আদালতের সংখ্যা কম মামলার নিষ্পত্তিও কম

চট্টগ্রামে বিচারপ্রার্থীরা দুর্ভোগে, সব ধরনের আদালতের সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন বলছেন সংশ্লিষ্টরা

হাবীবুর রহমান | সোমবার , ২৩ জুন, ২০২৫ at ১০:৪৯ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেসির আটটি আদালতে মামলার সংখ্যা বেড়ে ৬৩ হাজারে গিয়ে ঠেকেছে। গড় হিসাব করলে দেখা যায়, প্রতিটি মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৭ হাজার ৮৭৫ টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। আদালতের সংখ্যা কম হওয়ায় মামলা নিষ্পত্তির সংখ্যাও তুলনামূলক কম, যার কারণে চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেসিতে বিচারাধীন মামলার পাহাড় জমেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এমন অবস্থায় আদালত সংশ্লিষ্ট থেকে সচেতন নাগরিক, বিশেষ করে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি বিচারাধীন মামলার সংখ্যা কমিয়ে আনতে আদালতের সংখ্যা বাড়ানোর উপর জোর দিয়েছেন। অতি দ্রুত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেসিতে আদালতের সংখ্যা বাড়ানো না হলে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা আরো বহুগুণে বেড়ে যাবে বলেও সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। আইনজীবীরা বলছেন, চট্টগ্রাম মহানগরীতে ১৫ টি থানা যেমন রয়েছে, মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সংখ্যাও অন্তত ১৫ টি হওয়া প্রয়োজন। সেটি করা হলে মামলা নিষ্পত্তি সংখ্যা অনেকাংশে বেড়ে যাবে। ন্যায় বিচারের স্বার্থে সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি বিবেচনায় নিতে পারে। আদালত সূত্র জানায়, ২০২৩ সালের মে পর্যন্ত সময়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেসিতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ছিল ৫২ হাজার ২০৮ টি। বর্তমানে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা হচ্ছে ৬৩ হাজার। এ পরিসংখ্যানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে যে, গত দুই বছরে প্রায় ১১ হাজারের মতো বিচারাধীন মামলার সংখ্যা বেড়েছে।

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মহানগরী হচ্ছে চট্টগ্রাম মহানগরী। এ মহানগরীতে ৭০ লাখের বেশি মানুষের বসবাস। এত মানুষের শহরের ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সংখ্যা মাত্র আটটি, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এর ফলে মামলা জটের সৃষ্টি হচ্ছে। বিচারপ্রার্থী জনগণ চরম দুর্ভোগের শিকার ও ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বর্তমানে বিচার কার্যক্রম স্থবির রয়েছে জানিয়ে জেলা আইনজীবী সমিতি বলছে, এমন অবস্থায় আপাতত অন্তত আরো ৫ টি মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত সৃষ্টি করা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। জেলা আইনজীবী সমিতি জানায়, মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পাশাপাশি চট্টগ্রামে সহকারী জজ আদালত ও যুগ্ম জেলা জজ আদালতের সংখ্যাও বাড়ানো প্রয়োজন। চট্টগ্রামের ৭ টি সহকারী জজ আদালতে ২৩ হাজারের বেশি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। যুগ্ম জেলা জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে ১১ হাজার ৯২৪ টি মামলা। সমিতি উপলদ্ধি করেছে যে, চট্টগ্রামে আরো ৪ টি সহকারী জজ আদালত সৃষ্টি করা প্রয়োজন। আর যুগ্ম জেলা জজের সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন আরো ৪ টি।

চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেসি, সহকারী জজ ও যুগ্ম জেলা জজ আদালতের সংখ্যা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে গত ২০ মে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি। একই চিঠি দেওয়া হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয় এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রাণলয়েও।

চিঠিগুলোতে চট্টগ্রামের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, মহানগর দায়রা জজ ও সিনিয়র জেলা জজ জোর সুপারিশও করেন।

জেলা আইনজীবী সমিতি ও মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেসি সূত্র জানায়, ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের সময় ৭টি আদালতের সমন্বয়ে চলত চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেসির কার্যক্রম। পরে ২০০৮ সালে নতুন একটি আদালত বাড়ানো হয়। গত ১৭ বছর ধরে এ আটটি আদালত দিয়ে চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেসি চলছে।

সমিতি জানিয়েছে, ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত অসংখ্যবার আদালতের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে চিঠি দেওয়া হয়। সার্বিক বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সেক্রেটারি মো. হাসান আলী চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেসির আদালতগুলোতে অসংখ্য মামলা বিচারাধীন রয়েছে। সে হিসেবে আদালতের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। বন্দরনগরী তথা দেশের বাণিজ্যক রাজধানীতে এটি মেনে নেওয়া যায় না। ন্যায়বিচারের স্বার্থে আমাদের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেসিতে আদালতের সংখ্যা বাড়াতে হবে। বিচারাধীন মামলার সংখ্যা কমিয়ে আনতে এছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই। অতীতের ন্যায় সম্প্রতি আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আদালতের সংখ্যা বাড়ানোর আবেদন জানিয়ে চিঠি দিয়েছি। চিঠিতে আদালতের সংখ্যা বাড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। মামলা নিষ্পত্তি বাড়ুক, কমে আসুক বিচারাধীন মামলার সংখ্যা উল্লেখ করে সেক্রেটারি বলেন, আশা করছি, সংশ্লিষ্টরা আমাদের দাবি বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। প্রসঙ্গত, আইনজীবী সমিতিসহ সংশ্লিষ্টদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে সম্প্রতি চট্টগ্রামে নতুন দুটি অর্থঋণ আদালত সৃষ্টি করেছে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিচার বিভাগ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরামুতে খালে নিখোঁজ কৃষকের মরদেহ দুইদিন পর উদ্ধার
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের ফটকে তালা ঝুলিয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