টানা ১০ দিনের দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া কেটে যাওয়ার পর অবশেষে গতকাল শনিবার থেকে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা শুরু হয়েছে। ইলিশসহ অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীর প্রজনন মৌসুম উপলক্ষে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার উপর টানা ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে গত ২৪ জুলাই কক্সবাজারের মাছধরা ট্রলারগুলো সাগরের উদ্দেশে রওয়ানা দিলেও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে মাছ না ধরেই ঘাটে ফিরে আসে। গতকাল শনিবার থেকে ফের মাছ ধরা শুরু হওয়ায় দীর্ঘ আড়াই মাস পর বাজারে এসেছে সামুদ্রিক মাছ। তবে গতকাল কেবল পাঁচকাড়া (পাঁচ প্রকারের) জালের মাছগুলোই বাজারে এসেছে। ইলিশ জালের বোটগুলো গভীর সাগর থেকে মাছ ধরে ঘাটে ফিরতে আরো ৪–৫ দিন সময় লাগতে পারে বলে জানান জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন।
তিনি বলেন, কক্সবাজারে ছোট বড় ৭ সহস্রাধিক যান্ত্রিক বোট রয়েছে। গত ২৪ জুলাই মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা শেষে কক্সবাজারের প্রায় অর্ধেক ট্রলার সাগরের উদ্দেশে রওয়ানা দেয়। কিন্তু দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে কয়েকটি ট্রলার ঝুঁকি নিয়ে সাগরে গেলেও অধিকাংশ ট্রলার কয়েকদিন ধরে মোহনায় অপেক্ষার পর পুনরায় ঘাটে ফিরে আসে। গত ২৬ জুলাই গভীর সাগরের গুলীদ্ধার নামক স্থানে মাছ ধরার সময় এফবি মায়ের দোয়া নামের একটি ট্রলার ডুবে যায়। এই ঘটনায় ২৫ জেলে উদ্ধার হলেও অপর ২ জেলে এখনও নিখোঁজ রয়েছে।
ট্রলার মালিকরা জানান, সাগরে মাছ ধরা বড় নৌকায় ৩০ থেকে ৪০ জন এবং ছোট নৌকায় ৫ থেকে ১৭ জন জেলে থাকে। আবার কঙবাজার শহরতলীর দরিয়ানগর ঘাটের ইঞ্জিনবিহীন ককশিটের বোটে থাকে মাত্র ২ জন জেলে। ট্রলারগুলোর মধ্যে ইলিশ জালের বোটগুলো ৮–১০ দিনের রসদ নিয়ে এবং তাইল্যা জালের বোটগুলো এক সপ্তাহের রসদ নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যায়। আবার ৭–৮ আঙুলের ফাঁসযুক্ত ফইল্যা জালের বোটগুলো সাগরে মাছ ধরতে যায় ৫–৬ দিনের রসদ নিয়ে। এই বোটগুলো রূপচান্দা জাতীয় মাছ ধরে। এছাড়া চাউপ্পা জাল, ডোবা জাল, চামিলা জাল ও চোখফোলা জালের বোটগুলো মাত্র একদিনের রসদ নিয়ে সাগরে যায় এবং মাছ ধরে দিনে দিনেই ফিরে আসে। এই ধরনের জালের বোটগুলো সাগর উপকূলে ছোট প্রজাতির মাছ ধরে, যাকে স্থানীয় ভাষায় পাঁচকাড়া মাছ বলা হয়। এই ধরনের বোটগুলোতে একেক মৌসুমে একেক প্রজাতির মাছ বেশি ধরা পড়ে। শনিবার থেকে এই পাঁচকাড়া মাছগুলো বাজারে আসছে। তবে এই মাছগুলো স্থানীয় বাজারেই বিক্রি হয়।
কঙবাজার শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারীঘাট মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী বলেন, গত ২০ মে থেকে মাছধরা ও পরিবহণের উপর নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়ার পর শনিবার পর্যন্ত গত আড়াই মাসে শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারীঘাটে একটি সামুদ্রিক মাছও আসেনি।
জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতি জানায়, বঙ্গোপসাগরে বিভিন্ন ধরনের জাল দিয়ে মাছ ধরা হয়। এরমধ্যে ইলিশ ধরা হয় ৪ থেকে ৫ আঙুলের ফাঁসযুক্ত সুতার জাল দিয়ে, যেটি ভাসা জাল নামেই জেলেদের কাছে পরিচিত। আর সাগর থেকে তাইল্যা ও কোরাল মাছ ধরা হয় ২ থেকে ৩ আঙুলের ফাঁসযুক্ত এক ধরনের রক জাল দিয়ে, যেটি তাইল্যা জাল নামেই পরিচিত।