টানা চারটি ওয়ানডে সিরিজে হারের পর পঞ্চম সিরিজে এসে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে একরকম উড়িয়ে দিয়েই সিরিজ শুরু করেছিল টাইগাররা। দ্বিতীয় ম্যাচেও জয়ের প্রায় কিনারায় পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু নির্ধারিত ১০০ ওভারের ম্যাচে জয়ের একেবারে কিনারায় গিয়ে টাই করে বসে বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত সুপার ওভারের ম্যাচে অপ্রত্যাশিতভাবে হেরে বসে। ফলে এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ জেতা হয়নি–আর তাতেই সিরিজ জয়টা ঝুঁকির মুখে পড়ে গেল বাংলাদেশের। আর সিরিজের তৃতীয় ম্যাচটি সিরিজ নির্ধারণের জন্য একরকম ফাইনালে পরিণত হলো। এখন সেই ফাইনালে বাংলাদেশ পেরে উঠে নাকি টানা পঞ্চম সিরিজ হারের লজ্জায় ডুবে সেটাই দেখার অপেক্ষা। মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে দুপুর দেড়টায় শুরু হবে ম্যাচটি। যা সরাসরি প্রচার করবে নাগরিক টিভি এবং টি–স্পোর্টস। আরব আমিরাতে আফগানিস্তানের কাছে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর নিজেদের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পেয়ে সিরিজ জয়ের প্রাথমিক প্রস্তুতি সেরে রেখেছিল বাংলাদেশ টার্নিং উইকেট বানিয়ে। নানা সমালোচনার পরও সিরিজের প্রথম ম্যাচে দারুণ এক জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। সিরিজে হয় শুভ সূচনা। কিন্তু ক্যারিবীয়রা যেন বিষয়টি ধরে ফেলে। তারাও স্পিন শক্তি বাড়াতে দেশ থেকে উড়িয়ে আনে আকিল হোসেইনকে। শুধু উড়িয়েই আনেনি, রাতে ঢাকায় নেমে পরদিন দুপুরে নেমে পড়েন মাঠে ম্যাচ খেলতে। সেই আকিলই শেষ পর্যন্ত জয়ের নায়ক বনে যান সুপার ওভারে বল করে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ মানেই পেস বোলারের রাজত্ব। চার কিংবা পাঁচ জন পেস বোলার নিয়ে খেলার রেকর্ড রয়েছে তাদের। সেই দলটি কিনা ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে পুরো ৫০ ওভার বল করাল স্পিনারদের দিয়ে। যা একটা বিশ্ব রেকর্ড ওয়ানডে ক্রিকেটে। অথচ ওয়েস্ট ইন্ডিজ তুলনামূলকভাবে স্পিন খেলতে সমস্যায় পড়ে জেনেও বাংলাদেশ সেটা করেনি। তাই ঘটনা বহুল এবং রোমাঞ্চকর দ্বিতীয় ওয়ানডে শেষে এখন ওয়েস্ট ইন্ডিজও তাকিয়ে আছে সিরিজ জয়ের দিকে।
সেই এশিয়া কাপ, তারপর আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ, এরপর নিজেদের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ। সর্বত্রই বাংলাদেশের দুঃস্বপ্নের নাম ব্যাটিং। দলের টপ অর্ডার ব্যাটাররা রয়েছে ফর্মহীনতায়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে করেছিল ২০২ রান। তাও শেষ দিকে রিশাদ হোসেনের ১৩ বলে ২৬ রানের কল্যাণে। দ্বিতীয় ম্যাচে করে ২১৩ রান। সেটাও শেষ দিকে রিশাদ হোসেনের ১৪ বলে ৩৯ রানের সুবাধে। লম্বা সময় পর দলে পিরে সৌম্য সরকার প্রথম ম্যাচে ছিলেন ব্যর্থ। দ্বিতীয় ম্যাচে করেছিলেন ৪৫। যা বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর। প্রথম ম্যাচে তাওহিদ হৃদয়ের হাফ সেঞ্চুরি আর মাহিদুল ইসলাম অংকনের ৪৬ রান ছাড়া বাকি কেউ উল্লেখ করার মতো কিছু করতে পারেনি। তাই আজকের ম্যাচে ব্যাটাররা নিজেদের কতটা ফিরে পায় সেটা বড় প্রশ্ন। তবে দুই ম্যাচেই বোলাররা নিজেদের কাজটা সফলতার সাথে করেছেন। প্রথম ম্যাচে রিশাদ একাই উড়িয়ে দিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। দ্বিতীয় ম্যাচেও তিন উইকেট নিয়েছেন রিশাদ। সাথে অপর দুই স্পিনার নাসুম আহমেদ এবং তানভীর ইসলামও সফল ছিলেন বল হাতে। যদিও মিরপুরের ঘুর্ণি উইকেটে পেসারদের বলতে গেলে করার তেমন কিছু নেই। তাই আজকের ম্যাচে মূল ভূমিকাটা ব্যাটারদেরকেই পালন করতে হবে।
সিরিজের প্রথম ম্যাচে উইকেটের আচরণ ঠিকভাবে ধরতে পারেনি ক্যারিবীয়রা। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে এসে ঠিকই ধরে ফেলে। আর তাতেই সিরিজে ফিরেছে তারা। কাজেই আজকের ম্যাচেও যে ক্যারিবীয়রা সর্বশক্তি দিয়ে লড়াই করবে সেটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। কারণ দ্বিতীয় ম্যাচে জিতে এখন বেশ আত্মবিশ্বাসী ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এদিকে সিরিজের শেষ ম্যাচের জন্য গতকাল নিজেদের প্রস্তুতিতেই ব্যস্ত সময় পার করেছে টাইগাররা। সকাল থেকে মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুশীলন করেছে বাংলাদেশ। তপ্ত রোদ আর গরম আবহাওয়া উপেক্ষা করে ঘাম ঝরান সৌম্য–মিরাজরা। শুরুতে হালকা অনুশীলন থাকলেও কিছুক্ষণ পর শুরু হয় ব্যাটিং–বোলিং অনুশীলন। ইনডোরে ক্রিকেটারদের বেশ মনোযোগী হয়ে অনুশীলন করতে দেখা যায়। দ্বিতীয় ওয়ানডের ভুলগুলো কাটিয়ে উঠতে কোচিং স্টাফরা বিশেষ মনোযোগ দিচ্ছে টপ অর্ডারের স্থিতিশীলতা ও ডেথ ওভারে বোলিং পরিকল্পনায়। আজ সে সব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার পালা।











