কষ্ট যে কত কষ্টকর হয় তা বুঝতে হলে প্রতিদিন ভোর ৫টার আগে ঘুম থেকে জাগতে হবে। একদিনও বাদ যাবে না, প্রতিদিনই। একদিন দুইদিন নয়, টানা ৪০ বছর। জ্বী, টানা ৪০ বছর প্রতিদিনই তিনি ভোর ৫টার আগে ঘুম থেকে জেগে উঠতেন। কথাগুলো কলমের খোঁচায় লিখে ফেললাম, কিন্তু কষ্টটা যে কী পরিমাণ কষ্টকর ছিল তা বুঝাতে পারলাম বলে মনে হচ্ছে না। কোনো অভাবের তাড়নায় নয়, চাকরি রক্ষার তাগিদে নয়, শুধু একটি পত্রিকাকে বাঁচাতে, একটি স্বপ্নের বাস্তবায়ন করতে রাতের পর রাত এভাবে ভোর ৫ টায় পথে নামা সত্যিই কঠিন। অথচ প্রতিটি দিন স্ত্রী সন্তানদের ঘুমে রেখে তিনি নিজে গাড়ি চালিয়ে আসতেন অফিসে। শত শত হকারের হাতে নিজের প্রিয় পত্রিকাটি তুলে দেয়ার কার্যক্রম তদারকি করতেন। কষ্টকর এই কাজটি তিনি করেছেন অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে, পরম মমতায়। কনকনে শীত বা তুমুল বর্ষায়ও ছেদ পড়েনি এ কাজে। বিদেশ বা দেশের অন্যত্র না গেলে একেবারে ঘড়ির কাটা ধরে প্রতিদিনই ভোর ৫টায় তিনি হাজির হতেন অফিসে। ভাবতে আশ্চর্য লাগে যে, ভোর ৫ টায় অফিসে পৌঁছাতে তাঁকে আরো কতক্ষণ আগে কনকনে শীতের মাঝেও আরামের বিছানা ছাড়তে হতো! কাজ শেষে ঘরে ফিরতে সূর্য উঠে যেতো। ঠিক দশটায় আবারো অফিসে এসে বসতেন হিসেবপত্র নিয়ে। রাতে ৪ ঘন্টার বেশি ঘুমুতে পারেননি তিনি। চোখের পাতা খুলতে কষ্ট হলেও ৪০ বছরে একদিনও মনভরে ঘুম উনার চোখে জোটেনি। কঠোর এক যুদ্ধের মাঝে কাটতো তাঁর এক একটি দিন, এক একটি রাত। আহা, কষ্টে কষ্টে বিবর্ণ দিনরাত্রি। আর কষ্টকর এই যুদ্ধটি তিনি করতেন অন্যরকমের এক আনন্দ নিয়ে, বিভোর হয়ে থাকতেন সেই আনন্দের মাঝে। এই আনন্দটা ছিল তাঁর বাবার স্বপ্ন পূরণ। বলছিলাম, এম এ মালেকের কথা। যাঁর প্রথম প্রেমই দৈনিক আজাদী। দৈনিক আজাদীকে অনন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার পেছনে একজন এম এ মালেকের ৬২ বছরের যে সংগ্রাম তা পাঠকদের জানাতেই সম্পাদকের অগোচরেই এই লেখা।
মানুষের অভাব–অভিযোগ, সমস্যা ও সম্ভাবনাসহ চট্টগ্রামের কথা তুলে ধরতে ১৯৬০ সালে আত্মপ্রকাশ ঘটে দৈনিক আজাদীর। এ অঞ্চলের প্রথম মুসলিম ইঞ্জিনিয়ার মরহুম আলহাজ্ব আবদুল খালেক পত্রিকাটি প্রকাশ করেন। চট্টগ্রামের মাটি ও মানুষের জন্য যার হৃদয়ে ছিল অগাধ টান। ইলেক্ট্রিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং এর মতো বিষয়ে উচ্চ শিক্ষিত হলেও মুসলিম জনগোষ্ঠীর ভাগ্যেন্নয়নে তিনি সরকারি চাকরি ছেড়ে গড়ে তুললেন লাইব্রেরি, ইলেক্ট্রিক প্রেস, সাপ্তাহিক পত্রিকা–এসব। মুসলমানদের হৃদয়ে আলো ছড়াতে, এ অঞ্চলের মানুষকে জাগাতে, শিল্প– সংস্কৃতির লালনে নিরলসভাবে কাজ করতেন তিনি। নিখাদ ধার্মিক এই মানুষটির হৃদয় ছিল সত্যিকারের ইসলামের আলোতে আলোকিত। তিনি ধার্মিক ছিলেন, কিন্তু ধর্মান্ধ ছিলেন না। তাঁর গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিভিন্ন পদে নানা ধর্মের লোকের কর্মক্ষেত্র হয়ে ওঠা এর বড় প্রমাণ। তিনি ছিলেন নিখাদ দেশপ্রেমিক, চট্টগ্রামপ্রেমি। চট্টগ্রামের মানুষের জন্য তাঁর বুকের গভীরে অন্যরকমের ভালোবাসা কাজ করতো। জীবনের শেষ সময়ে এসে তিনি একটি দৈনিক পত্রিকা প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিলেন। প্রকাশ করলেন দৈনিক আজাদী। কিন্তু পত্রিকা প্রকাশনার ২ বছর ২০ দিনের মাথায় তিনি ইন্তেকাল করেন। কলেজ পড়ুয়া মাত্র ২২ বছর বয়সী একমাত্র পুত্র এম এ মালেকের হাতে দিয়ে যান তাঁর দীর্ঘদিনের লালিত আদর্শ, সাজানো গোছানো সংসার, কোহিনুর ইলেক্ট্রিক প্রেস এবং দৈনিক আজাদী। সংসারে কোনো অভাব ছিল না। কিন্তু এতো অল্প বয়সে একটি পত্রিকা প্রকাশনার ভার বহন করা শুধু সেকালে নয়, একালেও বেশ কঠিন। আজ থেকে ৬২ বছর আগের প্রেক্ষাপটে একটি দৈনিক পত্রিকা প্রতিদিন প্রকাশ করে পাঠকের হাতে পৌঁছানোর কসরত যে কী কঠিন হতে পারে তা আজ কল্পনা করা আরো কঠিন। কিন্তু পিতার মৃত্যুর পর সেই কঠিন কাজটিতেই হাত দিলেন এম এ মালেক। তিনি দৈনিক আজাদীর প্রকাশনা অব্যাহত রাখলেন। নতুন উদ্যোমে মাঠে নামলেন যাতে পিতার রেখে যাওয়া পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে না যায়। তিনি হাল ধরলেন পত্রিকার। পত্রিকা ছাপানো থেকে সাংবাদিক এবং কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন–ভাতার টাকা পয়সা যোগাড়ের দায়িত্ব নিজের কাঁধে রেখে বড় বোনের স্বামী ও মামাত ভাই অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদকে দিলেন সম্পাদনার দায়িত্ব। যুগলবন্দি এক তৎপরতায় তিল তিল করে গড়ে উঠতে থাকে দৈনিক আজাদী।
অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদের মতো নির্লোভ, নিরহংকারী, সৎ একজন সাংবাদিকের দক্ষ নির্দেশনায় দৈনিক আজাদী হয়ে ওঠে চট্টগ্রামের মানুষের আস্থা ও ভরসার প্রতীক। সাংবাদিকতার নীতি–নৈতিকতা এবং আদর্শের সাথে আপোষ না করা দৈনিক আজাদী হয়ে উঠে পাঠকনন্দিত, পরিণত হয় চট্টগ্রামের মুখপত্রে। আর পেছন থেকে সব রসদের যোগান দিতে থাকেন এম এ মালেক। দৈনিক আজাদীর ৬৪ বছরের ইতিহাসে কোনো মাসের বেতন আটকা পড়ার ঘটনা ঘটেনি। দেশ কিংবা পৃথিবীর তাবত তাণ্ডব বা বিপর্যয়ের মাঝেও মাসের ৭ তারিখে কর্মচারী এবং ৮ তারিখে সাংবাদিক ও কর্মকর্তাদের বেতন ভাতা প্রদান করা হচ্ছে গত ৬৪ বছর ধরে। ৭ বা ৮ তারিখ থেকে কখনো তা ১০/১২ তারিখে যাওয়ারও রেকর্ড নেই। সাংবাদিক কিংবা কর্মকর্তা কর্মচারীদের নিজের পরিবারের সদস্য বানিয়ে বিশাল এক আজাদী পরিবার গড়ে তোলার এক অনন্য কারিগর এম এ মালেক। এ লেখা আজাদী পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য।
