আত্মহত্যা বাড়ছে কেন সমাধান কোন পথে

নগরের চেয়ে জেলায় বেশি, ১৫ দিনে ১১ মৃত্যু

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৩০ মে, ২০২১ at ১০:৩৩ পূর্বাহ্ণ

বর্তমান প্রেক্ষাপটে ‘আত্মহত্যা’ আলোচিত একটি শব্দ। চট্টগ্রাম জেলার তুলনায় নগরীর বিভিন্ন এলাকায় আত্মহত্যার ঘটনা বেশি ঘটছে। চলতি মাসের গত ১৫ দিনে ১১টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৮টি নগরীতে ও ৩টি জেলায়।
আইনের চোখে আত্মহত্যা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হলেও তার প্রভাব পড়ছে না সমাজে। কিন্তু আত্মহত্যাই কি সমস্যার সমাধান? সমাজ বিজ্ঞানী ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, মানসিক বিষণ্নতা থেকেই মানুষ আত্মহত্যার চেষ্টা করে। নিজের কাছে, পরিবার ও সমাজের কাছে নিজেকে মূল্যহীন ভাবতে গিয়েই মানুষ পা বাড়ায় আত্মহত্যার দিকে। বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. অনুপম সেন আজাদীকে বলেন, মানুষের মন যখন বিষণ্নতার সর্বোচ্চ পর্যায়ে চলে যায়, একাকীত্ব, হতাশা যখন তাকে ঘিরে ফেলে, যখন একে একে তার সমস্ত কাছের মানুষদের দূরের বলে মনে হয়, পৃথিবীর সমস্ত সুখকর বস্তুও তার মনকে অশান্ত করে, তখন মানুষ এই অশান্ত মনকে শান্ত করার জন্য মুক্তির পথ খুঁজতে থাকে। কেউ কেউ এই মুক্তির পথ হিসেবেই বেছে নেয় আত্মহত্যাকে। যেন তারা মনে করে আত্মার বিসর্জনই শান্তির পুনর্জাগরণ। কিন্তু সত্যি কি মুক্তি মেলে আত্মহত্যায়? কখনো না। মনে রাখা উচিত সব ধরনের সংকট থেকেই বেরিয়ে আসা সম্ভব। এই বিনাশী পথ থেকে পরিত্রাণে পরিবারের, সমাজের, রাষ্ট্রের দায় আছে। প্রয়োজন পারিবারিক বন্ধন, সামাজিক, ধর্মীয় বন্ধন অটুট রাখা।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মিশকাতুর রহমান আজাদীকে বলেন, আত্মহত্যার চেষ্টাকারীকে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে আসতে হবে। এ ধরনের রোগী অবশ্যই সুস্থ হতে পারে। তবে এর সবচেয়ে বড় ওষুধ হলো, যে কারণে আত্মহত্যার চেষ্টা তা সমাধানের চেষ্টা করা। তা যদি না করা যায়, তবে ওষুধে সে হয়ত কিছুদিন সুস্থ থাকবে। কিন্তু পুনরায় তার মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা জেগে উঠতে পারে।
বাংলাদেশে বিভিন্ন গবেষণায় আত্মহত্যার যেসব কারণ উঠে এসেছে তার মধ্যে রয়েছে যৌতুক ও পারিবারিক নির্যাতন, দাম্পত্য কলহ, উত্যক্ত করা, প্রেম ও পরীক্ষায় ব্যর্থতা, দারিদ্র ও বেকারত্ব, আত্মহত্যার উপকরণের সহজপ্রাপ্যতা, মানসিক অসুস্থতা, জটিল শারীরিক রোগ যন্ত্রণা, নগরায়ন ও পরিবারতন্ত্রের বিলুপ্তি এবং নৈতিক অবক্ষয় ও সামাজিক অস্থিরতা।
চলতি মাসে গত ১৫ দিনে নগরী ও জেলায় ১১টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে ভিন্ন ভিন্ন কারণে। নগরীর বন্দর থানার আজাদ কলোনিতে ২৭ মে গভীর রাতে প্রেমিকের সঙ্গে ঝগড়া করে সুমি আক্তার (১৪) নামে এক কিশোরী আত্মহত্যা করেছে। ২৪ মে ইপিজেড থানা এলাকায় ছেলের চিকিৎসার খরচ জোগাতে না পেরে মো. শাহীন (৪২) নামে এক ব্যক্তি আত্মহত্যা করেছেন। একই দিন বেলা আড়াইটায় জামালখান এলাকায় নন্দিতা দাশ (২৯) নামে এক গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছেন। ২৩ মে পাহাড়তলী থানার সাগরিকা রোডের মুরগির ফার্ম এলাকার একটি ভাড়া ঘর থেকে নুরজাহান আক্তার (২৫) নামে এক গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ২১ মে বন্দর থানার কলসি দিঘির পাড়ে মো. জসিম (৪২) নামে এক চায়ের দোকানদার আত্মহত্যা করেছেন। ২০ মে আনোয়ারায় আঁখি আখতার নামে ১৫ বছরের এক কিশোরী বিষপানে আত্মহত্যা করেছে। ১৮ মে চান্দগাঁও থানাধীন খাজা রোডে লিমা আক্তার (২০) নামে এক গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ১৬ মে আকবরশাহ থানাধীন ইস্পাহানি রেলগেট এলাকার জনতা কলোনিতে আত্মহত্যা করেছেন ফারিয়া আক্তার (১৮) নামে এক ছাত্রী। ১৫ মে বোয়ালখালীর চরণদ্বীপ ফখিরাখালী এলাকায় এক প্রবাসীর স্ত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। একই দিন বাঁশখালীর কুতুবখালী এলাকা থেকে এক কিশোরীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওইদিন ইপিজেড থানাধীন আকমল আলী সড়কের একটি বাসায় বনানী রাণী নামে এক গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনালায় পাঁচ ফুট লম্বা অজগর
পরবর্তী নিবন্ধসাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী আজ