চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনকে ঘিরে আচরণবিধি লঙ্ঘনের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও ইসলামী ছাত্রশিবির। গতকাল বুধবার উভয় সংগঠন একে অপরের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন।
ছাত্রদলের অভিযোগ : বেলা ২টার দিকে নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয় ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল। তারা অভিযোগ করেন, ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত সহসভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী মো. ইব্রাহীম হোসেন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হৃদয় চন্দ্র তরুয়া ভবনের (নতুন কলা ভবন) ইতিহাস বিভাগের ৩২৩ নম্বর কক্ষে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করে সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করে প্রায় ২০ মিনিট ধরে নির্বাচনী প্রচারণা চালান।
ছাত্রদল নেতাদের দাবি, এ প্রচারণা চলাকালীন শ্রেণিকক্ষে পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হয়, যা চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনী আচরণবিধিমালার ৪–এর ‘ঙ’ ধারা অনুযায়ী সরাসরি লঙ্ঘন। উক্ত ধারায় বলা আছে, যেখানে ক্লাস বা পরীক্ষা হয় সেখানে কিংবা আশপাশে সভা–সমাবেশ করা যাবে না। শিক্ষা কার্যক্রমে কোনো প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় এমন কোনো কাজে সাউন্ড সিস্টেম বা মাইক ব্যবহার করা যাবে না।
অভিযোগ জানানোর সময় উপস্থিত ছিলেন শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিন, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান; চাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী সাজ্জাদ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী শাফায়েত হোসেন, দপ্তর সম্পাদক প্রার্থী তৌহিদুল ইসলামসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা। শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, ছাত্রশিবির প্যানেলের ভিপি প্রার্থীর আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি আমরা লিখিতভাবে নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছি। আমরা নির্বাচন কমিশনকে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাই।
অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে নির্বাচন কমিশনের প্রধান অধ্যাপক মনির উদ্দিন বলেন, আচরণবিধি দেখাশোনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পৃথক কমিটি রয়েছে। তাদের কাছে লিখিত অভিযোগটি হস্তান্তর করা হবে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে ইসলামী ছাত্রশিবিরের শাখা সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, ইব্রাহীম প্রচারণা চালাতে ইতিহাস বিভাগে যাননি। নিজ বিভাগ হওয়ায় জুনিয়রদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। তিনি আরও বলেন, আমাদের কাছেও অভিযোগ রয়েছে একটি প্যানেলের প্রার্থীরা শ্রেণিকক্ষের দরজা বন্ধ করে প্রচারণা চালিয়েছেন। আমরা এ বিষয়ে অভিযোগ জানাব।
ভিপি প্রার্থী মো. ইব্রাহীম হোসেন বলেন, কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে সেটি নির্বাচন কমিশনে যে কেউ জানাতে পারে। আমার কাছে নির্বাচন কমিশন কোনো ব্যাখ্যা চাইলে আমি জবাব দেব।
শিবিরের পাল্টা অভিযোগ : অন্যদিকে বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ছাত্রদলের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ জমা দেয় ইসলামী ছাত্রশিবির। অভিযোগপত্রে বলা হয়, আনুমানিক দুপুর ১২টা ৩০ মিনিট থেকে ১টার মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের এল.এল.এম ক্লাসরুমে ২৪–২৫ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষের ক্লাস চলাকালীন সময়ে আইন বিভাগের ২০১৯–২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নাঈম উদ্দিন (ছাত্রদলের কর্মী) ক্লাসে প্রবেশ করে নির্বাচনী প্রচারণা চালান। তিনি চলমান পাঠদানের সময় চাকসু নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারমূলক বক্তব্য দেন, লিফলেট বিতরণ করেন এবং অন্যান্য প্যানেলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক ও উত্তেজনাকর মন্তব্য করেন।
অভিযোগে বলা হয়, এই কর্মকাণ্ড চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন আচরণবিধি ২০২৫–এর ধারা ৪(ঙ)-এর সরাসরি লঙ্ঘন। উক্ত ধারায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে– কোনো প্রার্থী বা সমর্থক শ্রেণিকক্ষে, পরীক্ষার হলে, বা পাঠদান চলাকালীন সময়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারবে না।
শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মোহাম্মদ পারভেজ বলেন, আমরা ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছি। আশাকরি নির্বাচন কমিশন যথাযথ ব্যবস্থা নিবে।
এ বিষয়ে চাকসু নির্বাচন কমিশনের প্রধান অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন বলেন, আমরা অভিযোগপত্রটি আমাদের আচরণবিধি কমিটির কাছে পাঠিয়ে দেব। এরপর আমরা এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেব।
এদিকে দুর্গাপূজার ছুটি শেষে খুলেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে চাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের প্রচারণা এখন পুরোদমে চলছে।