আনোয়ারায় ৪ দিন ধরে ৯০ হাজার গ্রাহক অন্ধকারে

পল্লী বিদ্যুতের কর্মচারীদের কর্মবিরতি

আনোয়ারা প্রতিনিধি | সোমবার , ২ জুন, ২০২৫ at ১০:৪০ পূর্বাহ্ণ

টানা বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ার কারণে টানা ৪ দিন ধরে পুরো আনোয়ারার ১১ ইউনিয়নে পল্লী বিদ্যুতের ৯০ হাজার গ্রাহক অন্ধকারে রয়েছেন। এতে উপজেলার সাড়ে ৩ লক্ষাধিক বাসিন্দার ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে। আনোয়ারা হাসপাতালে রোগীরা অন্ধকারে রাত্রি যাপন করছেন। চিকিৎসা ব্যবস্থাও ব্যাহত হচ্ছে। এতে গ্রাহকদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

জানা গেছে, আনোয়ারা পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগে কর্মরত অধিকাংশ টেকনিশিয়ান লাইনম্যান আন্দোলনের নামে কর্মবিরতি পালন করায় কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। ফলে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়েছে।

আনোয়ারা পল্লী বিদ্যুতের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মোরশেদুল আলম ৫০ থেকে ৪০% টেকনিশিয়ান লাইনম্যান কর্মস্থলে অনুপস্থিতির কথা স্বীকার করেছেন। স্থানীয় ও আনোয়ারা পল্লী বিদ্যুৎ অফিস সূত্রে জানা যায়, টানা ৪ দিন আনোয়ারায় বিদ্যুৎ লাইন সচল না হওয়ায়, ব্যবসাবাণিজ্য থেকে শুরু করে, ব্যাংক বীমা, অফিস পাড়া ও এলাকার সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক দৈনন্দিন জীবন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। আনোয়ারা হাসপাতালে রোগীরা বিদ্যুৎবিহীন চরম দুর্ভোগের শিকার বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, আনোয়ারা পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগে ৯০ হাজার গ্রাহক রয়েছেন। গত ৪ দিন ধরে টানা বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো হাওয়ায় উপজেলার হাইলধর ও বটতলী ইউনিয়নে বিদ্যুৎ লাইনের ৪ টি খুঁটি ভেঙে পড়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন ইউনিয়নে বিদ্যুৎ লাইনের তার ছিঁড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। একই সাথে বদলপুরা এলাকায় ৩৩ হাজার লাইনে ত্রুটি দেখা দিলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়ে। উপজেলার উপকূলীয় রায়পুর, জুইদঁন্ডী, বারশত, বরুমচড়া, বারখাইন, হাইলধর, পরৈকোড়া, চাতরি, বৈরাগ, বটতলী ও আনোয়ারা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে বাতাসের তীব্রতায় গাছপালা ভেঙে বৈদ্যুতিক লাইন অচল হয়ে পড়ে। গত বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে গতকাল রবিবার বিকেল পর্যন্ত বিভিন্ন ইউনিয়ন বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

রায়পুর ইউনিয়নের বারআউলিয়ার বাসিন্দা মৌ. জালাল উদ্দিন আনোয়ারীর অভিযোগ, গত ৪ দিন ধরে উপকূলীয় রায়পুরের বারআউলিয়াসহ বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দারা বিদ্যুৎবিহীন অন্ধকারে রাত্রি যাপন করছে। এতে মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাও অনেকটা বন্ধ হয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎবিহীন অন্ধকারে রাতের বেলা উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের মাঝে আতঙ্ক আরো দ্বিগুণ হয়ে পড়ে।

জুঁইদন্ডি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোরশেদুর রহমান চৌধুরী খোকা বলেন, জুঁইদন্ডি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় গত ৪ দিন ধরে বিদ্যুৎ নেই। এতে এলাকার মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপনে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। অতি দ্রুত বিদ্যুৎ লাইন সচল করে জন ভোগান্তি লাঘব করার দাবি জানাচ্ছি।

আনোয়ারা উপজেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি নাছির উদ্দীন শাহ অভিযোগ করে বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের অনিয়ম আর স্বেচ্ছাচারিতায় আমরা এলাকাবাসী অতিষ্ঠ। দুর্যোগে অনুপস্থিত কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।

আনোয়ারা পল্লী বিদ্যুতের ডিপুটি জেনারেল ম্যানেজার মোরশেদুল আলম জানান, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় গাছের ডালপালা ভেঙে তার ছিঁড়ে যাওয়া, বিদ্যুতের খুঁটি নষ্ট হওয়া এমন কি তেত্রিশ হাজার লাইন বিকল হওয়ার কারণে উপজেলার ১১ ইউনিয়নে স্বাভাবিক বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল করা যায়নি। আনোয়ারা সদরসহ কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুৎ লাইন চালু করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, পল্লী বিদ্যুতের কর্মচারীদের আন্দোলনের কারণে ৪০৫০ পার্সেন্ট লাইনম্যান কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। ফলে আমরা জনবল সংকটেরও শিকার হয়েছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআরও ৬ নোটের নকশা প্রকাশ
পরবর্তী নিবন্ধজাপান সফরে সম্পর্ক গভীর ও শক্তিশালী হয়েছে : প্রেস সচিব