ভারতে ‘নিহত’ সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের সংসদীয় আসন ঝিনাইদহ–৪ শূন্য ঘোষণার জন্য আরো অপেক্ষা করবে নির্বাচন কমিশন। এমপি আনারের নিখোঁজ ও খুন হাওয়ার খবর নিয়ে গত এক সপ্তাহ ধরে তোলপাড় চলছে দুই দেশে। তার লাশ পাওয়া না গেলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ঝিনাইদহের ওই সংসদ সদস্য যে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকার, সে বিষয়ে তারা নিশ্চিত হয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি আনারের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে বিবৃতিও দিয়েছেন। কিন্তু সংসদ সচিবালয় বলছে, সরকারের তরফ থেকে ‘আনুষ্ঠানিকভাবে’ এ বিষয়ে তাদের কিছু জানানো হয়নি। সে কারণেই সংসদীয় আসনটি শূন্য ঘোষণার ক্ষেত্রে সময় নেওয়ার কথা বলছেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। তার ভাষায়, এমন ঘটনা অতীতে ঘটেনি। তবে আগামী ৫ জুন অনুষ্ঠেয় সংসদের তৃতীয় অধিবেশনের আগেই বিষয়টির সুরাহা হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন স্পিকার। খবর বিডিনিউজের।
মৃত্যু, পদত্যাগ বা অন্য কোনো কারণে সংসদের কোনো আসন শূন্য হলে সংসদ সচিবালয় থেকে গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে সেই আসন শূন্য (মৃত্যুর তারিখ থেকে) ঘোষণা করা হয়। পরে গেজেটের কপি পাঠানো হয় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে। নির্বাচন কমিশন ওই শূন্য আসনে ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচনের আয়োজন করে। তবে আনোয়ারুল আজীম আনারের ‘মৃত্যু’ সেরকম সাধারণ কোনো ঘটনা নয়। অতীতে কোনো সংসদ সদস্য মারা গেলে বা হত্যার শিকার হলে তার প্রমাণ নিয়ে সমস্যা হয়নি, কারণ তাদের মরদেহ পাওয়া গেছে, আনুষ্ঠানিকভাবে দাফন–সৎকারও হয়েছে।
কিন্তু আনোয়ারুল আজীম আনার ভারতে ‘খুন হয়েছেন’ বলা হলেও তার মরদেহ না মেলায় প্রমাণের প্রশ্নটি আসছে। এখন কী হবে জানতে চাইলে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী রোববার বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা এখনই কোনো সিদ্ধান্ত নেব না। আমরা আরো অপেক্ষা করব।’
এই অপেক্ষার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘এ ঘটনা খুবই ব্যতিক্রমধর্মী। পূর্বে এ ধরনের ঘটনা কখনোই ঘটেনি। আমাদের সামনে কোনো নজির নেই। কার্যপ্রণালী বিধিতেও এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা নেই।’
হবিগঞ্জ–৩ আসনের এমপি থাকা অবস্থায় সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন ২০০৫ সালে। আর ২০১৬ সালে গাইবান্ধা–১ আসনে আওয়ামী লীগের এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে হত্যা করা হয়েছিল।
সেই প্রসঙ্গ টেনে স্পিকার বলেন, তাদের হত্যার বিষয়টি দৃশ্যমান ছিল। তাদের ডেড বড়ি পাওয়া গেছে এবং জানাযা হয়েছে। সে হিসাবে তাদের আসন শূন্য ঘোষণা করা হয়েছিল। সে সময় সরকারের পক্ষ থেকে না জানানো হলেও সংসদ নিশ্চিত হয়েছিল তারা মারা গেছেন। কারণ সবই চোখের সামনে ঘটেছিল। কাজেই ওই ঘটনার সাথে এটা (আনারের মৃত্যু) মেলানোর কোনো সুযোগ নেই। আনারের মৃতদেহ না পাওয়ার কারণেই যে এ জটিলতা তৈরি হয়েছে, সে কথা তুলে ধরে স্পিকার বলেন, তাই আমরা অপেক্ষা করছি। আমাদেরকে কোনো একটা নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জানতে হবে। উনার মৃত্যুসনদ বা কোনো কাগজ আমাদের কাছে আসতে হবে। যেখানে প্রমাণ হবে উনি মারা গেছেন। না হলে আমরা কীভাবে বুঝব উনি মারা গেছেন? সেটার প্রমাণটা কী সেটা আসতে হবে। শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। আগামী ৫ জুন সংসদ অধিবেশনের আগে কার্যউপদেষ্টা কমিটির বৈঠক হবে, সেখানে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে বলেও জানিয়েছেন স্পিকার।
তিনি বলেন, ওই বৈঠকে কমিটির সদস্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকবেন। বাজেট অধিবেশন শুরুর আগেই বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া যাবে বলে আমরা আশা করছি। ঝিনাইদহ–৪ আসনটি আনুষ্ঠানিকভাবে শূন্য ঘোষণা করা না হলেও সংসদের ওয়েবসাইটে আনারের আসন সংক্রান্ত তথ্যের ঘর খালি দেখা গেছে।