সভাপতিকে সরকারের কেউ কেউ পুনর্বাসন করতে চাইছে। এমন চেষ্টা করা হলে উপদেষ্টার পদ থেকে টেনে নামানোর হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে।
গতকাল সোমবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সরকার পতনের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক সমাবেশে এসব কথা বলা হয়। সমাবেশে ক্ষমতাচ্যুতির পর ভারতে চলে যাওয়া আওয়ামী লীগ সভাপতিকে প্রধান আসামি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা করতেও অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়। খবর বিডিনিউজের।
ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আজকে উপদেষ্টাদের কেউ কেউ খুনিদেরকে পুনর্বাসন করার বক্তব্য দিচ্ছেন। আমরা মনে করিয়ে দিতে চাই, ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আপনি উপদেষ্টা হয়েছেন। সুতরাং যখন কোনো বক্তব্য দেবেন, আপনার সামনে যেন ৫ আগস্টের গণভবনের চিত্রটা মাথায় থাকে। যারা স্বৈরাচারকে পুনর্বাসন করতে চায়, খুনি হাসিনাকে পুনর্বাসনের মতো বক্তব্য দিতে চায়, আমরা ছাত্র–জনতা যেভাবে তাদেরকে উপদেষ্টা বানিয়েছি, ঠিক একইভাবে গদি থেকে ছুড়ে নামাতে দ্বিধা করব না।
সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আন্দোলন শেষ পর্যন্ত ১৮ থেকে ২১ জুলাই পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে আওয়ামী লীগ সরকারের হিসাবে দেড়শ মানুষের মৃত্যুর পর। ৫ আগস্ট তুমুল গণ আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ছেড়ে যান, সেদিন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার–উজ–জামান জানিয়েছেন, দেশ ছাড়ার আগে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়েছেন তিনি, যদিও আওয়ামী লীগ সভাপতির ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় দাবি করেছেন, তার মা পদত্যাগ করে যাননি।গতকাল সচিবালয়ে এক আয়োজনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরার পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, আপনি ভালো থাকেন, আবার আসেন। আমরা সবাই আপনাকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু গণ্ডগোল পাকানোর মানে হয় না, গণ্ডগোল পাকিয়ে তো লাভ হবে না। এতে লোকজন আরো ক্ষেপে উঠবে। আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠনের পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল্লাহ উপদেষ্টা কারো নাম উল্লেখ না করে বলেন, যারা খুনিদেরকে পুনর্বাসন করার জন্য ব্যাকস্টেজে ম্যাকানিজম করছেন, আপনাদের এই প্লটিংয়ের আমরা বিষদাঁত ভেঙে দেব। আমরা সচেতন করে দিতে চাই, উপদেষ্টারা আপনারা সচেতন হয়ে যান। আপনাদেরকে ছাত্র–জনতা প্রতিহত করবে। সুতরাং খুনিদেরকে পুনর্বাসন করার কোনো ধরনের চিন্তা আপনারা করবেন না। রক্তের দাগ এখনো শুকায় নাই, রক্তের গন্ধ এখনো যায় নাই, মেডিকেলে আহতরা কাতরাচ্ছে। সুতরাং আপনাদের স্পর্ধা হয় কীভাবে জনতাকে অস্বীকার করে খুনিদেরকে পুনর্বাসন করার? শেখ হাসিনার বিচারের দাবি জানিয়ে হাসনাত বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে খুনি হাসিনাকে প্রধান আসামি করে এবং অন্যান্য যারা সহযোগী ছিল এবং ফ্যাসিজমের যারা সহযোগী ছিল তাদেরকে আসামি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করতে হবে।
ক্যাম্পাসে দখলদারত্বের রাজনীতি বন্ধের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের চলে আসা দখলদারত্বের যে রাজনীতি, হল দখলের যে রাজনীতি, গেস্টরুমের যে রাজনীতি, স্বৈরাচারদের সহযোগী হিসেবে থাকার যে রাজনীতি, সে রাজনীতি ক্যাম্পাসে আর কোনোদিন পুনর্বাসন হবে না।
পাল্টা অভ্যুত্থানের চেষ্টা চলছে অভিযোগ করে ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক সার্জিস আলম বলেন, আমরা দেখছি আমলাতন্ত্রের বিভিন্ন পর্যায়ে স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের কিছু হায়না এবং শকুনেরা ক্যু করার চিন্তা করছে। আমরা জানিয়ে দিতে চাই বাংলাদেশের ছাত্র–জনতা যখন এক হয়েছে, তখন আপনাদের এসব ক্যু কুকুরের মতো লেজ গুটিয়ে পালাবে।