আগের রাতেই অর্ডার করা ১৪ লাখ টাকার নতুন মালামাল তুলেছিলেন গুদামে। ঈদকে সামনে রেখে এজন্য বড় অঙ্কের ঋণও নিয়েছিলেন ব্যাংক থেকে। এক সকালের আগুনেই সব এলোমেলো হয়ে গেছে মাঈনুদ্দিন আহমেদের। গতকাল সকালের ভয়াবহ আগুনে বঙ্গবাজারের এ ব্যবসায়ীর পুঁজির বড় অংশই গেছে; সঙ্গে ব্যাংক ও স্থানীয় সমিতি থেকে নেওয়া ২৫ লাখ টাকার মালামালও পুড়েছে। ঋণের এ বাড়তি বোঝা আরও চাপ তৈরি করেছে মহা এই বিপদের কালে, ভারাক্রান্ত করে তুলেছে মাঝবয়সী মাঈনুদ্দিনকে।
দুই দশক ধরে বঙ্গবাজারে জিন্সের প্যান্ট, ট্রাউজার ও টি শার্টের পাইকারি এই ব্যবসায়ী বলেন, সকালে ম্যানেজার ফোন দিয়ে জানাল আগুন লেগেছে মার্কেটে। আমি আসতে আসতে বঙ্গবাজারের কাঠের মার্কেট পুড়ে শেষ। এসএমই ঋণের আওতায় ব্র্যাক ব্যাংক থেকে সবশেষ ১২ লাখ টাকা নিয়ে সোমবার রাতেই মালামাল তুলেছিলেন মাঈনুদ্দিন। গুদামে থাকা পণ্য পুড়ে এখন অর্থ পরিশোধের নতুন দুশ্চিন্তা চেপেছে তার মাথায়। খবর বিডিনিউজের।
তিনটি দোকান ও গুদামের সঙ্গে রাজধানীর শনির আখাড়ায় কারখানা থাকার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, গোডাউনের সব মাল পুইড়া শ্যাষ। সমিতি থেকেও টাকা নিছি। সমিতি আর ব্যাংক মিইল্যা ২৫ লাখ টাকা হইব।
বঙ্গবাজারে থাকা সব পণ্য পুড়লেও মহানগর শপিং কমপ্লেঙ ও এনেঙকোতে থাকা দুই দোকান থেকে কিছু মালামাল বের করার পর তা বস্তায় করে আরেক গুদামে পাঠানোর সময় মাঈনুদ্দিন বলেন, সবকিছু মিলিয়ে ৩০ শতাংশ মাল বের করতে পারছি। এখন তা আরেক গোডাউনে পাঠিয়ে দিচ্ছি।
তার মতো ব্যাংক ও স্থানীয় সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে ঈদের আগে পণ্য তুলেছিলেন আরো অনেকে। পণ্য যাওয়ার পর এখন ঋণ পরিশোধের নতুন চিন্তার ভাঁজ তাদের কপালে।
বঙ্গবাজারের আদর্শ মার্কেটে দুই সাটারের একটি দোকান ছিল নজরুল ইসলামের। সব হারিয়ে দোকানের কর্মচারীদের নিয়ে এনেঙকো ভবনের সিঁড়ির পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে তিনি বলেন, এক টাকার মালও বের করতে পারেনি। সব শ্যাষ হইয়া গেছে। আসার পর শুধু আগুন দেখলাম। এরপর আর কথা এগোতে পারলেন না। চোখের পানি গাল বেয়ে গড়াতে শুরু করে। কান্না লুকাতে দ্রুত সরে যান সেখান থেকে। কর্মচারীরাও নীরব হয়ে পড়েন।
দুই কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ঈদ উপলক্ষে দোকানে মালামাল তুলেছিলেন মিজানুর রহমান। আগুনে তার সব গেছে। ঈদের আগ মুহূর্তে দোকানের মালামাল খুইয়ে চিন্তাগ্রস্ত আরেক ব্যবসায়ী আম্মার হোসেন বিলাপ করছিলেন।