শুধু দেশেই নয়, দুনিয়ার সংবাদপত্রের ইতিহাসেও টানা ৬৪ বছর একটি পত্রিকার আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তা নিয়ে টিকে থাকার নজির খুব বেশি নেই। দৈনিক আজাদী সেই হাতে গোনা পত্রিকারগুলোর মধ্যে একটি। তাও আবার রাজধানী নয়, একটি মফস্বল শহর থেকে প্রকাশিত হওয়া দৈনিক আজাদীর এই সাফল্য বহু সাংবাদিক এবং সংবাদপত্র মালিকের গবেষণার বিষয়। সেই গবেষণা যেভাবেই হোক না কেন, দেশের সবচেয়ে প্রবীণ সম্পাদক এম এ মালেকের কৃতিত্ব সেখানে উজ্জ্বলতম। এম এ মালেকের মতো সর্বজন শ্রদ্ধেয়, সকল মহলে গ্রহণযোগ্য, সততার জীবন্ত কিংবদন্তী, দূরদর্শী এবং কর্মঠ মানুষ আছেন বলেই গত ৬৪ বছর দৈনিক আজাদী সমানতালে আলো ছড়াতে সক্ষম হয়েছে। সক্ষম হয়েছে অন্যদের থেকে এগিয়ে থেকে সকলকে পথ দেখাবার।
চট্টগ্রামের সংবাদপত্র শিল্পের বাতিঘর এম এ মালেক, আজাদীর মোহাম্মদ আবদুল মালেক। সাংবাদিকতায় অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদক পেয়েছেন তিনি। দৈনিক আজাদীর সাবেক সম্পাদক, চট্টগ্রামের শুভ্র বিবেকখ্যাত অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ পেয়েছিলেন দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক স্বাধীনতা পুরস্কার। দেশের ইতিহাসে দৈনিক আজাদীই একমাত্র পত্রিকা যেটির দুজন সম্পাদক রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ স্বাধীনতা পদক এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ একুশে পদক লাভ করেছেন।
এম এ মালেকের ভোরে জেগে ওঠা শেষ হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগে। গত বেশ কয়েক বছর তিনি আর ভোরে অফিসে আসেন না। কিন্তু ২০০৩ সালে সাবেক সম্পাদক অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদের মৃত্যুর পর সম্পাদকের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন তিনি। তখন থেকে শুরু হয়েছে তাঁর রাত জাগা। ১৯৪০ সালের ২৯ নভেম্বরে জন্মগ্রহণকারী এম এ মালেক এই ৮৪ বছর বয়সেও রাত একটা–দেড়টা পর্যন্ত জেগে থেকে সংবাদ ঠিকঠাক করা, হেডিং ঠিক করাসহ নানা কাজে ব্যস্ত থাকেন। আমাদের চমকে দিয়ে দুর্দান্ত সব হেডিং বের হয় তাঁর অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে। “আঁরার ইউনূস নোবেল পাইয়্যে” বা “শ’অর ডুবি গেইয়্যে” হেডিংগুলো যখন এম এ মালেক দেন, তখন আমরা পুলকিত হই, লুফে নেন পাঠক। দৈনিক আজাদী আরো আপন হয়ে ওঠে চট্টগ্রামের, স্বজন হয়ে ওঠে অনেকের। দৈনিক আজাদীকে পাঠক নন্দিত কিংবা চট্টগ্রামের দর্পন বানানোর যে মহাযজ্ঞ বছরের পর বছর চলে আসছে তার নিপুন শিল্পী এম এ মালেক।
