সেনাবাহিনী, শিল্প পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযান চালানোর সিদ্ধান্তে আজ বৃহস্পতিবার থেকে সব পোশাক কারখানা খোলা রাখার কথা জানিয়েছে তৈরি পোশাক শিল্প মালিক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমএইএ।
চলমান শ্রমিক আন্দোলন ও সরকারের সিদ্ধান্তের নিয়ে গতকাল বুধবার বিকালে রাজধানীর উত্তরায় সমিতির ভবনে বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংগঠনটির বর্তমান ও সাবেক সভাপতি, কারখানা মালিক, সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি, শিল্প পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিসহ অংশীজনরা সভায় কথা বলেন। খবর বিডিনিউজের।
এর আগে দুপুরে সেনাবাহিনী, শিল্প পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও পোশাক খাতের ছয় প্রতিনিধি বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে। সেই বৈঠকে গতকাল বুধবার রাত থেকেই পোশাক কারখানা অধ্যুষিত এলাকায় যৌথ অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত হয়।
বিজিএমইএর সভা শেষে সংগঠনের সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। তাদের কথায় আশ্বস্ত হয়েছি আমরা। আজ বৃহস্পতিবার সব পোশাক কারখানা খোলা থাকবে। বিশৃঙ্খলা হবে না, এমন আশ্বাস পাওয়ার পর আমরা কারখানা খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও শিল্প পুলিশ নিজেদের মত করে পরিকল্পনা করছে। আমরা তাদের সহযোগিতা করব।
সংগঠনের সহসভাপতি আবদুল্লাহ হিল রাকিব বলেন, আমরা তাদের (যৌথ অভিযান) তথ্য, ক্যামেরা ফুটেজ ও অন্যান্য সহযোগিতা দেব।
কারখানায় যারা হামলা করছে তারা বহিরাগত জানিয়ে তিনি বলেন, ৫০–৬০ জনের গ্রুপ হামলা করছে, কারখানার ভলান্টিয়াররা প্রতিরোধ করছে, কিন্তু তারা টিকতে পারছে না।
শ্রমিক অসন্তোষে তৈরি পোশাক খাতে টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যে গতকাল বুধবার বিকালে উত্তরায় বিজিএমইএ ভবনে বৈঠক শেষে সংগঠনের নেতারা গণমাধ্যমের সামনে আসেন।
সাভার ও গাজীপুরে একের পর এক সচিবালয়ে পাঁচ উপদেষ্টার বৈঠক শেষে এলজিআরডি উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ কঠোর হওয়ার বার্তা দেন। তিনি বলেন, কারখানা, শ্রমিক ও দেশের অর্থনীতি বাঁচাতে গেলে কিছু সংখ্যকের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে– এ প্রশ্নে তিনি বলেন, তারা গ্রেপ্তার কিংবা আটক হতে পারেন।
শ্রমিক আন্দোলনে ‘ভাড়াটে টোকাই‘: উপদেষ্টাদের ‘বল প্রয়োগের‘ বার্তা
৫০ জন রাস্তায় বসে পড়লে পাঁচ লাখ মানুষের অসুবিধা হবে। কাজেই তাদের সরাতে যদি বলপ্রয়োগ করতে হয়, লাঠিপেটা করতে হয়, জলকামান ব্যবহার করতে হলে আমরা সেটা করব।
গত এক সপ্তাহ ধরে তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন কারখানা শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ চলছে। গতকাল বুধবারও সাভার–গাজীপুরে ১৬৭টির মত কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। আগের দিন বন্ধ ঘোষণা করা হয় ৬০টির বেশি।
শ্রমিকরা কেন বিক্ষোভ করছে এই বিষয়টি বুঝতে না পারার কথা জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
এই প্রশ্নে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, যে শ্রমিকরা দাবি জানাচ্ছে, তারা প্রকৃত শ্রমিক না। আমরা শ্রমিক সংগঠনগুলোর সঙ্গেও কথা বলেছি। চাকরি থেকে ছাঁটাই হওয়া, বিভিন্ন অনিয়মে বাদ পড়া ও টোকাইরা এ হামলা করছে।
শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ে দুপুরে সচিবালয়ে বৈঠক শেষে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বল প্রয়োগের বার্তা দেন এলজিআরডি উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ।
শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ে দুপুরে সচিবালয়ে বৈঠক শেষে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বল প্রয়োগের বার্তা দেন এলজিআরডি উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কী করছে এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ছাত্র–জনতার আন্দোলনের পর শিল্প পুলিশ এখনও ট্রমাটাইজড হয়ে আছে। তাদের নৈতিক মনোবল নেই। তারপরও কিছু কাজ করছে। এখন তাদের উপর ভরসা করা ছাড়াও আমাদের উপায় নেই।
বৈঠকে শ্রমিক সংগঠনগুলোকে আন্দোলন বন্ধ করার ঘোষণা দেওয়ার অনুরোধ করা হয়। বিজিএমইএ প্রধান বলেন, বুধবার রাতে বা বৃহস্পতিবার সকালেই সে ঘোষণাটি আসবে।
ছাত্র–জনতার গণআন্দোলনে দীর্ঘ সময়ে ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয় গত ৫ অগাস্ট। আওয়ামী লীগ সভাপতি দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন।
এরপরই সব খাতে অস্থিরতা দেখা দেয়। আওয়ামী লীগ দলের সমর্থকদের নিয়ন্ত্রণে থাকা পোশাক খাতের ঝুট ব্যবসা, মালামাল পরিবহন নিয়ন্ত্রণ নেওয়া শুরু করে বিএনপির কর্মীরা। এমন প্রেক্ষাপটে বেশ কিছু কারখানায় শ্রম অসন্তোষ দেখা দেয়।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, আমরা সব রাজনৈতিক দলের কাছে সহযোগিতা চাই। তাদের কাছে অনুরোধ করে বলব, তৈরি পোশাক শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হলে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বিজিএমইএর সভায় সংগঠনের সাবেক সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ, রুবানা হক, এ কে আজাদসহ উদ্যোক্তারা অংশ নেন।