আগে ছিল বাগান, এখন জব্দ মালামালের ভাগাড়

নগর ভবন নির্মাণে সংরক্ষিত খালি জায়গা

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১ নভেম্বর, ২০২১ at ৫:৩৬ পূর্বাহ্ণ

নগরকে পরিচ্ছন্ন, সবুজ ও নান্দনিক করার লক্ষ্যে কাজ করছেন বলে প্রায় দাবি করেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র এবং প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। এর অংশ হিসেবে শহরের উন্মুক্ত স্থানকে ঘিরে সৌন্দর্যবর্ধনে রাজধানীর একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জরিপও চালানো হচ্ছে। অথচ আন্দরকিল্লা নগর ভবনের পাশে নতুন ভবন নির্র্মাণে সংরক্ষিত খালি জায়গা প্রায় সময় অপরিচ্ছন্ন করে রাখছে সংস্থাটি! বিভিন্ন সময়ে উচ্ছেদ অভিযানে জব্দকৃত মালামাল এনে ফেলে রাখা হয় সেখানে। রাখা হয় বর্জ্য সংগ্রহের অপরিচ্ছন্ন ভ্যান। সবসময় সেখানে পার্কিং করে রাখা হয় চসিকের বিভিন্ন যানবাহন। বিষয়টিকে ‘দৃষ্টিকটু’ বলে মন্তব্য করছেন নগরবাসী।
স্থানীয় লোকজন, পথচারী ও নগর পরিকল্পনাবিদগণের সঙ্গে আলাপকালে তাঁরা বলছেন, ছয়-সাত মাস আগেও এ খালি জায়গায় ছিল ফুলের বাগান। যা নজর কাড়ত পথচারীর। এ সৌন্দর্যে মুগ্ধ নগরবাসী প্রশংসা করতেন চসিকের। কিন্তু ধীরে ধীরে অযত্নে অবহেলায় নষ্ট হয়েছে সে বাগান। তার বদলে সেখানে স্থান করে নিয়েছে ময়লা-আবর্জনা। নগরবাসী বলছেন, যতদিন নতুন ভবন নির্মাণ না হয় ততদিন জায়গাটিতে ফুলের বাগান ও সবুজায়ন করে দৃষ্টিনন্দন করা হোক।
এ প্রসঙ্গে চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, নগর ভবন নির্মাণে আমাদের প্রকল্প রয়েছে। বর্তমানে প্রকল্পটির ভেটিং কাজ চলছে। নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসের মধ্যে বেশ অগ্রগতি হবে। আমাদের জায়গা কম। তাই আপাতত আমাদের কিছু গাড়ি সেখানে রাখা হচ্ছে। অপরিচ্ছন্ন রাখা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মেয়র বলেন, আমি কালই (আজ) বলে দিব। যেন পরিষ্কার করা হয়।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে উন্মুক্ত জায়গায় নগর ভবন নির্মাণে ২০১০ সালের ১১ মার্চ ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই শুরু হয়েছিল এ নির্মাণ কাজ। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এ জে কনস্ট্রাকশন নগর ভবনের প্রথম ছয়তলা নির্মাণের কাজ পেয়েছিল তখন। ওই সময় চসিকের নিজস্ব তহবিল থেকে নগর ভবনের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪৮ কোটি ৮৫ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। ২০১০ সালের ১৭ জুন অনুষ্ঠিত চসিক নির্বাচনে মহিউদ্দিন চৌধুরী পরাজিত হলে নগর ভবন নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে দুই মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলম (২০১০-২০১৫) এবং আ.জ.ম নাছির উদ্দীন (২০১৫-২০২০) উদ্যোগ নিলেও প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়নি। অবশ্য, বর্তমানে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে উক্ত প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি চলছে।
এদিকে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে নগর ভবনের ফাইলিং হওয়ার স্থানে পার্কিং করার উদ্যোগ নেয় চসিক। যা একই বছরের ফেব্রুয়ারিতে চালু হয়। তখন নগর ভবনে আসা দর্শনার্থী এবং অফিস চলাকালীন সময়ে কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গাড়ি পার্কিং করা হতো। তখনও বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা করেন নগরবাসী। তখন সেখানে চসিকের প্রকৌশল বিভাগের উদ্যোগে ফুলের বাগান করা হয়। ২০১৯ সালের ২৩ জুন আন্দরকিল্লা থেকে টাইগারপাস স্থানান্তর করা হয় চসিকের প্রধান দপ্তর। বর্তমানে পুরাতন নগর ভবনের দ্বিতীয় তলায় চলছে চসিক আঞ্চলিক কার্যালয়-৬ এর কার্যক্রম।
চসিকের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, ২০১৯ সালে মুজিবর্ষ উপলক্ষে খালি জায়গাটিতে একটি ‘কাউন্ট ডাউন ক্লক’ বসানো হয়েছিল। তখন জায়গাটি পরিচ্ছন্ন করে রাখা হতো। বর্তমানে ‘কাউন্ট ডাউন ক্লক’টি থাকলেও আছে অযত্নে অবহেলায়। মাঝেমধ্যে ধুলোর আস্তর পড়ে সেখানে। মাঝখানে খালি জায়গার একপাশে সবজি চাষও হয়েছিল। বেশ কিছুদিন ধরে সেখানে চসিকের দামপাড়া ইয়ার্ডের গাড়ি এনে রাখা হচ্ছে।
শহীদ নামে এক পথচারী গতকাল দৈনিক আজাদীকে বলেন, আন্দরকিল্লা শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোর একটি। হাজার হাজার মানুষ এ পথ দিয়ে যায়। তারা যখন বর্তমান নগর ভবনের পাশে ময়লা দেখে তখন সিটি কর্পোরেশন সম্পর্কেই নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে। তাই ফুলের বাগান করে জায়গটির সৌন্দর্য বাড়ানো উচিত।
ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউিশন বাংলাদেশের (আইইবি) চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক চেয়ারম্যান দেলোয়ার মজুমদার দৈনিক আজাদীকে বলেন, অগোছালো ও অপরিচ্ছন্ন থাকলে বা ময়লার ভাগাড়ের মত যদি জায়গাটি ব্যবহার করা হয় তা হবে শহরের মানুষদের রুচিবোধের সাথে সাংঘর্ষিক। স্থপতি আশিক ইমরান সেখানে ফুলের বাগান করার পরামর্শ দিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে খালি জায়গা কী ভাবে সুন্দর করা যায় তা নগরবাসী শিখবেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১০০ টাকার প্রাইজবন্ডের ড্র
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামের পাঁচ পাট কল ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া