শুধু সংবাদপত্র শিল্পেই নয়, এম এ মালেকের অনন্য অবস্থান চট্টগ্রামের নানা অঙ্গনে। অনুকরণীয় এই মানুষটি শুধু দৈনিক আজাদীকেই সফলতার স্বর্ণ শিখরে পৌঁছে দেননি, সাহিত্য, শিল্প–সংস্কৃতিসহ সমাজের নানা শাখার লালন ও বিকাশেও রেখে চলেছেন অনন্য ভূমিকা। মানুষের ভালোলাগার সবগুলো ক্ষেত্রেই রয়েছে তাঁর উজ্জ্বল বিচরণ। একজন প্রখ্যাত সমাজসেবক হিসেবেও চট্টগ্রামে ভিন্ন উচ্চতায় রয়েছেন এম এ মালেক। তিনি লায়ন্স ক্লাবস ইন্টারন্যাশনাল এর প্রাক্তন গভর্নর, চট্টগ্রাম চক্ষু ইনফার্মারি অ্যান্ড ট্রেনিং কমপ্লেঙ (সিআইইটিসি) এর চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ন্যাশনাল সোসাইটি ফর দ্য ব্লাইন্ড (বিএনএসবি) এর চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এবং চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের প্রাক্তন পরিচালক, চট্টগ্রাম ক্লাব লিমিটেড এবং চট্টগ্রাম সিনিয়রস ক্লাব লিমিটেডের প্রাক্তন চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সাবেক বোর্ড মেম্বার, চট্টগ্রাম কো–অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির সাবেক চেয়ারম্যান , বাংলাদেশ সংবাদপত্রের মালিক সমিতি (নোয়াব) নির্বাহী সদস্য, বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল এবং বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার বোর্ড সদস্য, পূর্বাঞ্চলীয় সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাবেক প্রেসিডেন্ট, চট্টগ্রাম রাইফেল ক্লাবের ভাইস চেয়ারম্যান এবং লাইফ মেম্বার, চট্টগ্রাম বোট ক্লাব লিমিটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট, ভাটিয়ারি গল্ফ অ্যান্ড কান্ট্রি ক্লাব লিমিটেডের সদস্য, চট্টগ্রাম মা–শিশু ও জেনারেল হাসপাতাল এবং চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক এসোসিয়েশনের লাইফ মেম্বার, চিটাগাং কমার্স কলেজ প্রাক্তন ছাত্র সমিতির সভাপতি, চিটাগাং কলেজিয়েটস স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র সমিতির সভাপতিসহ চট্টগ্রামের অসংখ্য সামাজিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত। পিতা মরহুম আলহাজ্ব আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ারের নামে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাবৃত্তি প্রদান করছেন গত প্রায় বিশ বছর ধরে। এছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত সকল অন্ধ ছাত্র–ছাত্রীর প্রত্যেককেই তিনি আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। চারদিকে টাকা পাচার এবং কর ফাঁকির মহোৎসবের মাঝে একজন এম এ মালেক প্রায় প্রতি বছরই দেশের সাংবাদিকদের মধ্যে সর্বোচ্চ করদাতা নির্বাচিত হন। ফাঁকি দেয়া কিংবা লোপাট করার বহু কৌশল থাকলেও তিনি অনৈতিক কোনো সুবিধা কখনো নেন নি। কেউ বললেও এড়িয়ে গেছেন। নিজের পথে মাথা উঁচু করে অতি বিনয়ীভাবে পথ চলেন।
