বয়সের ব্যবধান ভুলে নাচ, গান, আড্ডা ও সেলফি তোলায় মেতে ছিলেন নবীন–প্রবীণ প্রায় সাড়ে ৪ হাজার চিকিৎসক। গতকাল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) ৬৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সিএমসি ডে’তে এই চিত্র দেখা গেছে। অংশগ্রহণকারী চিকিৎসকরা দিনভর পুরনো সহপাঠীদের সাথে পারস্পরিক খুনসুটি ও ক্যাম্পাস জীবনের নানা ঘটনা বর্ণনায় স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন। অনেক চিকিৎসক চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন, তারাও পুরনো বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে যোগ দেন এই মিলনমেলায়। সারাদিনের ভ্যাপসা গরমও তাদের আনন্দ উদ্দীপনায় বাঁধা হয়নি। ঢোলের তালে তালে গতকাল সকালে চমেক ক্যাম্পাসের আশপাশে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় অংশ নেন কয়েক হাজার চিকিৎসক ও শিক্ষক–শিক্ষার্থী।
চমেক ৩৩ ব্যাচের ডা. মনজুরুল কাদের চৌধুরী বলেন, মনে হচ্ছে এই তো সেইদিন, এই ক্যাম্পাসে দাপিয়ে বেড়িয়েছি। ছাত্রজীবনের কত শত স্মৃতি জমা আছে–তার ইয়াত্তা নেই। যেখানে যাই, আমার মন সব সময় যেন এই চমেকে পড়ে থাকে। পেশাগত কারণে আমি বর্তমানে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেলের নিউরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। সিএমসি ডে উপলক্ষে আজকের এই বর্ণিল আয়োজনটি আমি কোনোভাবে মিস করতে চাইনি। তাই শত ব্যস্ততা স্বত্ত্বেও আমি এখানে ছুটে এসেছি।
চমেক ৪৬ ব্যাচের ডা. ইকবাল মাহমুদ বলেন, চমেক ক্যাম্পাস সব সময় আমাকে অন্যরকম টানে। এই চমেক আমাকে চিকিৎসক বানিয়েছে। এই চমেকের প্রতি আমি সব সময় অন্যরকম টান অনুভব করি। আজকে এখানে অনেক পুরনো বন্ধুদের সাথে দেখা হয়েছে। পেশাগত ব্যস্ততার কারণে অনেকের সাথে দেখা হয় না কিংবা ঠিকমতো খোঁজও নিতে পারি না। তাদের সাথে এক সারিতে আনন্দ উল্লাস করেছি, এই দিনটি সব সময় স্মৃতিতে অমলিন থাকবে।
অপরদিকে গতকাল বিকেল ৪টায় শাহ আলম বীর উত্তম মিলনায়তনে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী পর্ব। ডা. মো. ইমরোজ উদ্দিনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে শিক্ষার্থী–জনতার অভ্যুত্থানে নিহত শহীদের স্মরণে শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়। এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান, চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. ওমর ফারুক ইউসুফ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল হোসেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপ–উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শাহীনুল আলমকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে সংবর্ধিত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান, অধ্যাপক ডা. ওমর ফারুক ইউসুফ, অধ্যাপক ডা. নাজমুল হোসেন, বিএসএমএমইউ’র উপ–উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শাহীনুল আলম, চমেক অধ্যক্ষ ডা. মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন এবং সিএমসি ডে উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. অজয় দেব বক্তব্য রাখেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে ডা. মো. হাবিবুর রহমান, ডা. সাগরিকা শারমিন ও ডা. মেহেরুন্নিসা খানমের উপস্থাপনায় প্রায় সাড়ে চার হাজার নবীন–প্রবীন চিকিৎসক অংশগ্রহণ করেন। স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান শেষে আকর্ষণীয় র্যাফেল ড্র ও নৈশভোজ অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে বর্তমান এবং সাবেক শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।