চান্দগাঁওয়ে ঝগড়া থেকে গুলনাহারের সাথে ছুরি নিয়ে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তার ছেলে রিফাতের গলায় ছুরিটি লাগে। এ সময় রিফাত মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তার গলা দিয়ে রক্ত বের হতে শুরু করে। এতে ফারুক হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে তাৎক্ষণিক গুলনাহারের কাছ থেকে ছুরিটি কেড়ে নিয়ে তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় এলোপাতাড়ি আঘাত করে। কিছুক্ষণ পর মা ও ছেলে রক্তাক্ত অবস্থায় নিচে অচেতন হয়ে পড়ে থাকে।
গতকাল রোববার বিকালে ২য় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু সালেম মোহাম্মদ নোমানের আদালতে চান্দগাঁওয়ে জোড়া খুনের একমাত্র আসামি মো. ফারুকের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা চান্দগাঁও থানার উপ পরিদর্শক সজল কান্তি দাশ আজাদীকে বলেন, এর আগে আসামি ফারুককে রিমান্ডে নেয়া হয়েছিল। রিমান্ড শেষে রোববার ফারুক খুনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
ফারুক জবানবন্দিতে জানান, ‘মা ও ছেলেকে খুনের পর ঘটনাস্থলে কিছুক্ষণ চুপ ছিলেন। পরে মা গুলনাহারের ওড়না ও কাপড়চোপড় দিয়ে তার শরীরের রক্তের দাগগুলো মুছেন। পরে লুঙ্গি দিয়ে শরীর ঢেকে ফারুক তার আরেকটি বাসায় গিয়ে কাপড়চোপড় পাল্টে ফেলেন। এ সময় রক্তের দাগ লেগে থাকা কাপড়গুলো একটি নালায় ফেলে দেন। ওইদিন শাহ আমানত মাজারে রাত্রিযাপন শেষে সকালে খাগড়াছড়ি উদ্দেশ্যে চলে যান। সেখানে একটি গ্যারেজে মাসখানেক কাজ করার পরে ঢাকায় চলে যান। পরে র্যাব তাকে গ্রেপ্তার করে।’
ফারুক জানিয়েছেন, ২০১৩ সালে দুবাই থেকে দেশে ফেরার পর গুলনাহারের স্বামীর মাধ্যমে তার সাথে পরিচয় হয়। একটি সময় গুলনাহারের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত গুলনাহার তার স্বামীকে ডিভোর্স দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাদের মধ্যে ছাড়াছাড়ি না হলেও তার স্বামী তাকে ছেড়ে কুমিল্লায় চলে যান। সেই থেকে গুলনাহারের সাথে কখনো স্বামী-স্ত্রী আবার কখনো ভাই-বোনের পরিচয়ে একসাথে নগরীতে অন্তত ১৭/১৮ টি ভাড়া বাসায় ছিলেন। সর্বশেষ চান্দগাঁও আবাসিক বি-ব্লকের একটি ভাড়া বাসায় তারা থাকেন। এছাড়া ওই বাসা থেকে ১০ মিনিট দূরত্বে ফারুকের আরও একটি বাসা ছিল।’ ফারুক আবাসিকের বি-ব্লকের মুখে ভ্যানে করে বিরিয়ানি ও পান বিক্রি করতেন। গুলনাহার বিভিন্ন সময় নাস্তা তৈরি করে তার মাধ্যমে বিক্রি করতেন। তবে তাদের মধ্যে ঝগড়াঝাটি লেগেই থাকতো।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর সকালে গুলনাহারের বাসায় যাওয়ার পর তাদের মধ্যে ঝগড়াঝাটির এক পর্যায়ে জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে বলে জবানবন্দিতে ফারুক জানান।
জানা গেছে, ওইদিন চান্দগাঁও থানাধীন রমজান আলী সেরেস্তাদার বাড়ির একটি ভাড়া বাসায় গুলনাহার বেগম ও তার ছেলে রিফাত খুন হন। ওই ঘটনায় গুলনাহারের মেয়ে ময়ূরী বাদী হয়ে ফারুকের বিরুদ্ধে চান্দগাঁও থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘসময় পালিয়ে থাকার পর গত ১ অক্টোবর র্যাব-৭ ফারুককে গ্রেপ্তার করে।