জীবনব্যাপী পরিচালিত সামাজিক কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতায় বর্তমানে এম এ মালেক চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল ক্যান্সার ইন্সটিটিউট ও রিসার্চ সেন্টার প্রতিষ্ঠায়ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। চট্টগ্রামের প্রথম পূর্ণাঙ্গ এই ক্যান্সার হাসপাতাল বাস্তবায়ন কমিটির চেয়ারম্যান তিনি। এম এ মালেক ব্যক্তিগত তহবিল থেকে এই হাসপাতালের জন্য এক কোটি টাকা অনুদান দিয়ে চট্টগ্রামের স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। চট্টগ্রামের চিকিৎসা সেবায় বিপ্লব সাধন করা ইম্পেরিয়াল হাসপাতালেরও অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তিনি।
শুধু সাংবাদিকতাই নয়, চট্টগ্রামের চিকিৎিসা সেবা, অন্ধত্ব দূরীকরণ, দারিদ্র্য বিমোচন এবং শিক্ষার প্রসারে এম এ মালেকের অনন্য ভূমিকা আরো বহু বহু বছর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে মানুষ।
বিসিসিকে দেয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে এম এ মালেক বলেছিলেন, ‘আমি আমার স্বপ্ন ছুঁয়ে ফেলেছি।’ সেই স্বপ্নটা কাড়ি কাড়ি টাকার মালিক হওয়া নয়, সেই স্বপ্ন ছিল পিতার রেখে যাওয়া পত্রিকাটিকে বাঁচিয়ে রাখা। তিনি বলেন, মানুষ যাতে বলতে না পারে যে, ইঞ্জিনিয়ার সাহেব একটি পত্রিকা দিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু একমাত্র পুত্র এতোই অথর্ব যে বাবার রেখে যাওয়া পত্রিকাটি চালাতে পারেনি।’ শুধুমাত্র বাবার রেখে যাওয়া স্বপ্নটিকে জিইয়ে রাখতে ৪০ বছর যিনি রাতে মন ভরে ঘুমুতে পারেননি।
দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক পিতার স্বপ্ন পূরণে রাতের পর রাত মন ভরে ঘুমাতে পারেন নি, কিন্তু সবার অলক্ষ্যে আরো একজন মানুষের ঘুমও উবে গিয়েছিল। তিনি এম এ মালেকের সহধর্মিনী, সাবেক লায়ন্স ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর মিসেস কামরুন মালেক। ১৪ ফেব্রুয়ারি “ভ্যালেন্টাইন্স ডে”তে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে হাতে হাত রাখা এই দুই মানব–মানবী শহরের ঈর্ষনীয় যুগল। অনেকেই হয়তো আশ্চর্য হয়ে প্রশ্ন করবেন যে, রাতের পর রাত কী করে একজন নারী এমন “অত্যাচার” হজম করে প্রায় ৬০ বছর ধরে সংসার করছেন? এই প্রশ্নের উত্তর বিভিন্ন ঘরোয়া আড্ডায় মিসেস কামরুন মালেক হাস্যচ্ছলে দিয়েছেন যে, বিয়ের প্রথমদিনই তিনি বুঝে গিয়েছিলেন মালেক সাহেবের প্রথম প্রেমই দৈনিক আজাদী। তাই মানুষটিকে ভালোবাসতে হলে দৈনিক আজাদীকেই আগে ভালোবাসতে হবে, আগলে রাখতে হবে। আর তাই ঘরে থেকেও তিনি এম এ মালেকের পাশে থেকে আজাদীকে ভালোবেসেছিলেন অন্তর দিয়ে। তাই স্বামীর প্রথম প্রেম দৈনিক আজাদীকে আগলে রাখার কাজটিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন গত প্রায় ৬০ বছর ধরে।