বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা আজ রোববার। যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের বৌদ্ধ সমপ্রদায় আজ বুদ্ধ পূর্ণিমা উদযাপন করবে। এ উপলক্ষে দেশজুড়ে বৌদ্ধ বিহারগুলোতে বুদ্ধ পূজা, প্রদীপ প্রজ্বলন, শান্তি শোভাযাত্রা, ধর্মীয় আলোচনা সভা, প্রভাত ফেরি, সমবেত প্রার্থনা, আলোচনা সভা, ধ্যান ও বুদ্ধ পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও মানবজাতির সর্বাঙ্গীন শান্তি ও মঙ্গল কামনায় বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে।
বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে নগরীর নন্দন কাননে অবস্থিত চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহারে সকাল থেকে নানা আয়োজনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। বিকেল ৩টায় শুরু হবে শান্তি শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রাটি ৩টায় বিহার প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় বৌদ্ধ বিহারে এসে শেষ হবে।
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উপদেষ্টার শুভেচ্ছা : বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে দেশের সকল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। উৎসবের প্রাক্কালে গতকাল শনিবার এক বাণীতে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। হাজার বছর ধরে এদেশে জাতি–ধর্ম–বর্ণ নির্বিশেষে সকল ধর্মের মানুষ একসাথে মিলেমিশে বসবাস করে আসছে। ধর্ম–বর্ণ নির্বিশেষে এদেশ সকল মানুষের নিরাপদ আবাসভূমি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, মহামতি গৌতম বুদ্ধ হিংসা–বিদ্বেষ ও লোভ–লালসার ঊর্ধ্বে উঠে মানবজাতিকে আলোকিত করেছেন। মানুষের মধ্যে শান্তি ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠায় গৌতম বুদ্ধ অহিংসার বাণী প্রচার করেছেন। তিনি বলেন, গত ৫ আগস্ট ছাত্র–শ্রমিক–জনতার অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জাতি–ধর্ম–বর্ণ–গোষ্ঠী নির্বিশেষে সকলের ভাগ্য উন্নয়ন এবং সমান অধিকার সুনিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। বুদ্ধের আদর্শের অনুসরণ হিংসা, বিদ্বেষ ও হানাহানিমুক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়তে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীগণ অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের সাথে মিলেমিশে বহু বছর ধরে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অগ্রগতিতে সমানভাবে অংশগ্রহণ করে আসছেন। গৌতম বুদ্ধের আদর্শ লালন করে দেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায় বাংলাদেশকে একটি বৈষম্যহীন রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে কার্যকর ভূমিকা রাখবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। প্রধান উপদেষ্টা বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষ্যে গৃহীত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।
হাটহাজারীতে ব্যাপক প্রস্ততি : প্রতিনিধি জানান, সারা দেশের মতো হাটহাজারীতেও বৌদ্ধ ধর্মের প্রবক্তা গৌতম বুদ্ধের ত্রি–স্মৃতি বিজড়িত শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা উদযাপনে ব্যাপক প্রস্ততি গ্রহণ করা হয়েছে। এই দিনের একই তিথিতে রাজপুত্র সিদ্ধার্থ গৌতম জন্ম গ্রহণ, বোধিজ্ঞান লাভ এবং মহাপরিনির্বান লাভ করেন। বৌদ্ধদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব এই বুদ্ধ পূর্ণিমাকে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক বেসাব ডে ঘোষণা করেন।
আজ পবিত্র বৌদ্ধ পূর্ণিমার দিন ২৫৬৮ বুদ্ধবর্ষকে বিদায় ও ২৫৬৯ বুদ্ধবর্ষকে আনুষ্ঠানিকভাবে বরণ করবে সারা বিশ্বের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা। এ উপলক্ষে উপজেলার আওতাধীন ১৪টি বৌদ্ধ বিহারে দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
গৃহীত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে– ভোরে পবিত্র ত্রিপিটকের মঙ্গল বাণী পাঠের মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক সূচনা, এরপর ভিক্ষু–সংঘের প্রাতঃরাশ, জাতীয় ও ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন, বুদ্ধপূজা, অষ্টশীল ও পঞ্চশীল গ্রহণ, ভিক্ষু–সংঘের মধ্যহ্ন ভোজ, শীল গ্রহণকারীদের ভোজন, বুদ্ধ পূর্ণিমার তাৎপর্য শীর্ষক ধর্মীয় আলোচনা সভা, আলোক সজ্জা, বুদ্ধ কীর্তন, সন্ধ্যাকালীন প্রদীপ পূজা, পূজা উৎসর্গ, সমাজ, দেশ, জাতির কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনায় সমবেত প্রার্থনা।
উপজেলার আওতাধীন বৌদ্ধ বিহারগুলো যথাক্রমে, মধ্যম মাদার্শা সার্বজনীন শান্তি নিকেতন বৌদ্ধ বিহার, পশ্চিম ধলই উদালিয়া শান্তি নিকেতন বৌদ্ধ বিহার, মির্জাপুর শান্তিধাম বিহার, মির্জাপুর গৌতমাশ্রম বিহার, বালুখালী জগৎজোতি বৌদ্ধ বিহার, গুমানমর্দ্দন শান্তি বিহার, গুমানমর্দ্দন সার্বজনীন নালন্দা বৌদ্ধ বিহার, গুমানমর্দ্দন আরিয় ওয়াংচা আন্তর্জাতিক বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্র, রুদ্রপুর ধর্মরত্ন বিহার, মীরেরখীল চন্দ্রপুর বেনুবন বিহার, জোবরা গৌবিন্দ ঠাকুর স্মৃতি মন্দির, গুমানমর্দ্দন ধর্মচক্র বিহার, জোবরা সুগত বিহার, চট্টগ্রাম বিশ্ব বিদ্যালয় সংলগ্ন বিশ্ব শান্তি প্যাগোডা মন্দিরে এ দিন ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রত্যেক বিহারে বুদ্ধ পূর্ণিমার তাৎপর্য শীর্ষক আলোচনা সভায় স্ব স্ব বিহারের অধ্যক্ষগণ সভাপতিত্ব করবেন বলে জানা গেছে।